ভারতের কাশ্মীর সিদ্ধান্ত চীনের সাথে সীমান্ত বিবাদকে জটিল করে তুলতে পারে by অঙ্কিত পান্ডা

ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)’র নেতৃত্বাধীন সরকার ৫ আগস্ট তাদের অনুসারী এবং সম-আদর্শধারীদের দীর্ঘদিনের একটি আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়িত করেছে।

ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে, এবং দিল্লী এই অঞ্চলের উপর নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং তার ডান হাত ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দলের বিশাল নির্বাচনী বিজয়কে ব্যবহার করে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।

সরকারের সিদ্ধান্ত দলীয় সমর্থক এবং কিছু বিরোধী দলের সমর্থন পেলেও এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে একটা অনিশ্চয়তার প্যান্ডোরা বাক্স খুলে গেছে।

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুরোটাকে নিজেদের দাবি করে থাকে পাকিস্তান এবং তারা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং ভারতের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করেছে।

ইসলামাবাদের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে এবং এটা উত্তেজনাপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সঙ্ঘাতকে আরও উসকে দেবে। এই নিয়ন্ত্রণ রেখা দিয়েই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীরের সীমানা নির্ধারিত হয়েছে।

কিন্তু অধিকাংশ আন্তর্জাতিক মনোযোগ যখন পাকিস্তানের দিকে যে তারা এর পর কি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, সেখানে কাশ্মীর নিয়ে চীনের ভূমিকাকে অনেকটা অবজ্ঞা করা হচ্ছে।

ভারত ও ভুটান এ অঞ্চলের দুটো দেশ যারা এখনও চীনের সাথে তাদের সীমানা বিবাদের মীমাংসা করেনি।

ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের যে আলোচনা, কাশ্মীরের বিষয়ে ভারতের সিদ্ধান্তে সেই আলোচনা বাধাগ্রস্ত হবে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিনের অর্ধেকটা সময় চুপ থাকার পর ভারতের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং এক বিবৃতিতে বলেছেন, “চীন সবসময় তাদের পশ্চিম সেক্টরের চীন-ভারত সীমান্তের চীনা অঞ্চলকে ভারতের প্রশাসনিক কর্তৃত্বের অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা করে এসেছে”।

তিনি আরও বলেন যে, “ভারত একতরফাভাবে অভ্যন্তরীণ আইন পরিবর্তন করে চীনের আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে অবজ্ঞা করা অব্যাহত রেখেছে”। এর মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে দিল্লীর ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

চীন এখনও কাশ্মীরের বৃহৎ অঞ্চল আকসাই চিন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে, যেটার অবস্থান ভারত নিয়ন্ত্রিত লাদাখের পূর্বে। ভারতের সিদ্ধান্তের পর এই অঞ্চলটি এখন সরাসরি দিল্লীর শাসনাধীনে আসবে।

লাদাখের উপর ভারতের শাসন এবং সম্প্রসারিত অর্থে আকসাই চিনের উপর এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি দুই দেশের মধ্যকার পরবর্তী সীমান্ত আলোচনায় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। চলতি বছরের শেষ দিকে ২২তম দফা সীমান্ত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে দুই দেশের মধ্যে।

বহু বছর ধরে যদিও নয়াদিল্লী ও বেইজিংয়ের মধ্যে সীমান্ত সমস্যা রয়েছে এবং ২০১৭ সালে দোকলাম সঙ্কটের মধ্যে সমস্যা হয়েছে, এর পরও দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত আলোচনা মূলত অব্যাহত রয়েছে।

যদিও সীমান্ত নিয়ে শিগগিরই কোন চূড়ান্ত সমাধান হবে না, তবে দুই পক্ষই এমন একটা সমাধানের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে যেখানে, ভারত হয়তো আকসাই চিনকে চীনের কাছে ছেড়ে দেবে এবং পূর্বাঞ্চলীয় অরুণাচলকে প্রদেশকে ভারতের কাছে ছেড়ে দেবে চীন।

তবে, ভারত ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করায় বেইজিং একটা অনমনীয় অবস্থানের দিকে যেতে পারে, যেটা এতদিন ছিল না।

বিশেষ করে লাদাখকে পুনর্গঠনের ব্যাপারে ভারতের সিদ্ধান্তের কারণে অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং শহরের দাবির ব্যাপারে আরও কঠোর অবস্থানে যেতে পারে চীন।

৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর ভারতকে এখন তাদের দুই প্রতিবেশীকে নিয়েই উদ্বিগ্ন থাকতে হবে।

আগামী দিনগুলোকে পাকিস্তানের সাথে পরিস্থিতি উত্তপ্তই থাকবে। অন্যদিকে চীনের সাথে সীমান্ত বিবাদ মীমাংসার বিষয়টিকেও ভারত এখন আরও জটিল করে তুললো।

No comments

Powered by Blogger.