এখন জিম্বাবুয়ে জয়ের অপেক্ষা

ক্যামিও ইনিংস খেলার পথে নাঈম ইসলামের ড্রাইভ।
টি-টোয়েন্টির ট্রফি হাতে সিরিজে প্রথম হাসির উপলক্ষ
পেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ফ্লয়েড রেইফার
মিড উইকেট দিয়ে মেহরাব জুনিয়রকে সপাটে মারলেন ট্রাভিস ডাওলিন। চার! সঙ্গে সঙ্গে ডাগ আউটে সতীর্থদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন ফ্লয়েড রেইফার। ড্যারেন স্যামির সঙ্গে বুকে বুক ঠেকিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কায়দায় উদযাপনও চলল খানিকক্ষণ। হঠাৎ দেখলে মনে হবে, যেন বিশ্বজয় করে ফেলেছে এই দলটা!
না, বিশ্বজয় নয়। এই উল্লাসের উপলক্ষ নেহাতই টি-টোয়েন্টির ‘ফান ক্রিকেট’। ক্রিকেটীয় বিশ্লেষণের বিচারে যে ম্যাচের খুব একটা দাম নেই। তার পরও রেইফারদের এই উল্লাস একের পর এক পরাজয়ে ক্লিষ্ট একটা দলের পাষাণ ভার নেমে যাওয়ার। পুরো সফরে যে এই প্রথম একটা জয় পেল গেইলদের বিদ্রোহের বদৌলতে আকস্মিক অধিনায়কত্বের সুযোগ পেয়ে যাওয়া রেইফারের দল! এর আগে অধিনায়ক রেইফারের কাছে ‘জয়’ বলতে ছিল কেবল তিনটি ওয়ানডের টস জেতার অভিজ্ঞতা।
টেস্ট-ওয়ানডে দুটো সিরিজেই ধবল-ধোলাই হওয়া দলটাকে মানসিকভাবে চাঙা রাখাটাই প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল রেইফারের সামনে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক স্বীকার করলেন, ‘টেস্ট-ওয়ানডে দুটো সিরিজেই হেরে যাওয়ার পর এই ম্যাচটা অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছিল আমাদের জন্য। তার পরও আমি সতীর্থদের সামনের দিকে তাকাতে বলেছিলাম, ভাবতে বলেছিলাম বড় ছবিটার কথা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলার সময় আমরা ধীরে ধীরে উন্নতি করেছি, কঠোর পরিশ্রম করেছি। এটা মাত্রই একটা জয়। এই জয়ের ধারা আমাদের ধরে রাখতে হবে।’
মুখে বলছেন বটে, কিন্তু ‘জয়ের ধারা’ ধরে রাখার দায়িত্ব এই দলের ওপরই থাকবে—এমন নিশ্চয়তা রেইফার দিতে পারবেন না। এমনও হতে পারে, এই দলের এটাই শেষ ম্যাচ। গেইল-চন্দরপলরা ফিরলে এই একাদশের সিংহভাগই হয়ে যাবে ব্রাত্য। তার পরও ইতিবাচক দৃষ্টিতেই তাকাচ্ছেন রেইফার, ‘জয় দিয়ে শেষ করতে পারাটা দারুণ কিছু।’
জয় দিয়ে শেষ করতে পারলে বাংলাদেশের জন্যও ভালো হতো। শুধু ৫ উইকেটের পরাজয় নয়, এই ম্যাচে লজ্জার একটা রেকর্ডও সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশের। চার ব্যাটসম্যান রান আউটের শিকার। টি-টোয়েন্টির এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ব্যাটসম্যানের রান আউট হওয়ার রেকর্ডটায় এখন থাকছে বাংলাদেশও। আর আগে তিন ‘ল্যান্ড’—নিউজিল্যান্ড, স্কটল্যান্ড আর আয়ারল্যান্ডের ছিল এই রেকর্ড।
শুধু ব্যাটে-বলে নয়, ফিল্ডিংয়েও দুর্দান্ত ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রেইফার জানালেন, এই একটা জায়গায় আলাদা করে চোখ ছিল তাঁদের, ‘আমরা ফিল্ডিং দিয়ে ওদের চাপের মুখে ফেলে দিয়েছিলাম। টিম মিটিংয়ে আমরা বলেছিলাম আমাদের ফিল্ডিং হতে হবে দুর্দান্ত। কারণ টি-টোয়েন্টি খুবই দ্রুতগতির একটা খেলা।’
রেইফারের মতোই অধিনায়ক হিসেবে এই সিরিজেই অভিষেক সাকিব আল হাসানের। এবং এই প্রথম অধিনায়ক হিসেবে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেলেন এই অলরাউন্ডার। ব্যর্থতার জন্য ব্যাটসম্যানদেরই দুষছেন তিনি, ‘আমরা মোটেও ভালো ব্যাট করিনি। বিশেষ করে আমিসহ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। ভালো ক্রিকেট বলতে যা বোঝায় সেটি আমরা খেলতে পারিনি। এটাই আমাদের পতনের কারণ। জানি না কেন এ রকম খেললাম। আমরা আমাদের পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারিনি। এক ইনিংসে চারটা রান আউট হলে টি-টোয়েন্টিতে রান তোলা কঠিন।’
তবে এই একটা পরাজয়ে যে মাত্রই ফেলে আসা কীর্তি মলিন হচ্ছে না, সেটিও জানিয়ে রাখলেন সাকিব, ‘গত একটা মাস আমরা দুর্দান্ত খেলেছি। একটা ম্যাচের ফল সেটিকে খারাপ বানিয়ে দিতে পারে না।’ কিন্তু জয়ের ধারায় তো ছেদ পড়ল। সাকিব অবশ্য আশাবাদী, এর প্রভাব আগামী সফরে পড়বে না, ‘এরপর আমরা জিম্বাবুয়ে যাচ্ছি। আমাদের জন্য সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ। আমরা সেখানে জেতার জন্যই যাচ্ছি।’

No comments

Powered by Blogger.