দুই ইস্যুতে আটকে যাচ্ছে সমঝোতা by মহিউদ্দিন মাহমুদ

অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটের মধ্যে দুটি প্রধান ইস্যুতে মতবিরোধ থাকছে। জামায়াতে ইসলামের প্রতিনিধি এই সরকারে থাকবে কিনা এবং এই সরকারের প্রধান কে হবেন তা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র অবস্থান দুই মেরুতে।
 
এতে আওয়ামী লীগ যেমন ছাড় দেবে না তেমনি বিএনপিও মেনে নেবে না। অথচ দরকষাকষিও হলে তা হবে  এই দুই ইস্যুতে। 

আশঙ্কা করা হচ্ছে,  শুধু এই দুই ইস্যুর কারণে ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে সমঝোতার সব উদ্যোগ। উভয় পক্ষের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাসই পাওয়া গেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রীসভায় কোন দলের কতজন সদস্য থাকবেন? এই অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা কি হবে? এ সরকারের হাতে কি কি নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে তা আলোচনা করে ছাড়ের মানসিকতা নিয়ে এগোলেই কেবল মীমাংসা সম্ভব বলে মনে করছেন এই নেতারা। তবে আলোচনা আটকে যাবে জামায়াত ও সরকার প্রধানের পদ ইস্যুতে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই চায় দলটি। এ বিষয়ে তারা কোনো ছাড় দেবে না।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন প্রধানমন্ত্রীর উপর রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি নির্ভর করে। তাই যে কাউকে প্রধানমন্ত্রী বানানো যাবে না। তাছাড়া সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। আর জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি এই সরকারে রাখার ধারণা  কোনোভাবেই মেনে নেবে না আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলেছেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকলে সেই সরকারে বিএনপি প্রতিনিধি পাঠাবে না।

রোববার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া পেশাজীবীদের একটি অনুষ্ঠানে সেকথাই দৃঢ়ভাবে উচ্চারণ করেছেন। বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, বিচারপতি কেএম হাসানের অধীনে আপনারা নির্বাচনে যান নি। আমরা কেন আপনার অধীনে নির্বাচনে যাবো?

এর আগে শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বসহ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে বৈঠকসূত্র। অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়টি মেনে নেওয়া হলেও এর প্রধান হিসেবে একজন নির্দল ব্যক্তিকেই থাকতে হবে বলে বৈঠকে মত দেওয়া হয়েছে।

সোমবার খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন থেকে এমন প্রস্তাবই দিতে পারেন বলে দলটি শীর্ষ স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে। সব দলের সংসদ সদস্যদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রীসভা গঠনের প্রস্তাবটি মেনে নেবেন তারা। তাতে জামায়াতের সদস্য রাখার পক্ষেই অবস্থান নেবে বিএনপি। তবে খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের আগে এ নিয়ে বিশদভাবে মুখ খুলতে নারাজ এসব বিএনপি নেতা।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আগামীকাল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সন তার বক্তব্যে সব পরিষ্কার করবেন। এ বিষয়ে এত তাড়াহুড়া করার কিছু নেই। একটু ধৈয্য ধরুন।

আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বাংলানিউজের সঙ্গে বলেন, সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদের ৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী অনির্বাচিত ব্যক্তির হাতে একদিনের জন্যও ক্ষমতা দেওয়া যাবে না। সুতরাং একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্যকেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বানাতে হবে। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা তো কোনো না কোন দলের। তাহলে নিদর্ল ব্যক্তি পাবো কোথায়?,-- প্রশ্ন তাদের।

নেতারা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সংসদে আসন সংখ্যার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীই হবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। এখন বিএনপি যদি খালেদা জিয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে রাখার দাবি করেন তবে আমরা সেটা মেনে নেবো না।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এখানে অযোগ্য কাউকে বসানো জনগণের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ৫ বছর অত্যন্ত সফল ও সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনা করেছেন। তাছাড়া সংবিধান অনুযায়ী এক দিনের জন্যও অনির্বাচিত কারো হাতে ক্ষমতা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে আশা করবো।

তবে আলোচনার মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন মাহবুব আলম হানিফ।

প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে অস্পষ্টতা রয়েছে বিভিন্ন দলের ----এমন অভিযোগের জবাবে হানিফ বলেন, সব কথা প্রধানমন্ত্রী তার প্রস্তাবে বলে দিলে আলোচনা করা হবে কি নিয়ে? এখন বিরোধী দল প্রস্তাব দিলে সব দল মিলে এক সঙ্গে বসে সমঝোতায় পৌছানো যাবে।

অপর বিভেদটি থাকবে জামায়াত ইস্যুতে। জামায়াত ইসলামী অন্তবর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রী সভায় থাকতে চাইবে। সেক্ষেত্রে ১৮ দলীয় জোটের প্রধান শরিক হিসেবে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রীসভায় জামায়াতের সংসদ সদস্যের নাম প্রস্তাব করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। জোট রক্ষার স্বার্থেই তারা সেটা করবে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগসহ মহাজোট সরকারের শরিকদের অবস্থান থাকবে জামায়াত যাতে কোনোভাবেই এই অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ না হয়। ফলে সমঝোতার পথে সংকট অনিবার্য।

বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারে জামায়াতের সংসদ সদস্যের নাম প্রস্তাব করলে ১৪ দলের অবস্থান কি হবে? এই প্রশ্নের জবাবে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করে আসছি। আমরা জামায়াতকে অন্তর্বর্তী সরকারে রাখার বিষয়টি মেনে নেবো না।

No comments

Powered by Blogger.