অশান্ত বন্দর প্রশান্ত মেয়র -নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার দৃষ্টান্ত

ঘন ঘন কর্মবিরতি, মানববন্ধন, ধর্মঘট বা এর হুমকি এবং বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নামে দাবিদাওয়া আদায়ে নানা তৎপরতায় চট্টগ্রাম বন্দরের পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠছে। গত এক মাসে তুচ্ছ ঘটনায় ছয় দফায় অন্তত তিন দিনের বেশি সময় বন্দরের কাজকর্ম ব্যাহত হয়। দেশের প্রধান যে সমুদ্রবন্দর দিয়ে ৯০ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে, সেখানে এ রকম বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা কেন ও কীভাবে চলছে, তা নিয়ে সংগতভাবেই প্রশ্ন তোলা যায়।
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, তাঁরা ‘চট্টগ্রামের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর নির্দেশে’ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চট্টগ্রাম ডক-বন্দর শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের আহ্বায়কের এ বক্তব্য সম্পর্কে মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্পষ্ট বক্তব্য থাকা উচিৎ। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে আন্দোলনের ‘নির্দেশ’ দিয়েছেন কি না? এমন কোনো আন্দোলন, যা বন্দরের কাজকর্ম স্থবির করে দিতে পারে, সে রকম নির্দেশনা তাঁর আছে কি না? সোজা বাংলায় জনগণকে জানতে দেওয়া উচিৎ, তাঁর উত্তরটি ‘হ্যাঁ’ কি ‘না’। যদি তিনি না বলে থাকেন, তাহলে তাঁর নাম ভাঙিয়ে যে অপতৎপরতা চলছে, সেটা বন্ধ করতে কার্যকর উদ্যোগ তাঁকেই নিতে হবে। আর যদি তিনি সত্যি অমন কথা বলে থাকেন, তাহলে সরকারকে ভেবে দেখতে হবে, এভাবে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারতে তারা রাজি আছে কি না। কারণ, আলোচ্য শ্রমিক সংগঠনটি ও মেয়র উভয়েই সরকারদলীয়।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বন্দরের ৩২টি সংগঠনের স্থলে মাত্র দুটি কার্যকর রাখা হয়। এতে বন্দরের কাজ সুষ্ঠুভাবে চলতে থাকে। বন্দরের জাহাজ অবস্থানের গড় সময় (টার্ন রাউন্ড টাইম) ১৩-১৪ দিন থেকে মাত্র দু-আড়াই দিনে নেমে আসে। দেশ-বিদেশে বন্দরের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। কিন্তু নির্বাচিত সরকার আসার পর থেকেই আবার বিভিন্ন নামে পুরোনো সংগঠনগুলো তৎপরতা শুরু করে। তারা ১৫ হাজার ডক-শ্রমিকের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করছে। অন্যদিকে শ্রমিক নিয়োগকারী সংস্থা বার্থ অপারেটরদের প্রতিনিধি বলছেন, যে শ্রমিকেরা তাদের সব ধরনের দেনা-পাওনা বুঝে নিয়ে স্বেচ্ছায় চলে গেছে, তাদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি অযৌক্তিক। সুতরাং এ ধরনের দাবির যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠার উপযুক্ত উপায় হলো পারস্পরিক সমঝোতার পরিবেশে আলোচনা এবং আলোচনা। এর বাইরে ধর্মঘটের উদ্যোগ শুধুই বন্দরের ক্ষতি করবে; কাজের কাজ কিছুই হবে না।
বিশ্বের কোনো দেশেই সমুদ্রবন্দর মুহূর্তের জন্য বন্ধ থাকে না বা বন্ধ রাখতে দেওয়া হয় না। চট্টগ্রাম বন্দরে বাধা সৃষ্টি হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রাণপ্রবাহ বন্ধের আশঙ্কা থাকে। কোনোক্রমেই এ ধরনের আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না।
চট্টগ্রাম বন্দর অস্থিতিশীল হওয়ার পেছনে মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর সম্পৃক্তির অভিযোগ দুর্ভাগ্যজনক। বন্দরের কার্যক্রম গতিশীল ও নির্বিঘ্ন রাখা মেয়র মহোদয়ের দায়িত্বের মধ্যেই গণ্য হওয়া উচিৎ। অথচ বন্দরের শ্রমিক আন্দোলনের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে প্রথম আলোর সাংবাদিকের কাছে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। অশান্ত বন্দরের ব্যাপারে মেয়রের প্রশান্তি তথা উত্থাপিত অভিযোগের ব্যাপারে নির্লিপ্ততা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বন্দরসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যার সমাধান একমাত্র আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে; কোনো অজুহাতেই বন্দরের কাজ বন্ধ রাখা যাবে না। এ প্রশ্নে কোনো আপস চলে না।

No comments

Powered by Blogger.