কাশ্মীরিদের ছাড়াই কাশ্মীরে ভারতের স্বাধীনতা দিবস by শুভজ্যোতি ঘোষ

ভারত সরকার গত সপ্তাহে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার পর আজ ভারতের স্বাধীনতা দিবস বাকি দেশের সঙ্গে কাশ্মীরেও পালিত হয়েছে - তবে সাধারণ কাশ্মীরিদের কোনও যোগদান ছাড়াই।
কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রাজধানী শ্রীনগরের একটি সুরক্ষিত স্টেডিয়ামে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের রাজ্যপাল।
তবে সেখানে শুধু নিরাপত্তা বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা বা তাদের পরিবারের সদস্যদেরই দেখা গেছে।
কাশ্মীর থেকে বিবিসি সংবাদদাতারা আরও জানাচ্ছেন, শ্রীনগর শহরের কেন্দ্রস্থলে কিছু বিজেপি সমর্থক ভারতের পতাকা উত্তোলনের চেষ্টা করলেও তাদের চেষ্টা সফল হয়নি।
শ্রীনগরে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে জম্মু ও কাশ্মীরের গভর্নর সত্যপাল মালিক
এদিকে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের পর শহরের কোনও কোনও জায়গায় কারফিউ কিছুটা শিথিল করা হয়েছে বলেও খবর আসছে।
ঠিক দশদিন আগে ভারত সরকার তাদের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ করার পর আজই ছিল সে দেশের প্রথম স্বাধীনতা দিবস।
শ্রীনগরে বরাবরই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে যেখানে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়, সেটা হল শহরের বকশি স্টেডিয়াম।
গ্যালারিতে ঘেরা একটি সুরক্ষিত স্টেডিয়াম এটি, আর সেখানেই এবারেও ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের বর্তমান গভর্নর সত্যপাল মালিক।
শ্রীনগর থেকে বিবিসি উর্দুর রিয়াজ মাসরুর জানাচ্ছেন, মাছি গলতে পারবে না এমন কঠোর নিরাপত্তা ছিল গোটা স্টেডিয়ামে।
তবে গ্যালারিতে কিন্তু আম কাশ্মীরিদের, বা শহরের সাধারণ লোকজনকে একেবারেই দেখা যায়নি।
শ্রীনগরের বকশি স্টেডিয়াম যাওয়ার পথে নিরাপত্তা চৌকি
সেখানে ছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা, জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের সিনিয়র অফিসার কিংবা তাদের স্ত্রী-ছেলেমেয়েরাই।
আর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে ভারতের এনএসএ বা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকেও, যিনি গত বেশ কয়েকদিন ধরে কাশ্মীর ভ্যালিতেই ঘাঁটি গেড়ে আছেন।
গভর্নর মালিক তার ভাষণে বলেছেন, ''কাশ্মীর এখন এক নতুন ভবিষ্যতের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাবে, উন্নয়ন হবে, বিনিয়োগ আসবে।"
এমন কী পুলিশকর্মীদের বেতনভাতা বাড়ানোর কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি।
কিন্তু যে আম কাশ্মীরিদের উদ্দেশে কথাগুলো বলা, সেটা শোনার জন্য আজ তারাই শুধু হাজির ছিলেন না।
এদিকে ভারতের শাসক দল বিজেপির কিছু সদস্য এদিন শ্রীনগরের কেন্দ্রস্থলে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলনেরও চেষ্টা করেছিলেন, তবে তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এদিন শ্রীনগরে অজিত ডোভাল (বাঁয়ে) ও সত্যপাল মালিক
আসলে শ্রীনগর শহরের প্রাণকেন্দ্রে যে লালচক - সেখানে ভারতের তেরঙা ঝান্ডা ওড়ানোর স্বপ্ন দেখেন বিজেপির বহু নেতা-কর্মীই।
কাশ্মীর যে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেটা প্রমাণ করার জন্য তাদের কাছে এই লালচকে জাতীয় পতাকা ওড়ানোর একটা প্রতীকী তাৎপর্যও আছে।
এবারে যেটা হয়েছে, হরিয়ানার - ওই রাজ্যে দুচারমাসের মধ্যেই ভোট - সেখান থেকে বিজেপির জনাবিশেক নেতা-কর্মী গতকালই শ্রীনগরে এসে হাজির হয়েছিলেন।
তাদের ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদী যখন দিল্লির লাল কেল্লা থেকে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ দেবেন - তখন তারাও শ্রীনগরের লালচক থেকে তেরঙা ঝান্ডা ওড়াবেন।
শ্রীনগরে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে বিএসএফের অংশগ্রহণ
কিন্তু কাশ্মীরের পুলিশ এদিন তাদের লালচকের ধারেকাছেই ঘেঁষতে দেয়নি।
বলা হয়েছে গোটা শহরে যেহেতু ১৪৪ ধারা জারি আছে, তাই লালচক বা অন্য কোনও জায়গায় কোনও জমায়েতই করা চলবে না এবং কারফিউ ভাঙার চেষ্টা করলে গ্রেপ্তারও হতে হবে।
কাজেই 'মিশন লালচক' পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ওই বিজেপি কর্মীদেরও এদিন বিকেলেই শ্রীনগর ছাড়তে হয়েছে।
এদিকে রাজ্যের হিন্দু-প্রধান জম্মু অঞ্চলে কিন্তু কারফিউ গতকাল থেকেই প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও মুসলিম-গরিষ্ঠ কাশ্মীরে তা এখনও পুরোদস্তুর বহাল আছে।
তবে বিবিসি উর্দুর রিয়াজ মাসরুর যেটা জানাচ্ছেন তা হল, সকালে স্বাধীনতা দিবসের সরকারি অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হওয়ার পর শ্রীনগরের কিছু কিছু এলাকায়, স্থানীয় পর্যায়ে এবং সাময়িকভাবে আজ কারফিউ শিথিল করা হয়েছিল।
কিছু কিছু দোকানপাটও খুলতে দেওয়া হয়েছে, মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দ্রুত কিনে নেওয়ার জন্য অল্প সময়ও দেওয়া হয়েছিল।
শ্রীনগরের লালচক। ১২ আগস্ট, ২০১৯
তবে আগামিকাল কী হবে, কারফিউ কঠোরভাবে বলবৎ হবে না কি মানুষ কিছুটা শিথিলতার সুযোগ পাবেন তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না।
যদিও গভর্নর মালিক এরই মধ্যে আভাস দিয়েছেন যে স্বাধীনতা দিবসের পর কাশ্মীরেও পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টা হবে।
এদিকে এদিন কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে তীব্র গোলাবর্ষণ হয়েছে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ভারতীয় সেনাবিাহিনী দাবি করছে, এলওসি-র কৃষ্ণা ঘাটি বা কেজি সেক্টরে পাকিস্তানি সেনা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গোলাগুলি চালাতে শুরু করে, যা থেমেছে ভারতীয় সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ।
বকশি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে কিছু দর্শকের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

No comments

Powered by Blogger.