সিইসির প্রস্তাব যৌক্তিক, আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন -নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পদ্ধতি

প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন, কিন্তু এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীনতার বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের ওপর। তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাইলেই বলা যায়, প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত অর্থে স্বাধীন। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নির্বাচন কমিশনারদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশনাররা কীভাবে নিয়োগ পেতে পারেন, সে ব্যাপারে একটি প্রস্তাব দিয়েছেন বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সামগ্রিক বিচারে তাঁর এই প্রস্তাবকে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। তখন যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। একটি নিরপেক্ষ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিয়ে তাঁরা প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীনতাকে উঁচুতে তুলে ধরতে পেরেছেন। প্রতিষ্ঠানটি তার এই ধারা অব্যাহত রাখুক—এটাই প্রত্যাশিত। বর্তমান রাজনৈতিক সরকারের আমলেই নির্বাচন কমিশনের কমিশনারদের মেয়াদ শেষ হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে যাতে অহেতুক কোনো বিতর্ক ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে, সে জন্য কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি কার্যকর ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি বেছে নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে প্রস্তাব রেখেছেন, তাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি সংসদীয় কার্য-উপদেষ্টা কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। স্পিকারের নেতৃত্বে এই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর নেতারা থাকবেন। এই কমিটি থেকে নির্বাচন কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করা হবে। আমরা মনে করি, সরকারি ও বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণে এ ধরনের একটি কমিটির মাধ্যমে নাম প্রস্তাব করা হলে কমিশনারদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার আশঙ্কা অনেক কমে যাবে। সব পক্ষের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যাঁরা কমিশন গঠন করবেন, তাঁদের পক্ষে সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে নির্বাচন পরিচালনা ও প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
সরকারি দল ও বিরোধী পক্ষের মিলেমিশে একমত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সংস্কৃতি আমাদের রাজনীতিতে বিরল। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে দুই পক্ষের সম্মিলিত অংশগ্রহণ থাকলে এবং আলোচনার মাধ্যমে একমত হওয়া গেলে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তা গুণগত পরিবর্তনের সূচনা ঘটাতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজেরাই একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারে, তবে এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বাইরের কোনো শক্তির হস্তক্ষেপের আশঙ্কা অনেক কমে যাবে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো প্রকৃত অর্থেই তা চায় কি না, সেটা তাদের প্রমাণ করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলের মধ্যে আলাপ-আলোচনা জরুরি। সবচেয়ে বড় কথা, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ ব্যাপারে মতৈক্য হতে হবে। একটি শক্তিশালী ও প্রকৃত অর্থে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অবস্থান ধরে রাখতে এ ধরনের উদ্যোগের বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.