ধর্ষণের পর কিশোরী রোকসানা হত্যায় ৩ আসামির যাবজ্জীবন

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার কাউয়ারেখা গ্রামে কিশোরী রোকসানা আক্তারকে (১৫) অপহরণ, ধর্ষণ এবং হত্যার পর লাশ গুম করার চাঞ্চল্যকর মামলায় ৩ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ পৃথক মেয়াদে দ-াদেশ এবং জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে বরিশালের নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক শেখ আবু তাহের মামলার এক আসামি স্বপনের উপস্থিতিতে ও অপর ৫ আসামির অনুপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে অপহরণের অপরাধে প্রধান আসামি স্বপন হাওলাদারকে ১৪ বছর কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া হত্যার অপরাধে স্বপন হাওলাদার, সমীর হাওলাদার ও গৌরাঙ্গ বৈরাগীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং লাশ গুম করার অপরাধে ৩ আসামির প্রত্যেককে ৫ বছর কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অপরদিকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এই মামলার ৩ আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এরা হলো, স্বপনের বাবা রফিকউদ্দিন হাওলাদার, রফিকের ভাই মোকসেদ হাওলাদার এবং স্থানীয় বাসিন্দা সফিজউদ্দিন। ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, ঘটনার শিকার রোকসানা আক্তারের বাড়ি গৌরনদী উপজেলার কসবা এলাকায়।
ঘটনার কয়েকদিন আগে সে উজিরপুরের কাউয়ারেখা গ্রামে নানার বাড়ি বেড়াতে যায়। ২০০০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার পর নানার বাড়িতে অন্যদের সাথে ভিসিআর দেখছিলো রোকসানা। ভাত খেতে ডাকার অজুহাতে নিকটাত্মীয় স্বপন তাকে ডেকে বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে স্বপনসহ তার দুই সহযোগী সমীর ও গেরাঙ্গা তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ পার্শ্ববর্তী বাড়ির অতুল হালদারের বাড়ির টয়লেটের স্লাবের নিচে ট্যাংকিতে ফেলে দেয় তারা। সবাই ভিসিআর দেখায় ব্যস্ত থাকায় ওই রাতে রোকসানার কোনো খোঁজ পড়েনি। পরদিন সকালে রোকসানার খোঁজ পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজির পর অতুল হালদারের বাড়ির টয়লেটের স্লাব এলোমেলো দেখে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। এরপর টয়লেটের স্লাব তুলে ট্যাংকির ভেতর থেকে রোকসানার লাশ উদ্ধার করে এলাকাবাসী। খবর পেয়ে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় একই বছরের ৬ মার্চ রোকসানার বড় ভাই লালন ফকির বাদী হয়ে ৬ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যা এবং লাশ গুমের অভিযোগে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ২০০৩ সালের ২৬ জানুয়ারি ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে এই মামলার অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন উজিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হাকিম। পরে ট্রাইব্যুনালে ২৫ জনের মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক ওই রায় দেন।

No comments

Powered by Blogger.