দুই দশক পেরিয়ে অ্যাডর্ন

জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনী গ্যালারিতে ‘চৈত্রে বই উৎসব’-এ
গতকাল বিকেলে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অ্যাডর্ন পাবলিকেশনের দুই দশক পূর্তিতে
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল সংগীত পরিবেশনা
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে গতকাল রোববার বিকেলে রাজপথে ছিল তীব্র যানজট। তার ওপর চৈত্রের গরম। এ পরিস্থিতিতে স্বস্তি মিলল জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনী গ্যালারিতে ঢুকে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গোলাকৃতির সুপরিসর ঘরটির চারপাশে টেবিলে সাজানো বই আর বই। মাঝে টেবিলে বিচিত্র বইয়ের প্রদর্শনী। ঋতুভিত্তিক আয়োজন। শিরোনাম ‘চৈত্রে বই উৎসব’। ‘চৈত্রে বই উৎসব’ আয়োজন করেছে দেশের স্বনামধন্য ১০ প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান। উৎসবে ৩০ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ ছাড়ে বই কিনতে পারছেন পাঠকেরা। কিন্তু শুধু বই কেনা-বেচার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি আয়োজনটি; বরং প্রতিদিনই বই নিয়ে আলোচনাসহ বিচিত্র আয়োজন করে সত্যিকারের উৎসবের চরিত্র পেয়েছে এটি। গতকালের আয়োজনটি ছিল জমজমাট। উৎসবের অন্যতম আয়োজক অ্যাডর্ন পাবলিকেশনস প্রতিষ্ঠার দুই দশক পার করেছে। এ প্রতিষ্ঠানের দুই দশক পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন শুরু হয় বিকেল সাড়ে চারটায়। বাউল গান, কবিতা ও আড্ডায় দারুণ জমে উঠেছিল। অনুষ্ঠানে ভাবনগর সাধুসঙ্গের শিল্পী অন্তর সরকার, সরদার হীরক রাজা এবং রবিউল হক চর্যাপদ থেকে গান শোনান। লালনের গান শোনান আল আমিন। কবিতা পড়েন মোরশেদ শফিউল হাসান, মারুফ রায়হান, সাইমন জাকারিয়া, শহীদুল্লাহ ফরায়েজি, আহসান সাইদ প্রমুখ। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অ্যাডর্নকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন আতা সরকার, হাসান হাফিজসহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠানস্থলে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা প্রধান নির্বাহী সৈয়দ জাকির হোসেইনের সঙ্গে। আলাপচারিতায় জানালেন, চট্টগ্রামে ১৯৯৬-এর মার্চ মাসে স্বাধীনতা দিবসে বিশিষ্ট কবি ও গবেষক অধ্যাপক ময়ূখ চৌধুরীর গবেষণাগ্রন্থ উনিশ শতকের নবচেতনা ও বাংলা কাব্যের গতিপ্রকৃতি বইটি প্রকাশনার উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমেই অ্যাডর্ন পাবলিকেশনসের যাত্রা শুরু। ওই সময়ের স্মৃতি হাতড়ে প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম উদ্যোক্তা সৈয়দ জাকির হোসেইন বলেন, ‘১৯৯৪ সালের দিকে কবি ময়ূখ চৌধুরী এই পাণ্ডুলিপি অ্যাডর্ন থেকে প্রকাশ করাতে আগ্রহী না হলে হয়তো প্রকাশক হওয়ার ইচ্ছাই জাগত না আমার। কারণ সম্পাদনা, মুদ্রণ, ডিজাইন ও গ্রন্থের প্রতি আগ্রহ থাকলেও “গ্রন্থ প্রকাশ” বিষয়টি আমার কাছে বিশেষ একাডেমিক ও শুদ্ধতা চর্চার চ্যালেঞ্জই মনে হতো। প্রকাশনা সংস্থাকে আমি সৃজনশীলতা ও মননশীলতার সঙ্গে জ্ঞানচর্চার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ই মনে করতাম এবং এখনো করি।’ বিগত দুই দশকে অ্যাডর্ন তার নিজ প্রকাশনার আলাদা পাঠক সৃষ্টি করতে পেরেছে লেখক বিবেচনার চেয়ে বিষয় নির্বাচনে গুরুত্বের কারণে। বাংলা ভাষা স্মারক-মহান একুশে সুবর্ণজয়ন্তী গ্রন্থ আনোয়ারা দীল ও আফিয়া দীল-এর Bengali Language Movement and Creation of Bangladeshসহ আনিসুজ্জামান সম্পাদিত ও নির্বাচিত সাহিত্যকীর্তি গ্রন্থমালা-এর ২৪টি বই, বাংলা বাউল সিরিজ, লালন, রাধারমণ, হাসন রাজা, শাহ আবদুল করিম, জালাল উদদীন খাঁ ইংরেজিতে বের করা, আত্মজীবনী, বাংলাদেশ স্টাডিজ সিরিজ, বাংলা ভাষার কথাসাহিত্য ও কবিতা ইংরেজিতে প্রকাশ করে বিশ্বের দরবারে নিয়ে যাওয়ার কাজটি করেছে অ্যাডর্ন। আট শিল্পীর আঁকা ছবি দিয়ে আটজন ছড়াকারের মজার পড়া ১০০ ছড়া। ছোটদের জন্য এবিসি সিরিজে বিশেষায়িত বই প্রকাশ করার কাজটিও করেছে অ্যাডর্ন। চৈত্রের বই উৎসবের নিজেদের স্টলের কথা বলতে বলতে একটি ক্যাটালগ এগিয়ে দেন প্রতিষ্ঠানটির আরেকজন উদ্যোক্তা জোহরা বেগম। তিনি বলেন, অ্যাডর্ন চায় জ্ঞান ও আনন্দের যুগলবন্দিতে পাঠকের মুহূর্তগুলোকে অসাধারণভাবে সুসজ্জিত করতে। আগামীর পরিকল্পনা হিসেবে তিনি জানান, অ্যাডর্ন পাঠকের চাহিদার আলোকে কিছু বই পুনর্মুদ্রণে হাত দেবে। বই কম করবে কিন্তু নির্বাচিত বিষয়ভিত্তিক বই আরও করবে। ২ এপ্রিল শুরু হওয়া ‘চৈত্রে বই উৎসব’ আগামীকাল শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পাঠকদের আগ্রহের কারণে এর সময় বেড়েছে দুই দিন। জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে উৎসবটি চলবে ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টায় বইমেলাসহ থাকছে বইকেন্দ্রিক নানা আয়োজন। উৎসবে অংশ নিচ্ছে প্রথমা প্রকাশন, অনন্যা, অনুপম, অ্যাডর্ন, কাকলী, স্টার বুকস, অবসর-প্রতীক, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, বেঙ্গল পাবলিকেশনস ও সময় প্রকাশন।

No comments

Powered by Blogger.