ইতিহাস ডাকছে উরুগুয়েকে

দুটি দেশ আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়েকে বিভক্ত করেছে রিভার প্লেট নদী। কিন্তু প্রসঙ্গ যখন ফুটবল, এই নৈকট্য ছাপিয়ে প্রতিবেশী দেশ দুটির অবস্থান বিপরীত মেরুতে। দুই দেশের শতবর্ষীয় ফুটবল দ্বৈরথে একই সঙ্গে সুপ্ত মর্যাদা ও তিক্ততা। উরুগুইয়ানদের প্রতি আর্জেন্টাইনদের তিক্ততা নিশ্চিত করেই আরেকটু বাড়ল।
উরুগুয়ের কাছেই কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে কোপার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়াটা অবশ্যই একটা কারণ। আরেকটা কারণ উরুগুয়ে তৈরি করল গতকাল। প্রথম সেমিফাইনালে পেরুকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে উরুগুয়ে। রেকর্ড ১৫তম শিরোপা থেকে মাত্রই এক ধাপ দূরে তারা। কোপার সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের তালিকা থেকে আর্জেন্টিনাকে ছেঁটে ফেলার সুযোগ উরুগুয়ের সামনে।
কোয়ার্টার ফাইনালের ‘ভূমিকম্প’ সেমিফাইনালেও অব্যাহত থাকে কি না, এ নিয়ে কৌতূহল ছিল। কিন্তু পেরুর বিপক্ষে কোনো অঘটন ঘটতে দেয়নি ফোরলান-সুয়ারেজের দল। সুয়ারেজ অবশেষে জ্বললেন আসল সময়ে। দুটি গোলই করেছেন লিভারপুলের এই স্ট্রাইকার। মাত্র ৫ মিনিটের ব্যবধানে। এই দুই গোলসহ তিন গোল নিয়ে সুয়ারেজ আর্জেন্টিনার সার্জিও আগুয়েরোর সঙ্গে যৌথভাবে বসলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে।
শুরুটা অবশ্য ভালো করেছিল পেরুই। কিন্তু ফোরলানের নেতৃত্বে দ্রুতই ম্যাচে ফেরে উরুগুয়ে। প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে ফোরলানের ফ্রি-কিক থেকে পেরেইরা জালে বলও ঢুকিয়েছিলেন, কিন্তু অফসাইডের কারণে সেটি গোল হয়নি।
ম্যাচটা প্রথম গোল দেখে ৫২ মিনিটে। ৩৫ গজ দূর থেকে ফোরলানের বাঁ পায়ের দূরপাল্লার শট পেরুর গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়ে হাত লাগাতে পারলেও আটকাতে পারেননি। সুযোগসন্ধানী সুয়ারেজ দুরূহ কোণ থেকে টোকা দিয়ে বল জড়িয়ে দেন জালে (১-০)। ৫৭ মিনিটে দুই ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে প্রায় মাঝমাঠে ফাঁকায় দাঁড়ানো ওই সুয়ারেজের পায়েই বল ফেলেন আলভারো পেরেরা। অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে সুয়ারেজ আগুয়ান পেরুর গোলরক্ষককে কাটিয়ে ঠান্ডা মাথায় বল পাঠিয়ে দেন লক্ষ্যে (২-০)।
দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও পেরু হয়তো ম্যাচে ফেরার আশা ছাড়েনি। কিন্তু সে আশা ধূলিসাৎ হয়ে যায় ৬৯ মিনিটে। বল দখলের লড়াইয়ে উরুগুয়ের ডিফেন্ডার সেবাস্তিয়ান কোটসকে কনুই দিয়ে গুঁতো মারায় সরাসরি লাল কার্ড দেখেন পেরুর অধিনায়ক হুয়ান ভারগাস।
বিশ্বকাপে চতুর্থ হওয়ার পরের বছরই কোপার ফাইনালে ওঠা, উরুগুয়ের ফুটবলে সুদিন ফেরারই আভাস। উরুগুয়ে সর্বশেষ কোপা জিতেছে ১৯৯৫ সালে। ১৯৯৯ সালেও উঠেছিল ফাইনালে। এক যুগ পর আবার ফাইনালে উঠতে পেরে উরুগুইয়ানরা ভাসছে আনন্দে। সুয়ারেজ যেমন বলছেন, ‘আর্জেন্টিনায় ফাইনাল খেলতে পারাটা দারুণ ব্যাপার। এখন আমরা মুহূর্তটি উপভোগ করব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ফাইনালে উঠেছি, এটাই আমরা চেয়েছিলাম।’ কোচ অস্কার তাবারেজের দৃষ্টিতে এই সাফল্য অভিজ্ঞতার ফসল, ‘এ দলটি অনেক দিন ধরেই একে অন্যকে চেনে-জানে। ফাইনালে উঠতে পেরে আমরা খুবই খুশি। তবে রোববার এখনো অনেক দূর।’ শিরোপা-স্বপ্ন নিয়ে এখনো সতর্ক উরুগুয়ের কোচ। কোচের কথাটাই যেন বলে দিয়েছেন মিডফিল্ডার আলভারো পেরেরা, ‘আমাদের পা মাটিতেই রাখতে হবে।’ ২৪ জুলাই আজকের সেমিফাইনালজয়ীর সঙ্গে উরুগুয়ের পঞ্চদশ শিরোপার লড়াই।

No comments

Powered by Blogger.