জন্মদিনে খুনে টেলর

এই রস টেলরকে কি আগে দেখেছে কেউ? না, ব্যাটিংয়ের কথা বলা হচ্ছে না। ওয়ানডেতে এটাই তাঁর সবচেয়ে বড় ইনিংস, তবে এমন খুনে ইনিংস এর আগেও বেশ কয়েকটি খেলেছেন। কিন্তু আবেগের এমন বিস্ফোরণ? আগে কখনো দেখা যায়নি।
৯৬ থেকে শোয়েব আখতারের শর্ট বলটিকে পুল করেই বুঝেছিলেন গ্যালারিতে যাচ্ছে। দুই হাত ওপরে, বাতাসে থাবা—এ পর্যন্ত অন্য রকম কিছু ছিল না। কিন্তু এরপরই চিৎকার করে কী যেন বললেন, কাকে উদ্দেশ করে কে জানে। হয়তো সমালোচকদের উদ্দেশে, হয়তো বুকে চেপে থাকা পাষাণ ভারটা নেমে যাওয়ার স্বস্তিতে। এরপর বসে পড়লেন, ব্যাটটা ক্রমাগত ঠুকছিলেন উইকেটের ওপর, যেন মাটি চাপা দিচ্ছিলেন দুঃসময়কে!
আড়াই বছর ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি নেই। সর্বশেষ ১৩ ইনিংসে মাত্র দুটি ফিফটি, একাদশে জায়গা নিয়ে প্রশ্ন, দলের প্রতি নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন, দলের দুঃসময়ের জন্য তাঁকেও দায়ী করা। এক ইনিংসই সবকিছুর জবাব দিল, আবেগের বিস্ফোরণ হয়তো এ জন্যই। তবে জন্মদিনের কথাটাও নিশ্চয়ই মাথায় ছিল। হ্যাঁ, কাল ছিল টেলরের ২৭তম জন্মদিন।
চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরিটা ওয়ানডে ইতিহাসের একটা জায়গাতেও তাঁকে বানিয়েছে চতুর্থ। ওয়ানডের ৩১২৩ ম্যাচের ইতিহাসে জন্মদিনে সেঞ্চুরি করা মাত্র চতুর্থ ব্যাটসম্যান টেলর। সঙ্গী তিনজনের মাঝে দুজনের নাম দেখে নিশ্চয়ই নিজেকে নিয়ে গর্ব হবে টেলরের। দুজনই জীবন্ত কিংবদন্তি—শচীন টেন্ডুলকার ও সনাৎ জয়াসুরিয়া! বাকিজন হতে পারতেন কিংবদন্তি, পারেননি নিজের জন্যই, টেন্ডুলকারের বাল্যবন্ধু বিনোদ কাম্বলি।
ক্যারিয়ারের দুই ওয়ানডে সেঞ্চুরির প্রথমটি করেছিলেন কাম্বলি ২১তম জন্মদিনে, ১৯৯৩ সালে জয়পুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১০০। জয়াসুরিয়ার সেঞ্চুরিটাও বিশেষ কিছু, কারণ সেটি তাঁর ৩৯তম জন্মদিনে! ২০০৮ এশিয়া কাপে করাচিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে। চিরচেনা ‘জয়াসুরিয়া ইনিংস’, ১৩০ করেছিলেন ৮৮ বলে। ১৯৯৮ সালে ২৫তম জন্মদিনে শারজায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৩৪ রানে ইনিংসটি টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস। এখানেই একটু পেছনে পড়ে গেছেন অপরাজিত ১৩১ রান করা টেলর, জন্মদিনে সবচেয়ে বড় ইনিংসটি টেন্ডুলকারেরই থাকল!
তবে হাজারো প্রাপ্তির কাছে এই আক্ষেপ নিশ্চয়ই পাত্তা পাওয়ার কথা নয়। দুঃসময়কে পেছনে ফেলা বা সমালোচকদের জবাব দেওয়ার ব্যাপার তো আছেই। তাঁর অবিশ্বাস্য ইনিংসটা দলকে এনে দিয়েছে অবিশ্বাস্য এক রানের পুঁজি। অবিশ্বাস্য, কারণ ৪৫ ওভার শেষেও তাঁর রান ছিল ৭৫। অবিশ্বাস্য, কারণ দেশের হয়ে ওয়ানডেতে এক ওভারে সবচেয়ে বেশি রান নেওয়ার রেকর্ড ভেঙেছেন পরপর তিন ওভারের মধ্যে। ২০০৪ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে দুবার ২৭ রান করে নিয়েছিলেন ক্রেইগ ম্যাকমিলান। কাল শোয়েবের করা ৪৬তম ওভার থেকে কুড়োলেন ২৮ (৩ ছয়, ২ চার, দুটি ওয়াইড), রাজ্জাকের করা ৪৮তম ওভার থেকে এল ৩০ (আবারও ৩ ছয়, ২ চার, দুটি ওয়াইড আর ১টি ডাবল)। পেছনে ফেলেছেন বিশ্বকাপ দুঃস্বপ্নকেও। আগের বিশ্বকাপে ৬ ইনিংসে রান ছিল মাত্র ১০৭, এর মধ্যে কেনিয়ার বিপক্ষেই ৮৫। এবার এর আগের একমাত্র ইনিংসে ছিল ৭।
ইনিংস শেষে ছুটে গিয়ে টেলরকে অভিনন্দন জানালেন আফ্রিদি। টেলরের উচিত ছিল তার আগেই উইকেটের পেছনে থাকা কামরান আকমলকে বিশাল এক ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে ফেলা। ০ ও ৪ রানে লোপ্পা ক্যাচ দুটি নিতে পারলে টেলরের জন্মদিন কি এমন আনন্দময় হয়?

No comments

Powered by Blogger.