আসাদকে সরে দাঁড়াতে বললেন বিশ্বনেতারা

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা আসাদকে এই আহ্বান জানান। এদিকে আসাদ বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ করা হয়েছে। গত বুধবার তিনি জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনকে এ কথা বলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গতকাল বৃহস্পতিবার এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, ‘সময় এসেছে প্রেসিডেন্ট আসাদের ক্ষমতা ছাড়ার। সিরিয়ার ভবিষ্যৎ দেশটির জনগণই নির্ধারণ করবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট আসাদ তাদের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। তিনি একদিকে নিজ দেশের জনগণের ওপর হত্যা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের খড়্গ চালাচ্ছেন, অন্যদিকে সংলাপ ও রাজনৈতিক সংস্কারের কথা বলে বেড়াচ্ছেন।’ ওবামা বলেন, ‘আমরা অব্যাহতভাবে তাঁকে (আসাদ) হয় দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সংস্কার, নয়তো ক্ষমতা ছাড়ার জন্য বলে আসছি। তাতে তিনি কর্ণপাত করছেন না। জনগণের কল্যাণেই তাঁকে চলে যেতে হবে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈদেশিক নীতিবিষয়ক প্রধান ক্যাথরিন অ্যাসটন গতকাল বলেছেন, তাঁরা প্রত্যক্ষ করেছেন, সিরিয়ার জনগণের দৃষ্টিতে প্রেসিডেন্ট আসাদ ক্ষমতায় থাকার বৈধতা হারিয়েছেন।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, জনগণের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠাসহ সিরিয়ার বৃহত্তর কল্যাণে প্রেসিডেন্ট আসাদকে সরে দাঁড়ানো উচিত।
অন্যদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের তদন্তকারীরা সিরিয়ায় সরকারি বাহিনীর নির্যাতনকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, কাউন্সিলকে বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে উত্থাপন করা উচিত।
গত বুধবার বাশার আল আসাদ জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনকে বলেন, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ হয়েছে। তবে সিরিয়ার রেভল্যুশন কো-অর্ডিনেটিং ইউনিয়ন দাবি করেছে, গত বুধবার রাতেও সামরিক বাহিনীর অভিযানে বিভিন্ন স্থানে ২৪ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘের উপমুখপাত্র ফারহান হক এক বিবৃতিতে জানান, বান কি মুন প্রেসিডেন্ট আসাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এ সময় মহাসচিব মুন যত দ্রুত সম্ভব বিক্ষোভকারীদের প্রতি সব ধরনের সামরিক অভিযান ও গ্রেপ্তার-তৎপরতা বন্ধে আসাদের প্রতি আহ্বান জানান।
ফারহান হক জানান, সিরিয়াজুড়ে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন বান কি মুন। বিশেষত লাতাকিয়া এলাকার পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। লাতাকিয়ায় সেনা অভিযানের কারণে সেখানে শরণার্থী শিবিরে থাকা কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
জাতিসংঘের উপমুখপাত্র জানান, বান কি মুন মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণগ্রেপ্তার বন্ধের ওপর জোর দিলে প্রেসিডেন্ট বাশার বলেন, সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর অভিযান বন্ধ করা হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট বাশারের এ দাবির ব্যাপারে জাতিসংঘ বা কোনো মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। ফারহান হক আরও জানান, বান কি মুন সব হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার ঘটনা তদন্ত এবং গণমাধ্যমের অবাধ প্রবেশের দাবি জানান। একই সঙ্গে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে তদন্তের সময় সংস্থার মানবাধিকার কমিশনারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রেসিডেন্ট বাশারের প্রতি আহ্বান জানান। প্রেসিডেন্ট বাশার জাতিসংঘের তদন্ত দলকে সহায়তার আশ্বাস দেন।
হোমস শহরের স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে তারাবির নামাজের পর দুই বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া হামা ও রাজধানী দামেস্কে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালিয়েছে। দেশজুড়ে শুধু বুধবারই ২৪ জন নিহত হয়।
দামেস্কে নিযুক্ত একজন পশ্চিমা কূটনীতিক জানান, প্রেসিডেন্ট আসাদ তুরস্ককে আশ্বস্ত করতে চাইছেন যে তিনি অভিযান বন্ধ করেছেন। এতে করে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে তাঁর ওপর পদত্যাগের চাপ কমে যাবে বলে ধারণা প্রেসিডেন্ট বাশারের; কিন্তু তিনি অভিযান বন্ধ করেননি।
হামা ও ডের আল জোর এলাকার স্থানীয় লোকজন জানান, এই এলাকা থেকে সামরিক বাহিনী তুলে নেওয়া হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে; কিন্তু বাস্তবতা হলো, এসব এলাকায় এখনো সামরিক ইউনিট আছে এবং তারা অভিযানেও অংশ নিচ্ছে।
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান নভি পিল্লাইয়ের গতকাল বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্যরাষ্ট্র নিয়ে রুদ্ধদ্বার অধিবেশনে বক্তৃতা করার কথা। তিনি সিরিয়া বিষয়েই কথা বলবেন বলে জানা গেছে।
সিরিয়ায় মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে রাজনৈতিক সংস্কারসহ বিভিন্ন দাবিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে এ পর্যন্ত অন্তত দুই হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.