সমাধান খালেদার হাতে ভ্রান্ত ধারণা -ড. এবি মীর্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম

সংকট নতুন নয়, আগেও ছিল। স্বৈরশাসক এরশাদের পতনসহ সব শেষ ২০০৬ সালেও রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এবারের সংকট সম্পূর্ণ আলাদা। জটিলতা, কাঠিন্যতা ও দীর্ঘ মেয়াদের  বিচারে এটাই মহাসংকট। স্বাধীনতার পর এত বড় সংকটে দেশ আর কখনও পড়েনি। মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. এবি মীর্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মানবজমিন এর অর্থনৈতিক রিপোর্টার হামিদ বিশ্বাস। ২০দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাতে কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা বেগম জিয়ার সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে সমস্যা সমাধানে কোন ইঙ্গিত প্রত্যাশা করেছেন তারা ভ্রান্ত ধারণার মধ্যে বসবাস করছেন। কারণ সরকার তরফে বার বার বলা হচ্ছে-আলোচনা, সংলাপ, সমঝোতা ও সব দলের অংশগ্রহণমূলক মধ্যবর্তী নির্বাচন কিছুই তারা চায় না।
তাহলে দেশ ও দেশের অর্থনীতি কোন্‌দিকে যাচ্ছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রাজধানীর রাস্তায় বের হলে মনে হবে দেশ স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক। কিন্তু প্রকৃত বিচার তা বলে না। বাঁচার তাগিদে কিছু মানুষ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে, সীমিত পরিসরে ব্যবসা-বাণিজ্য হবে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিছু পরিবহন চলবে। এটি প্রয়োজনের তুলনায় কোনভাবেই যথেষ্ট নয়। এতে মানুষের অবশিষ্ট থাকবে না। সব সময় টান এবং অভাব বিরাজ করবে। বিত্ত অধরা আর উদ্বৃত্ত মানুষের জীবনে স্বপ্ন হয়ে থাকবে। এর মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ পাঁচ সাড়ে পাঁচ হতে পারে।
তাহলে সমাধান কোন্‌ পথে? নতুন কোন পথ নেই। পথ একটাই আলোচনা। আলোচনার মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান- বহুবার বলা হয়েছে কর্ণপাত করছে না। তাহলে কিভাবে এবং কাকে আগে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আজিজুল ইসলাম বলেন, কিছু দেয়ার থাকলে সরকারই দিতে পারে। সরকারের বাইরে কারও কিছু দেয়ার আছে বলে বর্তমানে তা মনে হচ্ছে না। সে কারণে সরকারকে আগে এগিয়ে আসতে হবে। অর্থনৈতিক বিভিন্ন খাতের বাস্তবচিত্র তুলে ধরে ড. এবি মীর্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম আরও বলেন, এক্সপোর্ট গ্রোথ গত আট মাসে মাত্র আড়াই শতাংশ হয়েছে। যা আগের বছরে ছিল প্রায় ১২ শতাংশ। অর্থনীতির বড় অংশ সার্ভিস সেক্টর। এখানে পাইকারি বিক্রি নেই বললেই চলে। এছাড়া, ক্ষুদ্রাকারের বিক্রিও কমে গেছে। ব্যাংকিং খাত খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। ঋণ-আমানত সবই নিম্নমুখী। এছাড়া, প্রাইভেট সেক্টর পুরোটাই বিনিয়োগশূন্য। পরিবহন খাতের অবস্থা খুবই নাজুক। একটি বিশাল অংশ বন্ধ। যেগুলো চলছে সেগুলো যাত্রী ও পণ্যের অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। কৃষিখাতে উৎপাদন হলেও মার্কেটিংয়ে অসুবিধা হচ্ছে। উৎপাদকরা ভাল দাম পাচ্ছে না। এছাড়া এলসি, রেমিট্যান্স, রাজস্ব, ক্যাপিটাল মার্কেট, ট্যুরিজমসহ অর্থনৈতিক সব ধরনের খাতের আচরণ বিব্রতকর বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

No comments

Powered by Blogger.