রাজস্ব ঘাটতির জেরে বাজেট কাটছাঁট সাড়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা

বড় অংকের রাজস্ব ঘাটতির মুখে বাজেটের লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। এ অবস্থায় চলতি বাজেট থেকে ২৩ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে। এতে বাজেটের সংশোধিত আকার দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। পাশাপাশি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে ৩২ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র যুগান্তরকে বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি- এই আট মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫২ শতাংশ। বাকি ৪ মাসে কোনোভাবেই ৪৮ শতাংশ রাজস্ব সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। এনবিআরের আদায় কমে যাওয়া এবং রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়াতে এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে ২৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। এ ছাড়া নন-এনবিআর ৭৫০ কোটি টাকা, কর বহির্ভূত রাজস্ব ৮ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। মূলত রাজস্ব আয় কাটছাঁট করতে গিয়েই পুরো বাজেট সংশোধন করতে হয়েছে। জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট) জালাল আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কিছুটা কমবে। যে কারণে বাজেট সংশোধন করা হচ্ছে। তবে অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বিষয়টিকে ভিন্ন দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করছেন। তিনি বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে সংশোধিত বাজেটের পুরো অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে না।
২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত কোনো বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। বাজেটের টাকা খরচের অনুপাত ২০১২ সালে ছিল ৯৩ শতাংশ। ২০১৬ অর্থবছরে কমে তা ৭৮ শতাংশে এসেছে। তার ধারণা চলতি বাজেটের অর্থ ব্যয় সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৭২ শতাংশ হবে; এর বেশি নয়। এর ফলে সংশোধিত বাজেটের পুরো অর্থও ব্যয় হবে না। এতে বাজেট বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। কাটছাঁট করে সংশোধিত ব্যয়ের যে আকার দাঁড়িয়েছে তা জিডিপির ১৬ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এখন সংশোধিত বাজেটে তা ২ লাখ ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। এর মধ্যে এনবিআর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, নন-এনবিআর রাজস্ব ৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকা থেকে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা এবং করবহির্ভূত রাজস্ব আয় ৩২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা থেকে কাটছাঁট করে ২৪ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে অনুন্নয়ন খাতের ব্যয়ও কমানো হয়েছে। এর মধ্যে অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয় ১১ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা হ্রাস করা হয়। পাশাপাশি ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে ২ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা এবং মূলধনী ব্যয় হ্রাস করা হয় ১১ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় হ্রাস করা হয় ১ হাজার ২৫ কোটি টাকা। তবে অনুন্নয়ন ব্যয়ে সরবরাহ ও সেবা খাতে ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা বেড়েছে। সম্পদ সংগ্রহ ও পূর্ত কাজে ১ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে বলে জানা গেছে। বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ২৯ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা।
সংশোধনী বাজেটে এ ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২ লাখ ৬ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) সরকারি বরাদ্দে কোনো কাটছাঁট করা হয়নি। ফলে ১ লাখ ১০ হাজার ৭শ’ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়ন করা হবে। তবে বৈদেশিক সহায়তা কমানো হয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা। ফলে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নের ৮ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকাসহ মোট সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়াবে ১ লাখ ১৯ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। সূত্রে জানা গেছে, চলতি বাজেট কাটছাঁট করার ফলে সংশোধিত ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে। শুরুতে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা ঘাটতি বাজেট ছিল। এখন এই ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৬ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা হয়েছে। ঘাটতি অর্থায়ন পূরণ করতে বৈদেশিক উৎস থেকে ৩৬ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। সংশোধিত বাজেটে এ খাতে কাটছাঁট করে ২৮ হাজার ৭৭১ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬১ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা থেকে বাড়িয়ে ৭৭ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.