সকলেই হাত ভেঙে দিতে চাইলে দেশে শান্তি ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কী? by আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

কোনো কোনো মনস্তত্ত্ববিদ বলেন, হিংসার জন্ম প্রথমে মনে। তার সংক্রমণ ঘটে জিহ্বায়। পরবর্তী পর্যায়ে তার দৈহিক প্রকাশ ঘটে। অর্থাৎ হিংসাত্মক কথাবার্তা দৈহিক আচার-আচরণে রূপান্তরিত হয়। ঝগড়া করতে করতে মানুষ একজন আরেকজনের ওপর হামলা চালায়। মানুষ যতই শিক্ষিত ও সভ্য হয়েছে, ততই হিংসা দমন করতে শিখেছে। কিন্তু কোনো কোনো জাতি বা জনগোষ্ঠী শিক্ষা ও সভ্যতার আলো পাওয়া সত্ত্বেও হিংসা ও হিংস্রতা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। আগে হিংস্র না থাকলেও পরে সুযোগ পেয়ে হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি এবং বিশেষ একশ্রেণীর রাজনীতিকের কথাবার্তা শুনলে এবং আচার-আচরণ দেখলে কোনো কোনো মনস্তত্ত্ববিদের উপরের থিয়োরিটি সঠিক মনে হয়। বিএনপি ও জামায়াত নেতারা অতীতেও হিংসাত্মক ভাষায় কথাবার্তা বলেছেন। বিএনপি হরতালের ডাক দিয়ে জামায়াতের সঙ্গে মিলে হিংসাত্মক কার্যকলাপ ঘটিয়েছে। আগামী ২৫ অক্টোবর থেকেও তারা আবার আন্দোলনের নামে দেশে অশান্তি সৃষ্টির হুমকি দিয়ে জনমনে এক ভীতিকর অস্বস্তি সৃষ্টি করেছেন।
গত এক সপ্তাহে তাদের হুমকির ভাষায় আরও হিংস্রতা প্রকাশ পাচ্ছে। দাবি আদায়ের জন্য বিএনপি ২৫ অক্টোবর সমাবেশ করতে চেয়েছে। ভালো কথা, সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু আন্দোলনের নামে আগেই দা-কুড়াল নিয়ে দলের সমর্থকদের মাঠে নামার ডাক দেয়া কেন? ডাকটি দিয়েছিলেন বিএনপির সামনের সারির এক নেতা সাদেক হোসেন খোকা। ডাকটি দিয়েই তিনি আত্মগোপন করেছেন, যুদ্ধের মাঠে আর নেই। হিংস্রতার উল্টো পিঠে যে ভীরুতা লুকিয়ে থাকে এটা তার প্রমাণ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। একজন শিক্ষিত লোক। এককালে বাম রাজনীতি করেছেন। কলেজের শিক্ষকতাও করেছেন। কিন্তু শিক্ষার আলোকে তার মন থেকে হিংসার বীজ দূর করতে পেরেছেন কি? রুহিয়ায় সদর উপজেলা বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘২৪ অক্টোবরের পর যদি আমাদের আন্দোলনের ব্যাপারে সরকার কোনো রকম বাড়াবাড়ি করে তাহলে তাদের শক্ত হাত ভেঙে দেয়া হবে।’
শুধু হাত ভেঙে দেয়া নয়, মাথা গুঁড়িয়ে দেয়া হবে, শেখ মুজিবের মতো শেখ হাসিনারও পরিণতি ঘটানো হবে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য করা হবে ইত্যাদি হিংসাত্মক কথাবার্তা বিএনপির জন্ম থেকেই তার নেতানেত্রীদের মুখ থেকে শোনা গেছে এবং তাদের দলীয় কর্মী ও ক্যাডারদের মধ্যে তার সহিংস প্রকাশও দেখা গেছে। বিএনপির হিংস্রতা শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, কাজের মধ্যেও প্রকাশিত। বিএনপি তার মিত্র জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের ডাক দিলেই গরিব রিকশাওয়ালা বা অটোরিকশা চালক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাবে। বাসচালক ও বাসযাত্রী গাড়ির ভেতরেই পুড়ে মরবে। প্রাইভেট গাড়ির মালিক নিজের গাড়িতেই গুলি খেয়ে মরবেন। দোকানপাটে ভাংচুর এবং সর্বত্র সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হবে।
