বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনী কিছুটা ভুল করেছিল

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ স্বীকার করেছেন, বিক্ষোভ দমনের সময় নিরাপত্তা বাহিনী ‘কিছুটা ভুল’ করেছিল। সিরিয়া সফররত ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার (আইবিএসএ) একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি এ কথা স্বীকার করেন। একই সঙ্গে প্রতিনিধিদলকে তিনি আশ্বস্ত করেছেন, সংস্কারের বিষয়ে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আইবিএসএ প্রতিনিধিদলে আছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সংস্থাবিষয়ক অতিরিক্ত সচিব দিলীপ সিনহা, দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতাবিষয়ক উপমন্ত্রী ইব্রাহিম ইব্রাহিম ও ব্রাজিলের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি পাওলো কোরডেইরো। সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি ও সংকট সমাধানের বিষয়ে আলোচনার জন্য তাঁরা দামেস্ক গেছেন।
প্রেসিডেন্ট আসাদের সঙ্গে প্রতিনিধিদলের বৈঠকের পর ভারতের জাতিসংঘ মিশন থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট আসাদ স্বীকার করেছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে বিক্ষোভ দমনের সময় নিরাপত্তা বাহিনী কিছুটা ভুল করেছিল। তবে এর পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ আল-মুয়াইলাম জানিয়েছেন, চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া এ বছরের মধ্যেই সিরিয়ায় বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু হবে বলে তিনি জোর দিয়ে জানান।
ভারতীয় মিশনের বিবৃতিতে বলা হয়, বহুদলীয় গণতন্ত্র চালুর লক্ষ্যে সংস্কারের বিষয়ে প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট আসাদ। এ লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনও করা হবে।
প্রেসিডেন্ট আসাদ বলেন, ‘দেশের মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন আইনকানুন এবং দেশের অর্থনীতির নতুন রূপরেখা কী হবে, তা নিয়ে সংলাপ অব্যাহত থাকবে।’ এ ছাড়া আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি সম্পন্ন করা হবে বলে জানান প্রেসিডেন্ট আসাদ।
সাম্প্রতিক বিক্ষোভের কারণ এবং তা মোকাবিলা করতে সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা প্রতিনিধিদলের কাছে তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুয়াইলাম। প্রতিনিধিদল বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং সব ধরনের সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা জানায়। তবে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার বিষয়ে পূর্ণ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে প্রতিনিধিদল।
নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত পাঁচ: এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার আরও দুই শহরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে সিরিয়ার সেনাবাহিনী। তুরস্ক সীমান্তবর্তী ইদলিব প্রদেশের সারাকিব শহরে গতকাল খুব সকালে ট্যাংক নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায় সেনাসদস্যরা।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এক বিবৃতিতে জানায়, ‘সারাকিব শহরে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। সেখানে সরকার উৎখাতের দাবিতে প্রতিদিন বিক্ষোভ করছে লোকজন।’
সংস্থাটি পরে জানায়, সেনাসদস্যরা শহরের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে। শতাধিক মানুষকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া সারাকিব শহরের দক্ষিণে হোমস প্রদেশের কুসায়ার শহরে গতকাল সকালে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে পাঁচজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
নিষেধাজ্ঞা: সিরিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক ব্যাংক ‘দ্য কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিরিয়া’ এবং মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সিরিয়াটেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সিরিয়া সরকার বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন অব্যাহত রাখায় এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

No comments

Powered by Blogger.