ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন বরিস জনসন, বিশ্বব্যাপী তোলপাড়

বর্ণবাদী মন্তব্য আর বিশ্ব নেতাদের নিয়ে বেফাঁস কথাবার্তা
বলে সমালোচিত হয়েছিলেন ব্রেক্সিট আন্দোলনের নেতা
বরিস জনসন। তিনিই এখন ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী -এএফপি
ব্রিটেনের ইতিহাসের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর দুনিয়ার সবার দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছিলেন তেরেসা মে। কিন্তু নিজে শপথ নেয়ার পরেই ব্রেক্সিটের বাঁশিওয়ালা ও বিতর্কিত টরি নেতা বরিস জনসনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সবার দৃষ্টিকে বরিসের দিকে ঠেলে দিলেন তিনি। তেরেসা বন্দনায় ব্যস্ত হওয়ার বদলে এখন বরিস বধের মন্ত্র জপতে শুরু করেছে বিশ্বের ডাকাবুকো রাজনীতিকরা ও প্রধান প্রধান গণমাধ্যমগুলো। ব্রিটেনের প্রধান কূটনীতিক হিসেবে বরিস জনসনের এই পদায়ন মানতে পারেনি মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন। বরিসের বিতর্কিত উক্তিগুলোকে একত্রিত করে বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গণমাধ্যমটি। তাদের দাবি, প্রবল সমকামিতাবিরোধী এই নেতা সমলিঙ্গের বিয়েকে অভিহিত করেন ‘কুকুর সঙ্গম’ হিসেবে। এদিকে ভিনদেশীদের প্রতি তার রয়েছে নাক সিটকানোর রীতি। বিদেশীদের ‘কালো সন্তান’ ও ‘নরখাদক’ প্রভৃতি বিশেষণে অভিহিত করতেন বরিস। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা,
সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন সম্পর্কেও তিনি কটু কথা বলতে অভ্যস্ত দাবি করেছে প্রতিবেদনটি। তারা বলছে, হিলারিকে ‘মানসিক হাসপাতালের একজন ধর্ষকামী রোগী’ হিসেবে মনে করেন বরিস। দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত নিজের বিভিন্ন লেখায় কঙ্গো ও নামিবিয়ার নাগরিকদের ‘তরমুজের মতো হাসি সর্বস্ব এবং কুৎসিত মানুষ’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি। এছাড়াও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ­াদিমির পুতিনকে হ্যারি পটার সিনেমার ভৃত্যের চরিত্র ‘ডবি’ বলে অভিহিত করেছেন এই বর্ণবাদী নেতা। ২০১৫ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে ছাগলের অশালীন সম্পর্ক নিয়ে কবিতাও লিখেছেন তিনি। এমনকি জাপানে ভ্রমণে গিয়ে স্কুলছাত্রদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে- এমনটাই দাবি করেছে প্রতিবেদনটি। এদিকে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট ‘জাতিকে বিভাজনকারী ব্যক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছে বরিস জনসনকে। প্রতিবেদনটি আরও বলছে, ‘ব্রেক্সিট গণভোটে জয়ের পর সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের জায়গায় নিজেকে অভিষিক্ত করার পরিকল্পনা করছিলেন বরিস। কিন্তু শেষ মুহূর্তের দলাদলিতে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। তবে দুই সপ্তাহের মাথায় আবারও দেশটির সর্বোচ্চ কূটনীতিকের পদ দখল করলেন তিনি।’ তার এই প্রত্যাবর্তনের জন্য নতুন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মেকে দায়ী করছে পত্রিকাটি। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানায়, ‘নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীকে বড় পদে নিয়োগ দিয়ে রাজনৈতিক সক্ষমতা বাড়ালেন তেরেসা, তবে দেশের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিলেন তিনি।’
অন্যদিকে ব্রেক্সিটের ধাক্কায় এলোমেলো হয়ে যাওয়া ব্রিটেনকে আবারও একসুতায় গাঁথার কাণ্ডারি হিসেবে ধরা হচ্ছিল নতুন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মেকে। কিন্তু ব্রেক্সিটের বাঁশিওয়ালা সাবেক লন্ডন মেয়র বরিস জনসনকে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে শুরুতেই বিতর্কে জড়িয়ে গেছেন তিনি। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ব্রেক্সিটপন্থী নেতা হিসেবে বরিস জনসন আমাদের দেশের জন্য ক্ষতিকর ছিলেন, এখন ব্রিটেনের প্রধান কূটনীতিক হিসেবে তিনি সমগ্র বিশ্বের জন্য ক্ষতির কারণ হবেন।’ এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও মন্তব্যের তুবড়ি ফুটছে। বরিস জনসন ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ পাওয়ার পর টুইটারে নিজের মতামত লিখে বিস্ময় প্রকাশ করেন সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কার্ল বিলথ। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এটি একটি রসিকতা। কিন্তু আমি আতংকিত যে এটি আসলে কোনো রসিকতা নয়। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।’ অস্ট্রেলিয়ার পত্রিকা দ্য টাইমসে বরিসকে বলা হয়েছে ‘অনুচিত কর্মপ্রবণ ব্যক্তি’। তবে জনসনের সঙ্গে নমুন করে কাজ করার সুযোগ আছে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার ডুমার আন্তর্জাতিকবিষয়ক প্রধান আলেক্সি পুশকভ। তিনি বলেন, ‘জনসনের পূর্বসূরি ফিলিপ হ্যামন্ড রাশিয়াকে হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছিল, আশা করি জনসন তেমনটা করবেন না।’ অন্যদিকে জার্মানির পত্রিকাগুলোতে ‘বিতর্কিত রাজনীতিক’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে তাকে।

No comments

Powered by Blogger.