আওয়ামী লীগের বিদায়ের অপেক্ষায় আছে সবাই

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ কখন বিদায় হবে সে অপেক্ষায় আছে সবাই। কারও মুখে আওয়ামী লীগের প্রশংসা শোনা যায় না। সবাই চায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে চলে যাক। গতকাল দলের বনানীর কার্যালয়ে রংপুর বিভাগীয় জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা থেকে যাবে না। তাই নির্বাচনের জন্য আমাদের দলকে সুসংগঠিত করতে হবে। মানুষ বাঁচতে চায়। পরিবর্তন চায়। শান্তিতে থাকতে চায়। এরশাদ বলেন, দেশের অবস্থা অন্ধকারাচ্ছন্ন। মানুষ শঙ্কিত। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। অনিশ্চিত জীবন। অনিশ্চিত রাজনীতি। বিদেশীরা এ দেশে রেড অ্যালার্ট দিয়েছে। কত বড় লজ্জার কথা এটি। কত বড় ঘৃণার কথা। কত ছোট হয়েছি আমরা বিদেশীদের কাছে। এটা কি দেশ? কিসের গণতন্ত্র। বিদেশীরা এখানে আসতে চাইছেন না। বিনিয়োগ করতে চাইছেন না।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের চিহ্ন এখন নেই। এটা প্রাণহীন গণতন্ত্র। প্রশ্নফাঁসের সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, সব জায়গায় সরকার হস্তক্ষেপ করে জাতিকে মেধাশূন্য করে দিচ্ছে। এত দলীয়করণ এর আগে কখনও হয়নি। প্রশাসনের অবস্থা ভেঙে পড়েছে। সাবেক এই স্বৈরশাসক আরও বলেন, রাস্তায় বিজিবি দেখা যায়। পুলিশের মহড়া দেখা যায়। এতে কি মানুষের স্বস্তি আসছে? এটা কিসের লক্ষণ? দেশে সুশাসন নেই। নিরাপত্তা নেই। অদ্ভুত দেশ। অদ্ভুত শাষণ। এখন মানুষের জীবনের নিরাপত্তার বড় অভাব। মানুষ সত্যিকারভাবে মুক্তি চায়। এই জাহেলি যুগ থেকে বের হতে চায়।
এরশাদ বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৪১ প্রকৌশলী চলে গেছেন। বিদ্যুৎকেন্দ্র চলবে না। এর থেকে বড় লজ্জা আর কী হতে পারে।
হজব্যবস্থার সমালোচনা করে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, এবার যারা হজে গেছেন। কী পরিমাণ কষ্ট তারা করেছের। আমাদের নিজস্ব এয়ারলাইনস আছে। কিন্তু বলার মতো কোন অবস্থা নেই। নিজের জেল খাটার ইতিহাস তুলে ধরে এরশাদ বলেন, আজ পর্যন্ত কোন সরকার আমার প্রতি সুবিচার করেনি। শাহাবুদ্দীন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউ করেনি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার পেয়েছেন। আমরা অবশ্যই ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু একটা প্রশ্ন করতে পারি? হোয়াইট হাউমে গিয়েছেন কেউ?
আমিই সেখানকার প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে হোয়াইট হাউসে গিয়েছি। আমি একমাত্র ব্যক্তি, যার সঙ্গে রানি এলিজাবেথ দুপুরে লাঞ্চ করেছেন। এ সম্মান তো অন্য কেউ পায়নি। সৌদি বাদশা, ইন্দ্রিরা গান্ধী নিজেরা এসে আমাকে রিসিভ করেছেন তাদের দেশের বিমানবন্দরে। এই জনপ্রিয়তা ও অতীতকে আবারও গড়ে তুলতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমি সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আরও একবার ক্ষমতায় আসতে চাই। আমাদের সুযোগ আছে। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। এ সময় নিজ দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথাও স্বীকার করেন এরশাদ। বলেন, মানুষ আমাদের ভোট দিতে চায়। কিন্তু ভোট দেয়ার মতো প্রার্থী আমাদের নেই। সংগঠন নেই। কর্মী নেই। কাকে ভোট দেবে? তিনি বলেন, আমি সেনাপ্রধান ছিলাম। রাষ্ট্রপতি ছিলাম। আমার আর কিছু পাওয়ার বা হারানোর নেই। আমি চাই জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসুক। আমার মৃত্যুবার্ষিকী ও জন্মবার্ষিকী পালন করুক। এজন্য দলকে শক্তিশালী করে তুলতে নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য জি এম কাদের বলেন, দেশ ক্রান্তিকাল পরিস্থিতি অতিক্রম করছে। যতই বলা হোক দেশ স্থিতিশীল, প্রকৃতপক্ষে দেশ অস্থিতিশীল অবস্থায় আছে। তিনি বলেন, এরশাদকে যারা স্বৈরাচার বলে, তাদের জন্য বড় লজ্জা। কারণ, এর চেয়ে মহাস্বৈরাচার দেশে আছে। এরশাদের ক্ষমতাকে অবৈধ বলে প্রশ্ন তোলা হয়। কিন্তু বর্তমান সরকারসহ অনেকেরই বৈধতা নিয়ে এখন প্রশ্ন আছে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, দেশে অনেক উন্নয়নের কথা বলা হয়। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে- মানুষের জীবনের নিরাপত্তাই নেই।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফয়সাল চিশতী, যুগ্ম মহাসচিব নুরুল ইসলাম নুরু ও রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.