ক্যামেরন বললেন সন্ত্রাসীহামলা

লন্ডনে দুই হামলাকারীর হাতে সেনাসদস্য নিহত হওয়ার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন গতকাল বৃহস্পতিবার গোয়েন্দা ও নিরাপত্তাপ্রধানদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি সন্ত্রাসবাদী হামলা। গত বুধবার দুপুরে দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের উলউইচে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। দুই সন্দেহভাজন মুসলিম হামলাকারী ধারালো অস্ত্র দিয়ে এক সেনাসদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করেন। পরে পুলিশের গুলিতে হামলাকারীরাও আহত হন। সশস্ত্র পাহারায় হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসা চলছে। ঘটনাস্থলের অদূরেই রয়্যাল আর্টিলারি বিভাগের ব্যারাক। হামলাকারীদের পরিচয়ের ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, কর্তৃপক্ষ নাইজেরিয়ার সম্ভাব্য সূত্র ধরে তদন্ত করছে। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তির ব্যাপারেও কোনো স্পষ্ট তথ্য জানানো হয়নি। তবে তাঁর গায়ে ‘হেল্প ফর হিরোজ’ লেখাসংবলিত টি-শার্ট ছিল। ‘হেল্প ফর হিরোজ’ যুক্তরাজ্যের যুদ্ধাহত সেনাসদস্যদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত একটি দাতব্য সংগঠন। একজন প্রত্যক্ষদর্শী হামলার ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দী করেছেন। সেটি যুক্তরাজ্যের সংবাদভিত্তিক চ্যানেল আইটিভির হাতে পৌঁছেছে। তাতে দেখা গেছে, জ্যাকেট ও জিনস পরিহিত রক্তমাখা হাতের এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য যুক্তরাজ্যের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ নিচ্ছেন। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী ওই যুবক স্থানীয় উচ্চারণের ভঙ্গিতে বলেন, ‘আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে শপথ নিচ্ছি, তোমাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই কখনোই থামবে না। আমাদের এই কাজের একটাই কারণ—প্রতিদিন মুসলমানরা মরছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা যত দিন লড়বে, আমরাও তত দিন লড়াই করব। চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত নেব।’ ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, দ্বিতীয় হামলাকারী বলছেন, ‘এ ঘটনা যেসব নারী দেখেছে, তাদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু তোমরা কখনোই নিরাপদ নও। তোমরা তোমাদের সরকারকে উৎখাত করো। তারা তোমাদের কথা ভাবছে না।’ হামলার ঘটনা শুনেই প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন তাঁর ফ্রান্স সফর সংক্ষিপ্ত করে লন্ডনে ফেরেন। লন্ডনে পৌঁছে গোয়েন্দাপ্রধান ও অন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন তিনি। এতে যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-ফাইভ ও স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের প্রধান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টেরেসা মে ও লন্ডনের মেয়র বরিস জনসন যোগ দেন। লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা শুরুর আগে প্যারিসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন ক্যামেরন। এ সময় তিনি এ ঘটনাকে ‘খুবই দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেন। ক্যামেরন বলেন, ‘পুলিশ জরুরি ভিত্তিতে ঘটনাটি তদন্ত করছে। কিন্তু এটি যে সন্ত্রাসবাদী হামলা, সে ব্যাপারে জোরালো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।’ যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংগঠন মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ‘এটা সত্যিই বর্বরোচিত। ইসলামে এর কোনো ভিত্তি নেই।’ সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা অকুণ্ঠভাবে এ ঘটনার নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে নিহত ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনা করি এবং তাঁর স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানাই।’ সেনা হত্যার জেরে বুধবার রাতে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি মসজিদে হামলার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এ সময় এসেক্স ও কেন্ট থেকে দুজনকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া লন্ডনের রাস্তায় বিক্ষোভ হয়েছে। উগ্র জাতীয়তাবাদী সংগঠন ইংলিশ ডিফেন্স লিগের প্রায় আড়াই শ ক্ষুব্ধ সমর্থক ব্রিটিশ জাতীয় পতাকা হাতে বিক্ষোভ করে। দাঙ্গা পুলিশ তাদের ঘিরে রাখে। লন্ডনের সব সেনা ঘাঁটিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র প্যাট্রিক ভেনট্রেল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এ রকম মূঢ়োচিত সহিংসতার সময় আমরা আমাদের মিত্রদের পাশে থাকব।

No comments

Powered by Blogger.