ইসরায়েলের অন্যায্য বিচারে থামবে না তাতুরের লেখনী

ফিলিস্তিনি কবি দারিন তাতুর
ইসরায়েলি আদালতে পাঁচ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া বিচারকে অন্যায্য আখ্যা দিয়েছেন ফিলিস্তিনি কবি দারিন তাতুর। ঘোষণা দিয়েছেন যে ভাষা আর শব্দ তার পছন্দ তাতেই লেখা চালিয়ে যাবেন তিনি। আদালতে দণ্ড ঘোষণার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও বার্তায় এই ঘোষণা দেন তিনি। ওই বার্তায় ইসরায়েলে বসবাস করা এই ফিলিস্তিনি দাবি করেন, ইসরায়েলি আদালতের ‘অন্যায্য বিচারের’ কারণে গত তিন বছরে অনেক ভুগতে হয়েছে তাকে।
৩৬ বছরের তাতুরকে ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবরে নাজারেতের কাছের গ্যালিলি গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ‘রুখে দাঁড়াও,  আমার জনগণ,  তাদের রুখে দাঁও’ শিরোনামের একটি কবিতা প্রকাশের জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়। এই কবিতার অনুবাদের কারণে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে জেল দিয়েছে আদালত। তার আইনজীবীর দাবি, ইসরায়েলি অনুবাদকেরা কবিতাটির যথাযথ অনুবাদ করতে সক্ষম হয়নি। সহিংসতায় উস্কানির প্রবণতা নয় বরং তাতে শিল্প-সম্মত প্রকাশই বেশি ছিল বলেও দাবি তার।
মঙ্গলবার দণ্ড ঘোষণার আগে ভিডিও বার্তায় তাতুর বলেন, ‘কারাদণ্ডের আশা করছি। ইহুদি জাতিরাষ্ট্র আইন পাশের পর সবকিছুই ঘটতে পারে। ইসরায়েলে ন্যায়বিচার আছে বলে মনে করি না আর আমি যে ভাষা আর শব্দে চাইবো তাতেই আমার কবিতা লেখা চালিয়ে যাবো। এমন কোনও আইন মানি না যা আমাকে বলে দেবে আমি কোন ভাষা আর শব্দে কবিতা লিখবো।’
গত মে মাসে আদালতে তাকে দোষী ঘোষণার পর সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, তার বিচার ইসরায়েলি গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের ‘মুখোশ খুলে দিয়েছে’। দেড়শোরও বেশি আমেরিকান বুদ্ধিজীবী তাতুরকে মুক্তি দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানায়। এদের মধ্যে ছিলেন পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী অ্যালিস ওয়াকার, ক্লদিয়া র‍্যানকিন, নওমি ক্লেইন ও জ্যাকুলিন উডসন। তবে তাতে সাড়া না দিয়ে কারাদণ্ডের আদেশ দিল ইসরায়েলের আদালত।
ফেসবুকে কবিতা পোস্ট করার পর ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর আটক হন তাতুর। মে মাসে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে এক সাক্ষাৎকারে তাতুর বলেছিলেন, ইতিমধ্যেই ইসরায়েলি কারাগার আর গৃহবন্দিত্বের অস্থিরতার মধ্যে আড়াই বছর কাটিয়ে ফেলেছেন।
১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পর অল্প যে কয়েকজন ফিলিস্তিনি সেখানে থেকে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন তাতুরের পূর্ব প্রজন্মরা। ইসরায়েলে এই ফিলিস্তিনি নাগরিকদের সংখ্যা এখন প্রায় ১৬ লাখ। ইসরায়েলি জনগোষ্ঠীর ২০ শতাংশ এই ফিলিস্তিনি নাগরিকেরা।
ইসরায়েলি নাগরিকত্ব থাকলেও ইসরায়েলে এসব ফিলিস্তিনিরা ১৯৪৮ ও ১৯৬৭ সালের সামরিক প্রশাসনের অধীনে বাস করে। আর ওই প্রশাসনের অধীনে তাদের কার্ফু, মত প্রকাশে বাধা, রাজনৈতিক অধিকার হরণ ও সামরিক আদালতের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়।
১৯৪৮ সালে প্রায় সাত লাখ ফিলিস্তিনিকে জোর করে বের করে দেয় জায়নবাদী যোদ্ধারা। ইসরায়েলে নিজেদের ভূমিতে ফিরতে না পেরে বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী জীবন কাটাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.