অতীতে ব্রিটিশ আমলে মহাত্মা গান্ধী স্বাধীনতার জন্য বহু আন্দোলন করেছেন। সত্যাগ্রহ, অসহযোগের ডাক দিয়েছেন। হরতাল ডেকেছেন। তাতে পুলিশের গুলিতে আন্দোলনকারীরা মরেছেন। আন্দোলনকারীদের হাতে নিরীহ পথের মানুষ মারা যায়নি। একবার চৌরিচেরায় এক আন্দোলনে সামান্য হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছিল। গান্ধী সঙ্গে সঙ্গে সেই আন্দোলন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পাকিস্তান আমলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ভাষা আন্দোলন থেকে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন, স্বাধীনতার আন্দোলন ইত্যাদি বহু বিশাল বিশাল আন্দোলন হয়েছে। হরতাল-ধর্মঘট হয়েছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গুলিতে সাধারণ মানুষ ও আন্দোলনকারীরা মরেছে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের হাতে সাধারণ মানুষ মরেছে তার কোনো উদাহরণ বিরল।
এখন বিএনপি দা-কুড়াল নিয়ে আন্দোলনের ডাক দিচ্ছে। অতীতে একবার আওয়ামী লীগ ডাক দিয়েছিল লগি-বৈঠা নিয়ে মাঠে নামার। দুটোতেই গণতান্ত্রিক রাজনীতির সহিষ্ণুতা নয়, অগণতান্ত্রিক রাজনীতির অসহিষ্ণুতা ও হিংস্রতার প্রকাশ ঘটেছে। হানাদার সশস্ত্র পাকিস্তান বাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে ‘যার যাহা আছে তা নিয়ে যুদ্ধে নামা যায়’ কিন্তু নিজ দেশের নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস সৃষ্টি কি গণতন্ত্রসম্মত পন্থা?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমনভাবে সন্ত্রাস যুক্ত হওয়ার কারণ হিসেবে কেউ কেউ একটি কথা বলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল (বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াত) নিজেদের কথাবার্তা দ্বারা রাজনীতিতে যে বাক্য সন্ত্রাস সৃষ্টি করে, তা তাদের ছাত্র ও যুব ক্যাডারদের প্রভাবিত করে। তারা যদি বলেন, হাত গুঁড়িয়ে দেব, তাহলে তাদের ক্যাডার ও সমর্থকরা প্রতিপক্ষের হাত-পা দুই-ই গুঁড়িয়ে দেয়। আন্দোলনের অর্থই তাদের কাছে সন্ত্রাস। এটাই নেতারা তাদের যুব ও ছাত্র কর্মীদের শিখিয়েছেন। সুতরাং তারা আন্দোলনের ডাক শুনলেই সমর্থন লাভের জন্য জনসাধারণের কাছে যায় না। তাদের গাড়ি-বাড়ি-দোকানপাটে আগুন লাগিয়ে, হাটে-মাঠে-বাজারে বোমা ফাটিয়ে তাদের ভয় দেখায়। নির্যাতন করে।
জামায়াত ও শিবিরের ক্যাডারদের তো রাজনৈতিক গণআন্দোলনের ভাষা ও আচরণ শেখানো হয়নি। তাদের শেখানো হয়েছে রগকাটা, শিরা কাটা, প্রতিপক্ষের কাউকে পঙ্গু করে দেয়া, রাস্তাঘাটে নিরীহ মানুষ, গাড়ি ও বাসের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালানো ইত্যাদি। সত্তরের দশকের এক জামায়াত কর্মী (তখন তরুণ ছিলেন) পরে জামায়াত ছেড়ে দিয়ে স্বীকারোক্তি করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় রায়েরবাজারসহ বুদ্ধিজীবী হত্যার যেসব বধ্যভূমি ছিল, তাতে তারা রগ কাটা, হাত কাটা, চোখ উপড়ানো ইত্যাদি নৃশংস কাজে ট্রেনিং লাভ করেছে।
হিংসা নতুনভাবে হিংসার জন্ম দেয়, তার সংক্রমণ ঘটায়। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনগুলোতেও এখন দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের প্রবল সংক্রমণ ঘটেছে। রাজনীতিতে হিংসার সংক্রমণের মেরুকরণ থেকে তারাও মুক্ত থাকতে পারেনি। কালো টাকা যেমন সাদা টাকাকে বাজার থেকে হটিয়ে দেয়, তেমনি অশুভ রাজনীতিও শুভ রাজনীতিকে হটায়। কেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেননি, ‘আমি রাজনীতিকদের জন্য রাজনীতি করা দুঃসাধ্য করে দেব?’ (I will make politics difficult for politicians)। কথাটা কি তিনি কার্যকর করে যাননি? এখন বাংলাদেশে প্রকৃত রাজনীতিকদের জন্য রাজনীতি করা সত্যই দুঃসাধ্য। তাছাড়া কারা প্রকৃত রাজনীতিক এবং কারা নকল রাজনীতিক তাও এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাছাই করা কষ্টকর।
