আফগানিস্তানে নিজেদের ‘অবস্থানের’ অতিমূল্যায়ন করেছে ভারত! by ইয়াসমিন আফতাব আলী

আফগানিস্তানের ব্যাপারে ইতিবাচক অগ্রগতি হলো আফগান শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে ১০-১১ জুন বেইজিংয়ে চার পক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা যে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন, সেখানে দুটো বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে।

প্রথমত, “চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে আলোচনায় স্বাগত জানিয়েছে এবং তাদের বিশ্বাস যে পাকিস্তান আফগানিস্তানের শান্তি আলোচনা এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে”।

দ্বিতীয় বিষয় হলো “চার পক্ষ আলোচনার এই অগ্রগতি ধরে রাখতে চায়, এবং মস্কোতে ২৫ এপ্রিল যে ত্রিপক্ষীয় ঐক্যমত হয়েছে, সেটার ভিত্তিতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পক্ষগুলোকেও এখানে আমন্ত্রণ জানানো হবে এবং যখন আফগান-অভ্যন্তরীণ আলোচনা শুরু হবে, তখন এই বর্ধিত গ্রুপ বৈঠকে বসবে”।

বৈঠকে জোর দিয়ে আরও বলা হয়েছে যে, শান্তি চুক্তির মাধ্যমে শৃঙ্খলাপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল উপায়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতির দায়িত্ব হস্তান্তর নিশ্চিত করতে হবে এবং সকলের অংশগ্রহণে এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা সমন্বিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য চুক্তিতে বিশদ বিবরণ থাকতে হবে।

বৈঠকের একটা অন্যতম দিক হলো ভারতের অবস্থানকে গৌণ পর্যায়ে নামিয়ে আনা। চলমান শান্তি প্রক্রিয়ার কোথাও ভারতের অবস্থান নেই। শিগগিরই শান্তি প্রক্রিয়ার কোথাও যে তারা অন্তর্ভুক্ত হবে, তেমন সম্ভাবনাও ক্ষীণ।

ভারতের যে ‘টানেল নীতির’ কারণে তারা এই অবস্থায় পড়েছে, সেটাকে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন এম. কে ভদ্রকুমার। তিনি বলেছেন, “মৌলিকভাবে, ভারতের নীতি ব্যর্থতার কারণ হলো আফগানিস্তানকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা। পাকিস্তানকে হারানোর মানসিকতার কারণে দিল্লী ভুলেই গেছে যে, আফগানিস্তানে পাকিস্তানের ন্যায্য স্বার্থ রয়েছে; নেপালে ভারতের যে স্বার্থ রয়েছে, তার চেয়ে কোন অংশে সেটা কম নয়, এবং সংস্কৃতি, উপজাতি ও জাতিগত মিল ও ভৌগলিক সহাবস্থান, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাধ্যবাধকতার কারণে আফগানিস্তান কখনই পাকিস্তানকে ছাড়া চলতে পারবে না”।

ভারত একই সাথে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপকে অর্থায়ন করছে বলেও কথিত রয়েছে।

মনে হচ্ছে যেন, আফগানিস্তানের নতুন বাস্তবতাটা এখনও বুঝতে পারেনি ভারত।

তাদের বোঝা উচিত ছিল।

২০০১ সালে তালেবানরা যত জায়গা নিয়ন্ত্রণ করতো, এখন তার চেয়েও বেশি নিয়ন্ত্রণ করে। তালেবানরা নিরাপত্তা ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের উপর হামলা করে আসছে এবং এতে বহু হতাহত হয়েছে। এটা কাবুল সরকারের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছে, যাদেরকে ভারত শক্ত সমর্থন দিয়ে আসছে। দুঃখজনক হলো আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটা তাকে পেছনে ঠেলে দিয়েছে। এইসব সিদ্ধান্তের কারণে বহু প্রভাবশালী নেতা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে; তিনি সিনিয়র উপদেষ্টা আহমেদ জিয়া মাসুদকে সরিয়ে দিয়েছেন, হাজারা নেতা মোহাম্মদ মোহাকিকের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন, এবং জেনারেল আব্দুর রশিদ দোস্তামকে এমন একটা পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছেন, যেখানে তিনি এক ধরনের স্বেচ্ছা নির্বাসনে আছেন। এরপর ঘানি অপশতু নেতাদের সাথে মিত্রতা করেছেন। নিরাপত্তা উপদেষ্টা আতমারকে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন এবং সেই সব সুযোগ ব্যবহারের ক্ষমতা দিয়েছিলেন, যেগুলো শুধু ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যবহার করতে পারেন।

আমেরিকা শেষ পর্যন্ত এই অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, আফগানিস্তানে কোন শান্তি প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানকে ছাড়া সম্ভব হবে না। আফগানিস্তানে অবকাঠামো খাতে ভারতের বিনিয়োগ থাকলেও এই শান্তি প্রক্রিয়ার কোথাও ভারতের অস্তিত্ব নেই। তাছাড়া, পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আফগানিস্তান থেকে ভারত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং যাতায়াত ব্যয়ও বহু বেড়ে যায়। তাই এখন আর কোন সন্দেহ নেই যে আফগানিস্তানের শান্তি আলোচনার জন্য পাকিস্তানের ভূমিকাটা এখানে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

No comments

Powered by Blogger.