ভারতে ভূমিকম্পে ৬ জন নিহত, ১০০ আহত

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যের ইম্ফলে গতকাল ভোরে
শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ভবন। ৬ দশমিক ৭ তীব্রতার
এই ভূমিকম্পে ভারতে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে। এএফপি
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ছয়জন নিহত ও অন্তত ১০০ জন আহত হয়েছেন। দেশটির আরও কয়েকটি রাজ্য ছাড়াও বাংলাদেশ, নেপাল ও মিয়ানমারেও অনুভূত হয় এ ভূমিকম্প। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, উৎপত্তিস্থল মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ছিল ৬ দশমিক ৭। বার্তা সংস্থা এএফপি, ভারতের ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ইম্ফলে অনেক বাড়িঘরে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। ধসে পড়েছে বিভিন্ন ভবনের দেয়াল। মণিপুর ছাড়াও আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড ও বিহারে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এ স্থানগুলোতেও অনেক ভবনে ফাটল ধরেছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ইম্ফল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে টামেংলং জেলার নোনি গ্রামে। এটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকা। ভারতের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা অনুরাগ গুপ্তের বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, ভূমিকম্পে ইম্ফলে পাঁচজন মারা যাওয়ার নিশ্চিত খবর জানা গেছে। এখানে আহত হয়েছেন অন্তত ৩৩ জন। ছয়তলা একটি ভবন আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। কিছু ছোট স্থাপনাতেও দেখা দিয়েছে ফাটল। এএফপি আরও জানায়,
ইম্ফলের প্রধান হাসপাতালগুলোর একটির কর্মকর্তা জানান, ভূমিকম্পের পর থেকে তাঁদের হাসপাতালটিতে মাথা ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আঘাত নিয়ে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি ভর্তি হয়েছেন। রয়টার্সের খবরে ইম্ফলে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছয়জন বলে উল্লেখ করা হয়। আহত ১০০ জনের মধ্যে ৩৩ জনের অবস্থা গুরুতর। টাইমস অব ইন্ডিয়া বলেছে, আসামের প্রধান বাণিজ্যিক শহর গুয়াহাটিতেও ভূমিকম্পের পর আতঙ্কে লোকজন দৌড়ে বাইরের খোলা জায়গায় চলে যান। ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরের বাসিন্দা সুধীর কুমার বলেন, একজন তাঁকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। উঠে দেখেন খুব জোরে সব কাঁপছে। ইম্ফলের বাসিন্দা শিবচন্দ্র সিং বলেন, ঝাঁকুনিতে তাঁর ঘরের জিনিসপত্র পড়ে যায়। দীপক নামের ইম্ফলের আরেক বাসিন্দা এএফপিকে বলেন, ভূমিকম্পের পর বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। যখন এটি আঘাত হানে তখন প্রায় সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে তাঁরা বাইরে বেরিয়ে আসেন। রাস্তা ও খোলা জায়গায় তখন অনেকেই ভয়ে কাঁদছিলেন ও প্রার্থনা করছিলেন। ভূমিকম্প-পরবর্তী কম্পনের আশঙ্কায় শত শত মানুষ কয়েক ঘণ্টা বাইরেই কাটান। বার্তা সংস্থা পিটিআই বলেছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছের কয়েকটি ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সেখানকার বিদ্যুৎ সরবরাহ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইটে ভূমিকম্পে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার কথা জানিয়েছেন। এর আগে ১৯৫০ সালে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসামে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার প্রচণ্ড ভূমিকম্পে বেশ কিছু গ্রাম মাটিতে মিশে যায়। এ ভূমিকম্প এবং এর পরপরই হওয়া ভূমিধস ও বন্যায় নিহত হয়েছিলেন দেড় হাজারের বেশি লোক। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল তিব্বত।

No comments

Powered by Blogger.