ধরা পড়ে গেল টেরট বাবার কেরামতি

এফএম রেডিওতে অনুষ্ঠান করার সুবাদে শ্রোতাদের কাছে তার পরিচিতি ‘আরজে টেরট বাবা’ হিসেবে। যার প্রকৃত নাম এমএম জাহাঙ্গীর রেজা ওরফে রাদবি রেজা। ভৌতিক অনুষ্ঠানের সুবাধে সহজেই একটি শ্রেণির প্রিয় হয়ে ওঠেন রাদবি রেজা। মানুষের বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে রাদবি রেজা ও তার সহযোগী আরজে কিবরিয়া সরকার হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। রাদবি রেজাকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে চাঞ্চল্যকর তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম। সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, এবিসি রেডিওতে ‘টেরট কার্ড সেগমেন্ট’ নামে একটি ভৌতিক অনুষ্ঠান করতেন রাদবি রেজা।
নিজের নাম ও ফোন নম্বর দিয়ে সাধারণ মানুষকে এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হতো। এই নাম-পরিচয় অনুযায়ী ফেসবুকে সার্চ করে আগেই আগ্রহী শ্রোতার ব্যক্তিগত তথ্য জেনে নিতেন রাদবি রেজা। পরবর্তীকালে ওই ব্যক্তি যখন সমস্যা সমাধানের জন্য তার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন তখন শুরুতেই তার বিভিন্ন তথ্য বলে দিতেন রাদবি রেজা। সহজ-সরল মানুষ এতেই ভক্ত হয়ে যান তার। এমনকি রাদবি রেজাকে অতি মানবীয়ও ব্যক্তি ভাবতে থাকেন অনেকে।
এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইউটিউবে জাদু দেখাতেন রাদবি রেজা। জাদু দেখিয়ে বলতেন, তিনি হাত দিয়ে জিন ধরতে পারেন। জিনকে বোতলে ভরতে পারেন। শুধু তাই না, মাথায় বাতি জ্বালানো, খালি হাতে মোমবাতি জ্বালানো দেখিয়ে দাবি করতেন, অতিমানবীয় ক্ষমতার অধিকারী তিনি। এই ক্ষমতা দিয়ে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে পারেন। লটারি জেতাতে পারেন, খেলার আগাম ফলও বলতে পারেন। এমনকি সমস্যা সমাধানের নামে ক্যানসার, পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের চিকিৎসার নামে ডেকে নিতেন তার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে। শুধু পরামর্শ দিয়ে ২০ হাজার ৪০০ টাকা নিতেন রাদবি রেজা। এই টাকা পাঠাতে হতো অগ্রিম, বিকাশের মাধ্যমে।
শেষ পর্যন্ত ফেঁসে যান এক নারীর ভক্তের সঙ্গে প্রতারণা করে। ওই নারী বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে ৫৭ ধারায় মামলা করেন তিনি। ওই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, ওই নারীর সাংসারিক সমস্যা সমাধানের জন্য তাকে ডাকেন রাদবি রেজা। তার সমস্যা সমাধানের জন্য স্বপ্নে পাওয়া মুক্তাসহ আতর, আংটির প্রয়োজন হবে বলে জানান রাদবি রেজা। এভাবে ছলচাতুরি করে ওই নারীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রাদবি রেজা। তার সহযোগী ছিলেন আরজে কিবরিয়া সরকার।
ওই নারীর মামলায় গ্রেপ্তারের পর রাদবি রেজার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল বলেন, প্রতারণাসহ আরও অনেক অপরাধ করেছেন রাদবি রেজা। এছাড়াও ২০১২ সালের ১৪ই জানুয়ারি ২০টি চোরাই মোটরসাইকেলসহ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল শেরেবাংলানগর থানা-পুলিশ। জাহাঙ্গীর রেজা ওরফে রাদবি রেজার বাড়ি সুনামগঞ্জে। তিনি উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন ইংল্যান্ডে। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে এবিসি রেডিওতে প্যারানরমাল রিসার্চার হিসেবে যুক্ত হন রাদবি রেজা। রেডিও কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের জানান, প্রতারণার বিষয় ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাদবি রেজাকে ‘ডর’ অনুষ্ঠান থেকে বাদ দেওয়া হয়। ওই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যুক্ত হতেন রাদবি রেজা। এছাড়া গত ডিসেম্বরে এবিসি রেডিও ছেড়ে অন্য রেডিওতে যোগ দিয়েছেন আরজে কিবরিয়া।

No comments

Powered by Blogger.