মার্শাল আর্ট কন্যা আকলিমা by আব্দুল কুদ্দুস

কক্সবাজার সৈকতের ঝাউবাগানে উশু প্রদর্শন করছেন আকলিমা আকতার
২০১৩ সালে ঢাকার মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় অষ্টম বাংলাদেশ সাফ গেমস। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ উশু দলের মহিলা তাওলু ইভেন্টে অংশ নিয়ে ব্রোঞ্জপদক পায় কক্সবাজারের মেয়ে আকলিমা আকতার। এরপর উশু চায়নিজ মার্শাল আর্টে তার উৎসাহ বেড়ে যায়। কঠোর পরিশ্রম করে রপ্ত করতে থাকে মার্শাল আর্ট।
২০১৪ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয় উশু প্রতিযোগিতায় মহিলাদের তাওলু ইভেন্টে স্বর্ণপদক অর্জন করে আলোচনায় আসে মার্শাল আর্ট কন্যা আকলিমা। আকলিমার বাড়ি কক্সবাজার শহরের বৈদ্যঘোনা এলাকায়। বাবা হাফেজ আহমদ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। মা পাখি আকতার গৃহিণী। আকলিমা শহরের টেকপাড়া আমেনা খাতুন উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। লেখাপড়ার পাশাপাশি আকলিমা উশু চায়নিজ মার্শাল আর্টকে পেশা হিসেবে নিতে চায়।
আকলিমা আকতার বলে, ‘একমাত্র ছোট ভাই পারভেজ মোশারফকে স্কুলে আনা-নেওয়ার সময় স্টেডিয়ামে ছেলেদের মার্শাল আর্ট, কারাতে-কুংফু প্রশিক্ষণ দেখে ভালো লাগত। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এক নজর দেখে নিতাম। মনে মনে ভাবতাম, আমিও যদি কারাতে শিখতে পারতাম, তাহলে ইভ টিজারদের পিটিয়ে শায়েস্তা করতে পারতাম।’
একদিন বাড়িতে গিয়ে মা-বাবাকে ইচ্ছার কথা জানাল আকলিমা। কিন্তু তাঁরা রাজি হলেন না। ২০১৩ সালে সুযোগটা হাতে আসে। তখন আকলিমা সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। বাবার হাত ধরে কক্সবাজার শহরের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে গিয়ে সে ভর্তি হলো উশু একাডেমিতে। উশু একাডেমির তৎকালীন সভাপতি ও উশু চায়নিজ মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষক ওস্তাদ ডি এম রোস্তম আকলিমার হাতেখড়ি দেন। তারপর ওস্তাদ ছিদ্দিকুল ইসলাম। এখন পর্যন্ত ছিদ্দিকুলের কাছে মার্শাল আর্ট শিখছে আকলিমা। আর স্টেডিয়ামে সপ্তাহে পাঁচ দিন শিশুদের মার্শাল আট শেখাচ্ছে।
কক্সবাজার উশু একাডেমির পরিচালক ও প্রশিক্ষক ছিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় অষ্টম বাংলাদেশ সাফ গেমস। কক্সবাজার থেকে ১৫ জন ছেলেমেয়ে তাতে অংশ নেয়। এর মধ্যে আকলিমা মেয়েদের তাওলু ইভেন্টে ব্রোঞ্জপদক অর্জন করে।
একই বছরের মার্চ মাসে ‘দ্য বিগ বাংলা রান’ আয়োজিত ‘কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল হাফ ম্যারাথন’ প্রতিযোগিতায় প্রায় দেড় হাজার প্রতিদ্বন্দ্বীকে পেছনে ফেলে আকলিমা পঞ্চম হয়। কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে ইনানী পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার হাফ ম্যারাথন দৌড়ের জন্য সময় নির্ধারিত ছিল তিন ঘণ্টা। আকলিমার লেগেছিল তিন ঘণ্টা ১৫ মিনিট।
এ ছাড়া আকলিমা ২০১৪ সালে বাংলাদেশ উশু অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘ন্যাশনাল উশু চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর তাওলু ইভেন্টে স্বর্ণপদক অর্জন করে কক্সবাজারবাসীর মুখ উজ্জ্বল করে। অদূর ভবিষ্যতে এই মেয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য ছিনিয়ে আনবে—এটাই সবার প্রত্যাশা।
আকলিমা বলে, নিজের সুরক্ষার জন্য মেয়েদের মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ জরুরি। মার্শাল আর্ট শরীর-মন সুস্থ ও সতেজ রাখে।
আকলিমার বাবা হাফেজ আহমদ বলেন, ‘সংসারে টানাপোড়েন থাকলেও মেয়ের ইচ্ছাকে ছোট করে দেখছি না। মার্শাল আর্টে মেয়ের উন্নতি হোক—এটাই প্রত্যাশা।’

No comments

Powered by Blogger.