অতি দারিদ্র্য সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে চাই পদ্ধতিগত পরিবর্তন

শুধু খাদ্যগ্রহণের ওপর ভিত্তি করে অতি দরিদ্রদের চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। এ জন্য নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনায় আনতে হবে। আর দারিদ্র্যাবস্থা নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসূচকও বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
গতকাল সোমবার বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক আয়োজিত ‘বাংলাদেশে অতি দারিদ্র্য নিরসন: জাতীয় কৌশল ও কার্যক্রম’ শীর্ষক সেমিনারে এ অভিমত প্রকাশ করা হয়।
সেমিনারের বিশেষ বক্তা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান এ বিষয়গুলোতে আলোকপাত করেন। তাঁর সঙ্গে অন্য বক্তারা খাদ্যগ্রহণের পাশাপাশি অন্য সূচকগুলো বিবেচনায় এনে অতি দরিদ্রদের চিহ্নিত করার পরামর্শ দেন।
রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষক নাঈমা কাইয়ুম ও মৃণ্ময় সমাদ্দার।
সেমিনারে অতি দরিদ্রদের চিহ্নিত করার বর্তমান পদ্ধতির সমালোচনা করে আকবর আলি খান বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ক্যালরি গ্রহণ ও মৌলিক খাদ্যগ্রহণের ব্যয়—এই দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করে অতি দরিদ্রদের চিহ্নিত করে থাকে। কিন্তু অতি দরিদ্রের কোনোটা মৌসুমভিত্তিক, আবার কোনোটা পরিবেশ বিপর্যয়ভিত্তিক। তাই অতি দরিদ্রদের বুঝতে প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তন আনা উচিত।
আকবর আলি খান অতি দরিদ্র চিহ্নিত করতে জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনায় আনার পরামর্শ দেন। বলেন, দারিদ্র্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অনেক কিছু লুকিয়ে থাকে, যেটা সাধারণ প্রচলিত পদ্ধতিতে তুলে আনা যায় না। তাই অতি দরিদ্রদের নৃতাত্ত্বিক গবেষণা হওয়া উচিত।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, কেননা ভালো খাবার খেলেও স্বাস্থ্যসুবিধা না থাকলে দারিদ্র্যাবস্থার উন্নতি হবে না। তাই দারিদ্র্য নির্ধারণে স্বাস্থ্যসূচকটি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা আরও বলেন, নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাতে চান। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সব সমাজে কিছু দরিদ্র লোক থাকবেই। তিনি আরও বলেন, দারিদ্র্য নিরসনে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো প্রশাসনের সব কার্যক্রমই কেন্দ্রীভূত, এটা বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
মাহবুব হোসেন বলেন, দারিদ্র্যের সংজ্ঞা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এই মতভেদ দূর করা উচিত। তাঁর মতে, প্রবৃদ্ধিনির্ভর দারিদ্র্য নিরসন প্রকল্প হাতে নেওয়া উচিত। কেননা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় যেসব সুবিধা দেওয়া হয়, তা মূলত এক ধরনের ত্রাণ। এটা টেকসই উপায় হতে পারে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সরদার আমিনুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে এখন অনেকে দারিদ্র্য হচ্ছে। সম্পদ হস্তান্তর করে দারিদ্র্যাবস্থার উন্নতির করতে হবে।
সনাতনী উপায়গুলো প্রাধান্য দিয়ে দারিদ্র্য নিরসনের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের চেয়ারম্যান আলীম উল্লাহ মিয়ান।
অন্যদিকে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (এআইইউবি) শিক্ষক আহমেদ মিয়া বলেন, সম্পদের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠার উপায়ে দারিদ্র্য নিরসন করা সম্ভব। তাঁর মতে, স্বাধীনতার পর থেকে খাদ্য উ ৎ পাদন তিন গুণ বেড়েছে, আর জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। কিন্তু এখনো সবাই পর্যাপ্ত খাদ্য নিতে পারে না।
সেমিনারে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার অতি দারিদ্র্যবিষয়ক প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরা হয়। বলা হয়, ২০১০ সালে অতি দারিদ্র্য বিষয়ে প্রথম আলো ১৯১টি, যুগান্তর ২০৯টি, দ্য ডেইলি স্টার ১৩০টি ও দ্য ইনডিপেনডেন্ট ১৩২টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এ সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্যের দাতা সংস্থা ডিএফআইডির উপদেষ্টা আরিফুর রহমান, নয়া দিগন্ত পত্রিকার বার্তা সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী, ব্র্যাকের পরিচালক শীপা হাফিজা, ডব্লিউএমএইচ জেইম প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.