ফুটপাতে দলীয় কার্যালয়, দোকানপাট

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সড়ক ও ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কার্যালয়। দখলদারের তালিকায় আছে অসংখ্য দোকান ও কাঁচাবাজার। ওয়ার্ডের বেশির ভাগ সড়কই ভাঙাচোরা। আছে মাদকের সমস্যা। গতকাল রোববার সরেজমিন ঘুরে এবং এলাকার বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এ পরিস্থিতি দেখা যায়।
মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের ‘এ’ থেকে ‘এইচ ব্লক’, উত্তর বিশিল, তুরাগ সিটি, গুদারাঘাট, বক্সনগর, চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকা নিয়ে গঠিত উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৮ নম্বর ওয়ার্ড। ৩ দশমিক ৭৭৬ বর্গকিলোমিটারের এ ওয়ার্ডের ভোটার ৭৭ হাজার। বসবাস করেন দেড় লক্ষাধিক লোক। দেখা যায়, মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের এ ব্লকের ৩ নম্বর সড়কে ফুটপাতের ওপর গড়ে তোলা হয়েছে যুবলীগের কার্যালয়। বেশ বড় আকারের একতলা পাকা ঘর। বাইরে লেখা ‘ঢাকা মহানগর যুবলীগ, শাহ আলী থানা’। ভেতরে কয়েকজন যুবক বসে আছেন। কার্যালয়টির বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তাঁরা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ১০ তলা আদর্শ টাওয়ারের নিচেই এই কার্যালয়টি কয়েক মাস আগে বানানো হয়। লোকজনের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে আর সারাক্ষণই আবাসিক ভবনের নিচে আড্ডা জমছে। কার্যালয়ের সামনে রিকশা মেরামতের দোকান, পাশে চায়ের দোকানও বসিয়েছে তারা। একই চিত্র মিরপুর-১ নম্বর পানির পাম্পের সামনের ফুটপাতে। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের কার্যালয়। বাইরে বেশ বড় সাইনবোর্ড টানানো। ফুটপাতে কার্যালয় থাকায় পথচারীরা সড়কে নেমে হাঁটছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৯৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ফুটপাতে কার্যালয় থাকা ঠিক নয়। তবে এই কার্যালয়টি বহু বছর ধরে এখানে। ওয়াসার পাম্প থেকে লরিতে করে কিছুক্ষণ পরপর পানি নেওয়া হয় বলে এখানকার ফুটপাত খুব একটা ব্যবহার হয় না। ওয়ার্ডের সনি সিনেমা হল থেকে চিড়িয়াখানা ঢাল পর্যন্ত সড়ক ও ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকানপাট ও কাঁচা বাজার। দেখা যায়, মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের ঈদগাহের সামনের মূল সড়কের ওপর বসেছে অস্থায়ী বাজার।
এর মধ্যে ভ্যানগাড়ির ওপর ভাসমান কিছু দোকান যেমন আছে, তেমনি আছে সড়কের ফুটপাত দখল করে বসানো স্থায়ী অস্থায়ী দোকান। দোকানদার ও বাজার করতে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত এ বাজার বসে। তবে স্থায়ী দোকানগুলো সারা দিনই থাকে। গত বছর বাজারটি উচ্ছেদ করা হয়েছিল। এর কয়েক দিন পরেই আবার বাজারটি বসে যায়। ওয়ার্ডের সড়কগুলো ভাঙাচোরা। তবে গতকাল দেখা যায়, বেশ কিছু সড়কের সংস্কারকাজ চলছে। পানিনিষ্কাশনের বড় বড় পাইপ বসানো হচ্ছে। ২০১৫ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর থেকে ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি সড়ক সংস্কার করা হয়েছে বলে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। ওয়ার্ডের তুরাগ সিটি প্রিয়াঙ্কা হাউজিং সোসাইটিতে প্রায় ১৫ হাজার লোকের বাস। কিন্তু এ হাউজিংয়ে প্রবেশপথ এবং ভেতরের প্রতিটি সড়ক এখনো বালি-মাটির তৈরি। সড়কে পিচ ঢালাই তো বহুদূর, ইট বিছানোও হয়নি। দেখা যায়, প্রিয়াঙ্কা হাউজিং থেকে মিরপুর-১ নম্বরে যাতায়াতের প্রধান সড়কটি শুরু হয়েছে এ-ব্লকের ৫ নম্বর সড়কের শেষ প্রান্ত থেকে। ৫ নম্বর সড়কের শেষ মাথা থেকেই আর কোনো যানবাহন চলে না। ফলে হাউজিংয়ের বাসিন্দাদের প্রতিনিয়ত চলাচলে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। তবে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সড়কগুলোতে পানিনিষ্কাশনের পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। ওয়ার্ডের অন্তত ১০ জন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, এ ওয়ার্ডে মাদক বড় সমস্যা। আর মাদকের এ ব্যবসা মূলত গুদারাঘাট এলাকাকেন্দ্রিক। গুদারাঘাট এলাকার বস্তিগুলোতে চলে মাদকের ব্যবসা। মাদকবিষয়ক চাঁদা আদায়-সংক্রান্ত ঝামেলায় পুলিশের শাহ আলী থানার সোর্স গত বছর গুদারাঘাটের এইচ ব্লকের বস্তির চা-দোকানি বাবুল মাতবরকে জ্বলন্ত চুলার ওপর ফেলে দেওয়া হয়। মারা যান বাবুল।

No comments

Powered by Blogger.