ক্ষুদ্রঋণের সুদ আরও কমানো সম্ভব- আইএনএমের কর্মশালায় অভিমত

দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের হতে বড় ধরনের অস্ত্র ক্ষুদ্রঋণ। তবে এর সুদের হার নিয়ে এখনো অস্পষ্টতা রয়েছে। অর্থনীতিবিদেরা এ বিষয়ে একেক ধরনের মত দেন। তবে তাঁরা এ-ও বলেন, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সুদের হার কমেছে। ভবিষ্যতে তা আরও কমানো সম্ভব।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পিকেএসএফ ভবনে ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোফিন্যান্স এবং মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘ক্ষুদ্র ঋণের সুদের হার ও স্বচ্ছতা’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব অভিমত তুলে ধরেন।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আর বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান।
আইএনএমের চেয়ারম্যান ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক এম এ বাকী খলীলী। অন্যান্যের মধ্যে এমআরএর ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাজহারুল হক, পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মেজবাহউদ্দিন আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা মাইক্রোফিন্যান্স ট্রান্সপারেন্সির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চাক ওয়াটারফিল্ড বক্তব্য দেন।
‘দারিদ্র্য দূরীকরণে ক্ষুদ্রঋণ বড় ধরনের অস্ত্র’ বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, দারিদ্র্যের সঙ্গে নিত্য যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধে জয়ী হতে হলে ক্ষুদ্রঋণ বড় একটি অস্ত্র, তবে একমাত্র অস্ত্র নয়। তার সঙ্গে অবশ্য মানবসম্পদের উন্নয়নও দরকার।
ক্ষুদ্রঋণের সঙ্গে যুক্তদের সুদখোর বলার খুব বেশি যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ক্ষুদ্রঋণের যত বেশি প্রসার হয়েছে, সুদের হার তত কমেছে। আর উত্পাদন থাকলে ঋণ থাকবেই। ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, চলতি মূলধন ছাড়া তারা কিছুই করতে পারে না।
অর্থমন্ত্রী এক সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে অন্য সংস্থার ঋণ পরিশোধ করার যে প্রবণতা গড়ে উঠেছে, তা রোধ করা এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন।
আতিউর রহমান বলেন, ক্ষুদ্রঋণ না থাকলে গ্রাম থেকে মানুষ দলে দলে শহরে এসে ভিড় জমাত।
তিনি বলেন, দেশের ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার থেকে অনেক দূরে। অথচ তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার প্রতিষ্ঠানগুলোর খরচ কমাতে সহায়তা করবে।
গভর্নর আরও বলেন, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। বিশেষ করে এর সুদের হার নিয়ে অর্থনীতিবিদেরাও একমত হতে পারছেন না। তবে যাঁরা সুদের হার বেশি বলে অভিযোগ করে থাকেন, তাঁদের উচিত প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক খরচ, মূল্যস্ফীতি ও টাকার অবমূল্যায়নকে বিবেচনায় নেওয়া।
অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ব্যাংকের বড় ঋণখেলাপিদের সুদ মওকুফ করা হলে ব্যাংক প্রকৃতপক্ষে কত সুদ পায় তা বোঝা যায় না। স্বচ্ছতার খাতিরেই তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা এবং মহাজনী অর্থলগ্নি সুদের ব্যবসা থেকে ক্ষুদ্রঋণের পরিচয়কে আলাদা করার স্বার্থেই সুদের হার সম্পর্কে স্বচ্ছতার দরকার রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সবাই জানেন সাড়ে ১২ শতাংশ সুদ মানে প্রকৃত সুদ দ্বিগুণ বা ২৫ শতাংশ। সাপ্তাহিক কিস্তির বদলে এখন ষান্মাসিক কিস্তিও চালু। সুতরাং বার্ষিক কার্যকর সুদের হার কত তা বের করার উপায় বের করতে হবে। পিকেএসএফ থেকেও তা সমর্থন করা হচ্ছে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ক্ষুদ্রঋণের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর সুদের হার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। সামনে আরও কমানো সম্ভব। তবে সুদের হার নিয়ে লুকোচুরির কোনো কারণ নেই।
পিকেএসএফের এমডি কাজী মেজবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অল্প টাকা দিয়ে শুরু করা ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম এখন মহীরুহে পরিণত হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ অর্থনীতির প্রকৃত খাতকে স্পর্শ করে না—এমন ধারণা বর্তমানে অচল বলে মনে করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.