লাশের স্তূপ থেকে বেরিয়ে এলো জীবন্ত মানুষ

নেপালে বৃহস্পতিবার সপ্তাহান্তে ভয়াবহ ভূমিকম্পে সৃষ্ট নেপালে ভূমিকম্পের ৫ দিন পর ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে জীবিত কিশোর উদ্ধার ভেতর থেকে এক কিশোরকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। খবর এএফপি’র।
পুলিশের মুখপাত্র কমল সিং বাম বলেন, ‘১৫ বছর বয়সী এক কিশোরকে হিলটন গেস্টহাউস নামের একটি ভবনের ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এই ঘটনাটির ব্যাপারে আরো খবর পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছি।’
এ যেন লাশের স্তূপের ভেতর থেকে জীবন্ত ফুল হয়ে বেরিয়ে আসা। নির্জীব প্রাণহীন মৃত্যুর নগরীতে পরিণত হওয়া কাঠমাণ্ডুর ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে ৫ দিন পর উদ্ধার হওয়া কিশোর পেমা লামা (১৫) যেন এমন সজীবতারই প্রতীক। বিধ্বংসী ভূমিকম্পের প্রায় পাঁচ দিন পর উষ্কখুষ্ক ও রুক্ষ অবস্থায় তাকে যখন উদ্ধারকারীরা জীবিত খুঁজে পান, তখন উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন চারপাশের সবাই। তারা উল্লসিত হবেনই না কেন? এতদিন ধরে বীভৎস লাশ দেখতেই দেখতেই তো তারা অভ্যস্ত হয়ে উঠছিলেন। এর মাঝে এমন অলৌকিকতা যেন নেপালের মানুষের কাছে জীবনের বার্তা দেয়। উদ্ধার করার পর তাকে স্যালাইন দেয়া হয়েছে। ক্ষীণকণ্ঠে পেমা লামা পানি পান করতে চায়। সে যে ভবনে চাপা পড়েছিল, সেখানে একটি মোটরসাইকেল তাকে রক্ষা করেছে। মোটরসাইকেল থাকায় সেখানে একটু ফাঁকা জায়গা ছিল। সেখানেই আবার একদিন পৃথিবীর আলো দেখার স্বপ্ন দেখেছে সে। এ খবর দিয়েছে ডেইলি মেইল। এর আগে, ভূমিকম্পের ২২ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া চার মাসের এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এবার পাঁচদিন পর এক কিশোরকে উদ্ধারের ঘটনা যেন আরও আশার সঞ্চার করেছে মানুষের মাঝে। একে মিরাকল না বলে উপায় কি? মূলত, দুই তলার মাঝে আটকা পড়েছিলেন পেমা লামা। যুক্তরাষ্ট্রের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা ইউএসএআইডির একটি দল সেখানে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছিল। ওই দলের প্রধান অ্যান্ড্রু অলভেরা উদ্ধারের কয়েক মিনিট আগে জানিয়েছিলেন, সে খুব বেশি নিচে নেই। তবে দুটি মেঝের ফাঁকে আটকা পড়েছে সে। পুরো উদ্ধারকাজটিই বিপজ্জনক। তবে এটি অনেকটা ঝুঁকি বনাম লাভ। একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে আমরা সর্বোচ্চ ঝুঁকি নেব। গত শনিবারে শক্তিশালী প্রথম ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এরপর ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূকম্পন অনুভূত হয়। এরপর একের পর এক আফটারশকের আঘাতে নেপাল পরিণত হয় এক মৃত্যুকূপে। গতকাল সকাল পর্যন্ত সেখানে রিখটার স্কেলে ৪ মাত্রার ওপরে ১১০টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এরপর থেকে লাশের নগরীতে পরিণত হয়েছে রাজধানী কাঠমাণ্ডু, পোখারা ও আশপাশের অঞ্চল। এ পর্যন্ত ভূমিকম্পে ৬ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা বলেছেন, নিহতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধার তৎপরতা পুরোদমে চালু করা যায় নি। প্রেসিডেন্ট রাম বরণ যাদবের বাসভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। তাই তিনিও সাধারণ মানুষের মতো রাত কাটাচ্ছেন খোলা আকাশের নিচে, তাঁবুতে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছেন। আরেকটি ভূমিকম্পের ভয়ে মানুষ খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করছেন। ভূতুড়ে এ শহরকে এখন চেনার উপায় নেই যে, এটিই ছিল বিশ্বের কাছে পর্যটন নগরী বা দেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ অবসর কাটাতে, খোলা হাওয়া গায়ে লাগাতে ছুটে যান নেপালে। কিন্তু যারা আগে নেপালে গিয়েছেন, তারা এখন সেখানে গেলে চিনতেই পারবেন না। জাতিসংঘের একটি সংস্থা বলছে, ৫ লাখেরও বেশি বাড়িঘর সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষ বাড়ি ফিরতে ভয় পাচ্ছে। তাদের আশঙ্কা, ছোট একটি ভূমিকম্পও তাদের ফাটল ধরা বাড়িগুলো ধসিয়ে দিতে পারে যে কোন মুহূর্তে। জনজীবন এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। কারণ, বাজারঘাট, স্কুল সব বন্ধ রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো এখনও বন্ধ। টেলিফোন যোগাযোগ, বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থা অচল রয়েছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্ধারকর্মীরা নানা প্রতিকূলতার মুখে হতাহতদের উদ্ধারে তাদের প্রাণান্ত প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন। উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল। গতকাল পেমা লামাকে উদ্ধার করার পর উদ্ধার অভিযানে গতি এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট টিম উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এখনও ধ্বংসস্তূপের মাঝে জীবিত মানুষ রয়েছেন এ আশায় বুক বেঁধেছেন উদ্ধারকর্মীরা। অন্য সব উদ্ধার কর্মী কাঠমাণ্ডুর বিভিন্ন স্থানের ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছিলেন। ইতিমধ্যে জাতিসংঘ নেপালের জন্য বিশাল অঙ্কের একটি তহবিল গঠনের জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.