কাতারের কাছে এফ-১৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র

উপসাগরীয় রাজনীতিতে ট্রাম্প সরকারের অবস্থান আদতে কী?‌ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ধাঁধায় বিশেষজ্ঞরাও। সন্ত্রাসে মদত দেয়ার অভিযোগে সম্প্রতি কাতারকে একঘরে করেছে কয়েকটি আরব দেশ। তাদের সঙ্গে সব রকম কূটনৈতিক যোগাযোগ ছিন্ন করেছে সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। সেই নিয়ে সম্প্রতি দোহাকে তুলোধনা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কাতার সন্ত্রাস এবং ইসলামি চরমপন্থার সমর্থক বলে ঘোষণা করেছিলেন। এমনকী তার রিয়াদ সফরের সময়ই কাতারের ভবিষ্যত নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু এক সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই ভোল বদল ট্রাম্প প্রশাসনের। কাতারকে কোণঠাসা করার বদলে, তাদের সঙ্গে ১২০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের যুদ্ধবিমান চুক্তি স্বাক্ষর করতে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তি অনুযায়ী কাতারকে ৩৫টি এফ–১৫ যুদ্ধ বিমান বিক্রি করবে তারা। একটি বিবৃতি জারি করে জানালেন পেন্টাগন মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল রজার ক্যাবিনেস। তিনি বলেছেন, ‘‌বুধবার কাতারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খালিদ আল–আতিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস। মার্কিন প্রযুক্তিতে তৈরি এফ–১৫ যুদ্ধবিমান সরবরাহের শেষ ধাপগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ১২০০ কোটি টাকার যুদ্ধবিমানগুলি সরবরাহ করা গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কাতারের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা ও প্রযুক্তিগত সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে।’‌ উপসাগরীয় রাজনীতিতে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনতে, জঙ্গি সংগঠন আইএসকে উচ্ছেদ করা নিয়েও দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে দাবি ক্যাবিনেসের। কাতার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফেও একটি বিবৃতি জারি করা হযেছে।
তাতে বলা হয়েছে, ‘‌কাতার যে বন্ধু রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে, এই চুক্তিই তার প্রমাণ। বহু বছর ধরে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়ছে কাতার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে সামরিক সহযোগিতার পথ আরো প্রশস্ত হবে।’‌ ইরান এবং সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সমর্থনের অভিযোগে, কাতার উপসাগরীয় রাজনীতিতে একঘরে হওয়ার আগে, গত বছর ২১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিময়ে কাতারকে ৭২টি এফ–১৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করায় অনুমোদন দিয়েছিল মার্কিন কংগ্রেস। নতুন চুক্তিতে বিমানের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে বটে, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাতারকে যুদ্ধবিমান সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত ভালো চোখে দেখছে না আন্তর্জাতিক মহল। উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে আইএসকে হটাতে বর্তমানে দোহার ‘‌আল উদেইদ’‌ বিমান ঘাঁটিতে মার্কিন যৌথ বাহিনীর প্রায় ১১,০০০ সেনাকর্মী আস্তানা গেড়েছেন। তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই কি কাতারকে সমঝে চলছে ট্রাম্প প্রশাসন?‌ প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ওয়াশিংটনের জর্জটাউন ইউনিভআর্সিটির মধ্যপ্রাচ্য বিভাগের অধ্যাপক পল সালিভানের মতে, ‘‌খুবই গোলমেলে বিষয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে কাতারকে যুদ্ধবিমান বিক্রির সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বিপজ্জনক। এতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে।’‌ তবে তা মানতে নারাজ কাতার। তাদের দাবি, এই চুক্তির ফলে মার্কিন ৪২টি মার্কিন রাজ্যে প্রায় কর্মসংস্থানের সংখ্যা বেড়ে ৬০,০০০–এ দাঁড়াবে। যুদ্ধবিমানগুলো হাতে পেলে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আরও কড়া অবস্থান নেয়া সম্ভব হবে।

No comments

Powered by Blogger.