ভোট, প্লাস না মাইনাস খালেদা? by সাজেদুল হক

(ঢাকার চিঠি-২) বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বক্তব্য কিছুটা কৌতূহল তৈরি করেছে। এতদিন বাংলাদেশের নির্বাচনে পশ্চিমা ভূমিকার বিরোধিতা করে আসছিল সরকার। বিশেষকরে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে দৌড়ঝাঁপ করে ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তখনকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা। তাকে নানা বিদ্রুপও সইতে হয়েছিল।
কিন্তু বৃহস্পতিবার তোফায়েল আহমেদের দেয়া বক্তব্য কিছুটা আলাদা। বাংলাদেশে সব দলকে নির্বাচনে আনতে অনেকটা খোলাখুলিভাবেই মার্শা বার্নিকাটকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মার্কিন রাষ্ট্রদূত এ ব্যাপারে পরিষ্কার কিছু না বলে নির্বিঘ্নে রাজনৈতক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন।
কেমন হবে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন।
ডিসেম্বর নির্বাচনের মডেল হবে কী? দীর্ঘদিন ধরেই এ আলোচনা চলে আসছে। তবে ইদানীং সবচেয়ে জোরালো প্রশ্ন হচ্ছে আগামী নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অংশ নিতে পারবেন কি-না? জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ের পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি পারবেন না সেটা আদালত ও নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে। অন্যদিকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, আদালত যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে নির্বাচন কমিশন সেভাবে কাজ করবে। যদিও পরে তিনি আগাম রায় দিয়েছেন, বর্তমান অবস্থায় খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তার এ বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ, বর্তমান সংসদে অন্তত দুই জন সদস্য রয়েছেন, দুর্নীতির মামলায় কারাদ- মাথায় নিয়ে তারা সংসদ সদস্যপদ বহাল রেখেছেন। তাদের কারাদ-ের রায়ের ওপর উচ্চ আদালতের কোনো স্থগিতাদেশও নেই।
বিএনপির কোনো কোনো আইনজীবী মনে করেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আপিল নিষ্পত্তি ধারণার চেয়েও দ্রুত সময়ে হতে পারে। সে যাই হোক, ভোটের মাঠে এরইমধ্যে সরকারি দল প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন। দলটি নির্বাচন নিয়ে আনুষঙ্গিক কাজও এগিয়ে নিচ্ছে। আর খালেদা জিয়া বন্দি রয়েছেন নাজিমুদ্দিন রোডে। তার দল ব্যস্ত রয়েছে কোর্ট আর মামলা নিয়ে। এ পরিস্থিতিতে এখনো পর্যন্ত ভোটের মাঠে মাইনাসই রয়েছে বিএনপি।
সামনের দিনগুলোতে কী হবে? জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সরকার বিএনপিকে নির্বাচনে চায় না। অন্যদিকে, সরকারি দলের একাধিক নেতা বলেছেন, সরকার বিএনপিকে নির্বাচনে চায়। যদিও তারা এটাও বলতে ভুলছেন না যে, আইনগত কারণে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে সরকারের কিছুই করার নেই।
খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর অনেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমই বলেছে, বাংলাদেশে দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। যদিও ঢাকার একজন পর্যবেক্ষক বলেছেন সে কথা বলার সময় এখনো আসেনি। আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে পশ্চিমা দেশগুলো এরইমধ্যে কিছু তৎপরতা শুরু করেছে। চীন ও ভারত দৃশ্যত নীরব রয়েছে। কে না জানে এখন এখানে প্রধান খেলোয়াড় কারা?
আগামী নির্বাচন, মাইনাস না প্লাস খালেদা? কে ঠিক করবে তা। আদালত না রাজনীতি। বাংলাদেশে অতীতে বহু রাজনৈতিক ইস্যুরই মীমাংসা হয়েছে আদালতে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মৃত্যু পরোয়ানার প্রাথমিক ঘোষণা আদালত থেকেই এসেছিল।
এবার কী হবে? দৃশ্যপট এখনো পুরো পরিষ্কার নয়। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আরো অনেক ঘটনা ঘটবে। তবে এবার নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জে পড়েছেন খালেদা জিয়া। তার জীবনে এমন চ্যালেঞ্জ আগে কখনো আসেনি। কী করবেন তিনি। নাজিমুদ্দিন রোডের নিঃসঙ্গ কারাবাসে বসে কী ভাবছেন।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ক্রমশ কলঙ্কিত হয়ে পড়ছে। ছোট পরিসরের ভোটেও লাগছে কলঙ্কের দাগ। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের ভোটেও কারচুপির অভিযোগ ওঠেছে। হাঙামা হয়েছে আইনজীবীদের ভোটেও। গণতন্ত্রে এ কিসের ছায়া?

No comments

Powered by Blogger.