জেলা-উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রহশালা চাই by লিয়াকত হোসেন খোকন

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দেন- ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এর ১৭ দিন পর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে। সে রাতেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তারপর শুরু হয় যুদ্ধ- বঙ্গবন্ধুর নামেই। নয় মাসের মধ্যে হেরে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। চূড়ান্ত সময় এসেছিল একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ট্রেনে ভারতের বনগাঁ হয়ে কলকাতায় গিয়ে প্রিয় অভিনেত্রী-নৃত্যশিল্পী সাধনা বসুর হাতে তুলে দিয়েছিলাম স্বাধীন বাংলার পতাকা। প্রিয় অভিনেত্রীকে স্বচক্ষে ওই প্রথম দেখা। বাংলাদেশ পেয়েছিলাম বলেই সেদিন তা সম্ভব হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে তোমরা পেয়েছ স্বাধীন একটি দেশ। এজন্য তোমার এই প্রিয় অভিনেত্রীকে তুমি স্বচক্ষে দেখার সুযোগ পেলে। পাকিস্তান থাকলে কি পারতে? দেখ, আমার বোনটি থাকে তোমাদের রাঙ্গামাটিতে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হওয়ার কারণে এরপরে একটিবারের জন্যও ওখানে যেতে পারিনি। দেশ ভাগ আমাকে বড্ড কষ্ট দিয়েছে...।’ সাধনা বসু এও বলেছিলেন, ‘তোমরা পূর্ববাংলার বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গড়বে। মনে রাখবে, স্বাধীনতা বিরোধীরা সুযোগ পেলে তোমাদের দেশ তছনছ করে দিবে।’ সত্যিই সাধনা বসুর এই কথা বাস্তবে রূপ নিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে। পরে শাসকগোষ্ঠী স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করে সঠিক ইতিহাস মুছে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। তাই ভবিষ্যতে নবীন প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যথাযথ ও সঠিকভাবে অবহিত হতে পারে সেজন্য-
১. প্রতিটি জেলা-উপজেলায় স্থাপন করা হোক মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রহশালা, যেখানে মুক্তিযোদ্ধা ও বীর শহীদদের নামের তালিকা লিপিবদ্ধ থাকবে। প্রয়োজনে শহীদদের ছবি ও জীবনপঞ্জি রাখা যেতে পারে।
২. একাত্তরের মার্চের উত্তাল দিনগুলোর আন্দোলন-মিছিলের ছবি দেয়ালে দেয়ালে টাঙানো হোক।
৩. প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করা হোক।
৪. মুক্তিযুদ্ধে নিহত বীর শহীদদের নিয়ে নির্মাণ করতে হবে প্রামাণ্যচিত্র এবং তা বিশেষ বিশেষ দিনে পাড়া-মহল্লায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. একাত্তরে স্বাধীনতার পক্ষে ভূমিকা পালনকারী ছাত্র সংগঠনসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের নামের তালিকাও রাখতে হবে।
৬. যারা মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, সেই কুখ্যাত ব্যক্তিদের নামের তালিকাও জেলা-উপজেলার মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রহশালায় রাখা যেতে পারে।
রূপনগর, ঢাকা

No comments

Powered by Blogger.