আমি এক রাজনৈতিক নেতাকে বলেছি, কেবল দেশের বড় ছাত্র সংগঠন ও যুব সংগঠনগুলোকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের জন্য দায়ী করবেন না। আগে আপনারা বড় বড় রাজনৈতিক দলের নেতারা নিজেরা বাক্য সন্ত্রাস বা বক্তৃতা সন্ত্রাস বন্ধ করুন। নিজেদের দুর্নীতি বন্ধ করুন। দলের ছাত্র ও যুবক ক্যাডারদের নিজেদের অশুভ রাজনৈতিক স্বার্থ ও উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য লেবেল হিসেবে ব্যবহার করা বন্ধ করুন। নিজেদের আদর্শ রাজনীতির মডেল হিসেবে তরুণ প্রজন্মর কাছে তুলে ধরুন। তাহলেই দেখবেন দেশের ছাত্র ও যুব রাজনীতির অর্ধেকের বেশি গলদ দূর হয়ে গেছে। আমার একটি ধারণা, দেশের উচ্চশিক্ষার পীঠস্থান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যন্ত এখন যে এত সন্ত্রাস, রক্তপাত, হিংস্র হানাহানি, তার অর্ধেকের বেশি হ্রাস পাবে, যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ্রেণীর শিক্ষক আদর্শ শিক্ষক হন এবং ছাত্রদের নিজেদের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থে বিভক্ত ও ব্যবহার করা থেকে বিরত হন।
আগে ছাত্র ও যুব সমাজের কাছে রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতার আদর্শ পুরুষ ছিলেন গান্ধী, জিন্না, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, সুভাষ বসু, কমরেড মুজাফফর আহমদ, ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিব প্রমুখ। তারা কেউ বাক্য সন্ত্রাসী ছিলেন না। সন্ত্রাসের রাজনীতিও করেননি। গান্ধী ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে এত আন্দোলন করেছেন, তাদের হাতে এত নির্যাতন সহ্য করেছেন, তবু বারবার বলেছেন কুইট ইন্ডিয়া, ভারত ছাড়। ব্রিটিশ শাসকদের হাত বা নাক গুঁড়িয়ে দেবেন এমন কথা একবারও বলেননি।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে এখন আমাদের তরুণ প্রজন্মর কাছে রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতার আদর্শ চরিত্র কারা? কার্টেসির খাতিরে শীর্ষ পর্যায়ের দু’একটি নাম বাদ দিলেও বড় দলগুলোর বড় নামগুলোর তালিকা তৈরি করুন। দেশের তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার মতো ক’টি নাম খুঁজে পাবেন? এখন আর ডান ও বাম বিচার করে লাভ নেই। বাক্য সন্ত্রাস, সন্ত্রাসী কাজকর্ম ও দুর্নীতির গন্ধমুক্ত রাজনৈতিক নেতা নেই বলব না। আছেন, তবে তারা কোণঠাসা। বাজার এখন জমাট করে রেখেছেন মির্জা ফখরুলের মতো নেতারা। অবশ্যই তিনি বিএনপির ‘আদর্শ নেতা’। তার আগের এবং সমসাময়িক অধিকাংশ বিএনপি নেতানেত্রীই কথায় ও কাজে সন্ত্রাস ছড়িয়েছেন ও ছড়ান। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধী হিসেবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
লিখেছি, গত গোটা সপ্তাহটিই কেবল বিএনপি-জামায়াত শিবির থেকে ‘দা-কুড়াল নিয়ে রণযাত্রা’, ‘শক্ত হাত ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব’ ইত্যাদি সন্ত্রাসী গর্জন শুনেছি। ২৫ অক্টোবর এই গর্জন আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে রূপান্তর হবে কিনা তা জানি না। সরকার অবশ্য এই হুমকির মুখে ঢাকা শহরে গতকাল (রবিবার) থেকে সব ধরনের জনসমাবেশ, সভা, মিছিল নিষিদ্ধ করে নিজেরাও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তাতে সরকার বিএনপির ফাঁদেই পা দিল কিনা তা বলতে পারব না। অর্থাৎ হিংসা ঠেকাতে গিয়ে সরকার নিজেই হিংসা ও সংঘাত সৃষ্টির দিকে প্রতিপক্ষকে ঠেলে দিল।
