আত্মহত্যা রোধে...

আত্মহত্যা একটি বড় চিন্তার বিষয় দক্ষিণ কোরিয়ায়। ১৯৯৭ সালে এশিয়ায় অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেওয়ার পর থেকে দেশটিতে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এখনো চলছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামইয়ুক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাং বলেছেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০, ৩০ অথবা ৪০ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা।’
এই আত্মহত্যা রোধে রাজধানী সিউলের উত্তর-পূর্বে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি ‘প্রতীকী মৃত্যু-মহড়া’ সেমিনারের আয়োজন করে। তাতে প্রায় ৭০ জন বিভিন্ন বয়সী মানুষ অংশ নেন। এই মৃত্যু-মহড়ার স্লোগান ছিল ‘জীবনটাকে বিকিয়ে দিও না
কোরিয়ার ঐতিহ্য অনুযায়ী, তাঁরা শণের তৈরি হলুদ পোশাক পরে কফিনে ঢোকেন। পরে কফিনটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর কফিনে নেমে আসে ঘোরতর অন্ধকার। নির্দিষ্ট সময় পর কফিন থেকে বেরিয়ে এসে হা ইউ-সু স্বস্তি প্রকাশ করেন। ৬২ বছর বয়সী এই অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক বলেন, ‘জীবন থেকে মৃত্যুর দূরত্ব এক পা। কিন্তু এই দূরত্বটাই আবার অনেক বড়।’
‘কফিন থেকে উঠে এসে বায়েক সাং-ওকে নামের একজন নারী বলেন, কফিনের অভিজ্ঞতা তাঁকে স্বজনদের মূল্য বুঝতে সাহায্য করেছে। ক্যানসার-আক্রান্ত এই নারী কয়েক বছর আগে কেমোথেরাপি নেওয়া বর্জন করেন।
মৃত্যু-মহড়ায় অংশ নেওয়া আরেকজন নারী কফিন থেকে উঠে তাঁর সন্তানদের উদ্দেশে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তিনি বলেন, ‘আমি যদি আর বেঁচেও না থাকি, তোমরা সবাই মিলেমিশে থেকো। স্বার্থপর হয়ো না।’ সামইয়ুক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাং বলেন, ‘এ সেমিনার জীবনকে উপলব্ধি করার সুযোগ দেবে।’
তবে এই সেমিনারের পরও দক্ষিণ কোরিয়ায় আত্মহত্যার প্রবণতা কমবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সে দেশের হ্যালিম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মহত্যা প্রতিরোধক কেন্দ্রের প্রধান ওহ জিন-টাক বলেন, ‘আত্মহত্যা রোধে কফিনের এই অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট নয়।’ তিনি বলেন, সেমিনারে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের কেউই হতাশায় ভুগছেন না।

No comments

Powered by Blogger.