তাঁর বদলে যাওয়ার গল্প by রানা আব্বাস

বিশ্বকাপে দুর্দান্ত মাহমুদউল্লাহ। ছবি: শামসুল হক
ঘরের মাঠে গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ ও এশিয়া কাপে মাহমুদউল্লাহর নিদারুণ ব্যর্থতায় নানা প্রশ্ন শুনতে হয়েছে তখনকার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে। অন্য অধিনায়কের মতো সতীর্থ মাহমুদউল্লাহকে আগলে রাখতে চাইলে অযাচিতভাবে অনেকেই টানলেন দুজনের আত্মীয়তার সম্পর্কও! পরে ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও মাহমুদউল্লাহর দুঃসময় কাটল না। ২০১৪ সালের প্রায় পুরোটা সময়ই ব্যর্থতার চোরাবালিতে হাবুডুবু খেলেন মাহমুদউল্লাহ। নিজেকে ফিরে পাওয়ার দারুণ এক সুযোগ এল নভেম্বর-ডিসেম্বরে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে। সুযোগটা কাজে লাগালেন ২৯ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দুই ফিফটিতে করলেন ১৭৯ রান। এর মধ্যে তিনটি ইনিংসেই (৩৩, ৮২, ৫১) ছিলেন অপরাজিত। চতুর্থ ম্যাচটা তো বিপর্যয় থেকে দলকে উদ্ধার করে পেলেন ম্যাচসেরার পুরস্কারও। বিশ্বকাপ-মিশনের আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘জিম্বাবুয়ে সিরিজে আত্মবিশ্বাসটা বেড়েছে। চেষ্টা করব এটার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে দলের জন্য বড় কিছু করার।’
বিশ্বকাপে ‘বড়’ কিছুই করে দেখিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। এ বিশ্বকাপে তাঁর ইনিংস—২৩, ২৮, ৬২, ১০৩ ও ১২৮ (অপরাজিত)। মাহমুদউল্লাহর রান ক্ষুধা বেড়েই চলেছে! সব ব্যর্থতা যেন একবারেই পুষিয়ে নিচ্ছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে পেলেন সেঞ্চুরি। আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর রেকর্ড পাতায় সংযোজন হলো আরও কিছু রেকর্ড। বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে পেলেন টানা দুই সেঞ্চুরি। এক বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এখন মাহমুদউল্লাহর। পাঁচ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৩৪৪ রান। চলতি বিশ্বকাপে কুমার সাঙ্গাকারার পর মাহমুদউল্লাহ পেলেন টানা দুই সেঞ্চুরি। ওয়ানডে ইতিহাসে বাংলাদেশের পক্ষে টানা দুই সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় ব্যাটসম্যানও তিনি। ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টানা দুটি সেঞ্চুরি করেছিলেন শাহরিয়ার নাফীস।
ব্যর্থতার দিনগুলোয় ব্যাটিং পজিশনে একটু নিচেই খেলতে হয়েছে মাহমুদউল্লাহকে। কিন্তু এ বিশ্বকাপে প্রায় নিয়মিত খেলছেন ৪ নম্বরে। আর এ পজিশনেই রানের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন এ ডানহাতি। দুদিন আগে সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার এক আলাপচারিতায় বলছিলেন, ‘মাহমুদউল্লাহ এখন প্রতিটি ম্যাচে পারফর্ম করতে মুখিয়ে থাকে। এ মানসিকতার কারণেই সে এগিয়ে যাচ্ছে। মাহমুদউল্লাহর সবচেয়ে বড় গুণ, কঠিন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে খেলতে পারে।’
বিশ্বকাপের আগে মাহমুদউল্লাহ নিজেকে ফিরে পেতে শুধু পারফরম্যান্স নয়, পরিশ্রম করেছেন মেদহীন ঝরঝরে শরীর পেতেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের পর থেকেই মেদ কমিয়ে ফেলায় বেড়েছে শারীরিক ফিটনেসও। এ জন্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হয়েছে অনেক প্রিয় খাবার।
এসব বিসর্জনে কেবল শারীরিক ফিটনেসই বদলায়নি; বদলেছে মাহমুদউল্লাহর ফর্মও।

No comments

Powered by Blogger.