আমাদের দেশের রাজনীতিতে হিংসার কতটা প্রাবল্য ঘটেছে এবং দেশের মেধা ও মনীষাও তার দ্বারা কতটা আক্রান্ত তার একটা উদাহরণ দেই। সম্প্রতি অর্ধ নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রামে এক নারী সমাবেশে বক্তৃতা দিয়েছেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংক সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়ায় সরকারের ওপর খুবই ক্ষুব্ধ এবং এ সম্পর্কে কিছু ক্ষুব্ধ কথাবার্তাও বলেছেন। তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে ফখর মির্জাদের মতো হিংসাত্মক ভাষায় তিনি কথা বলবেন, তা ছিল আমার কাছে অকল্পনীয়। তিনি তার বক্তৃতায় সরকারকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের দিকে হাত বাড়ালে সেই হাত ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হবে।’
একজন নোবেলজয়ী, তাও, যিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তার মুখে এই হিংসাত্মক কথা, অশান্তি সৃষ্টির হুমকি আদৌ মানায় কি? সরকার কর্তৃক গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ ভালো কী মন্দ সেই বিতর্কে আমি এখন যাচ্ছি না। তবে এই সরকারি হস্তক্ষেপ যে অবৈধ নয়, সেই রায় দেশের শীর্ষ আদালত দিয়েছেন। ড. ইউনূস হাত ভাঙতে চান কার? সরকার এবং দেশের সুপ্রিমকোর্ট, উভয়েরই কি?
এই হিংসাত্মক হুমকি একজন নোবেলজয়ীর (তাও আবার শান্তিতে) মুখে মানায়নি। তিনি দেশের সরকার, আইন-আদালত না মানুন, গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে তার তো হিংসাত্মক কার্যক্রম গ্রহণের দরকার নেই। তার পেছনে এ ব্যাপারে একটি সুপার পাওয়ার থেকে অধিকাংশ পশ্চিমা দেশ ও সংস্থা রয়েছে। বিএনপির অঙ্গীকার তারা আগামী নির্বাচনে জয়ী হলে গ্রামীণ ব্যাংকে ড. ইউনূসের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা পাবে। এ অবস্থায় সারা বিশ্বে নন্দিত ও বন্দিত তার মতো ব্যক্তিত্ব কেন হাত ভাঙাভাঙির মতো নিচুস্তরের রাজনীতিতে নামতে যাবেন? নিজেকে খাটো করবেন?
এসব দেখেশুনেই মনে হয়, কোনো কোনো মনস্তাত্ত্বিকের এই থিয়োরিটি সঠিক, হিংসার জন্ম প্রথমে মনে। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে পরে বাক্যে ও কার্যক্রমে। এটা তখন আর ঠেকিয়ে রাখা যায় না। ড. ইউনূসের মতো ‘বিশ্ব নন্দিত’ মানুষটিও পারেননি। এই হিংসাত্মক বাক্য ও আচরণ থেকে মুক্ত না হলে বাংলাদেশের রাজনীতি কখনও সন্ত্রাসমুক্ত হবে না; শান্তি ফিরে আসবে না, গণতন্ত্র টেকসই হবে না। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের সামনে হিংসামুক্ত গণতান্ত্রিক রাজনীতির আদর্শ চরিত্র তুলে ধরা যাবে না।
দেশের দুটি বড় রাজনৈতিক দলই এ সম্পর্কে সতর্ক হোন, বাক্যে ও আচরণে সংযত হোন। বিএনপি দাবি আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ ও প্রকৃত গণআন্দোলনে নামুন। অহিংস অসহযোগ ও প্রতিরোধ দ্বারা সরকারের দমননীতি ঠেকান। কিন্তু দোহাই আল্লাহর, ২৫ অক্টোবর থেকে জনজীবনে উপদ্রব সৃষ্টিকারী হিংসা ও অশান্তির আগুন জ্বেলে দেবেন না। জ্বালালে সেই আগুনে আপনারাই প্রথমে পুড়ে মরবেন।

No comments

Powered by Blogger.