রহিমআফরোজ এবার দেশেই সৌর প্যানেল প্রস্তুত করবে

আমদানি-নির্ভরতা কমিয়ে আনতে দেশেই এবার সৌরবিদ্যুত্ উত্পাদনের মূল যন্ত্র সৌর প্যানেল প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিয়েছে রহিমআফরোজ রিনিউয়েবল এনার্জি লিমিটেড।
প্যানেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ সৌর সেলসহ কিছু আনুষঙ্গিক যন্ত্র বিদেশ থেকে আমদানি করে সংযোজনের মাধ্যমে পুরো প্যানেলটি প্রস্তুত করা হয়। সে জন্য এই উদ্যোগটিকে বলা হচ্ছে অ্যাসেম্বলিং বা সংযোজন উদ্যোগ।
আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে এই কারখানা স্থাপন সম্পন্ন হবে। এ জন্য ইতিমধ্যে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে সৌরবিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য যে প্যানেল লাগে, তা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। সৌরবিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য মোট বিনিয়োগের ৬০ শতাংশই ব্যয় হয় সৌর প্যানেলের জন্য। আর ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হয় ব্যাটারিতে। বাকি ১৫ শতাংশ আনুষঙ্গিক খুচরা যন্ত্রাংশে। তবে ব্যাটারিসহ সব খুচরা যন্ত্রাংশ দেশেই প্রস্তুত হয়।
এর মধ্যে রহিমআফরোজ ২০ বছর ধরে দেশে নবায়নযোগ্য ব্যাটারি প্রস্তুত করে আসছে। এ পর্যন্ত এক লাখের বেশি ব্যাটারি প্রস্তুত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া দেশের বাইরে নেপাল ও ভুটানেও রহিমআফরোজ সৌর ব্যাটারি রপ্তানি করছে।
সৌর প্যানেল নির্মাণের বিষয়ে রহিমআফরোজ রিনিউয়েবল এনার্জির মহাব্যবস্থাপক সোহেল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের মাঝামাঝিতে গিয়ে এখান থেকে উত্পাদন শুরু করা সম্ভব হবে।’
সোলার প্যানেল তৈরির উদ্যোগের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সোহেল আহমেদ বলেন, ‘রহিমআফরোজ গত কয়েক বছরে গ্রামাঞ্চলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ ঘরে গৃহস্থালি সৌরশক্তির সংযোগ দিয়েছে। তবে এর চাহিদা যেভাবে বাড়ছে তাতে আগামী তিন বছরে অন্তত সাত লাখ সংযোগের প্রয়োজন হবে। তাই আমরা নিজেরাই প্যানেল প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিয়েছি।’
সোহেল আহমেদ আরও বলেন, এর ফলে আমদানি ব্যয় কমবে। তা ছাড়া দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রহিমআফরোজ কিছু প্যানেল বিদেশেও রপ্তানি করবে।
গৃহস্থালি ব্যবহারের পাশাপাশি রহিমআফরোজ ছোট ছোট বাণিজ্যিক উদ্যোগেও সৌরবিদ্যুত্ ব্যবহারের জন্য কাজ করছে। এর মধ্যে আছে সৌরবিদ্যুত্ ব্যবহার করে সেচযন্ত্র চালানো।
বর্তমানে ছোট-বড় ১৫টি প্রতিষ্ঠান সৌরশক্তি নিয়ে কাজ করছে। গ্রামীণ শক্তি এর মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য সংস্থাগুলোর মধ্যে আছে ব্র্যাক, রহিমআফরোজের রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন (আরএসএফ), সৃজনী, ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ) ও ব্রিজ।
এ ছাড়া দেশের সবগুলো জেলার ৪৬৫টি উপজেলার ৪০ হাজারেরও বেশি গ্রাম এবং ১৬টি দ্বীপাঞ্চলের তিন লক্ষাধিক বাড়িতে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বসেছে। এই বিদ্যুতের সুবিধাভোগীর সংখ্যা এখন প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। প্রতিদিন বিদ্যুত্ উত্পাদন হচ্ছে ৪৪ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে সৌরবিদ্যুত্সহ পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার তহবিল বরাদ্দ দিয়েছে। এই তহবিলের অর্থ ব্যাংকগুলোকে পুনঃ অর্থায়ন করা হবে, যেন তারা সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের কম সুদে (৯-১০ শতাংশ) ঋণ দেয়।

No comments

Powered by Blogger.