বোলিং মাইলফলক ব্যাটিংয়ে উদ্যাপন

সাকিবের হাতে এখন সোনা ফলছে।
ব্যাট হাতে নিলে পাচ্ছেন রান আর
বল হাতে উইকেট।কাল ক্যারিয়ারের
তৃতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরির পর
দলের সূচনাটা ভালো হয়েছিল বলেই ব্যাটিং অর্ডারে নিজেকে এক ধাপ ওপরে তুলে এনেছিলেন। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে চেয়েছিলেন, তা-ই দিলেন সাকিব আল হাসান। রান-ছয়ের ফুলঝুরি ছুটিয়ে ৬৪ বলে ১০৪ রান। ৪৭তম ওভারের প্রথম বলে রান আউটের দুর্ভাগ্যে কাটা না পড়লে ইনিংসটি নিশ্চিত আরও ঝলমলে হয়।
যা হয়েছে, সেটিই বা কম কী! মাত্র ৬৩ বলে সেঞ্চুরি, ওয়ানডে ক্রিকেটে ২৮৭১ ম্যাচের ইতিহাস এর চেয়ে কম বলে সেঞ্চুরি দেখেছে মাত্র ৭টি। ওয়ানডেতে সাকিবের তৃতীয় সেঞ্চুরি, অধিনায়কের ভূমিকায় প্রথম। যেটিকে বলা যেতে পারে, বোলিংয়ে নতুন মাইলফলক ছোঁয়াটাকে ব্যাটিংয়ে উদ্যাপন। আগের দিনই ওয়ানডে বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে উঠে এসেছেন দুই নম্বরে, পরদিন এই ঝোড়ো সেঞ্চুরি—সাকিব আল হাসান জানিয়ে দিলেন ব্যাটিং-বোলিং দুটিই তাঁর সমান আদরের। অলরাউন্ডারদের তো এমনই হতে হয়!
গত কিছুদিনে সাফল্যের স্বাদ পেয়েছেন অনেক, কালকের দিনটি তবু অন্য রকম হয়ে থাকবে সাকিবের কাছে। তিন অঙ্ক ছোঁয়া যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই আরাধ্য, সেটি যদি হয় ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরিগুলোর একটি, তাহলে তো কথাই নেই। আমস্টেলভিনে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সনাত্ জয়সুরিয়ার করা ৬৪ বলের সেঞ্চুরিকে ৯ নম্বরে ঠেলে দিয়ে সাকিবের ৬৩ বলের সেঞ্চুরি এখন ওয়ানডে ইতিহাসের অষ্টম দ্রুততম।
বেশ কিছুদিন ধরেই ব্যাটে-বলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভরসার নাম সাকিব। গত বছরের শেষে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ থেকে ওয়ানডেতে ১৫ ইনিংসে ৪৫.৫০ গড়ে তাঁর রান ৫৪৬, কালকের সেঞ্চুরি ছাড়াও আছে ৫টি হাফ সেঞ্চুরি। এ সময়ে উইকেট নিয়েছেন ২৪টি। মাঠের পারফরম্যান্সের প্রতিফলন স্বাভাবিকভাবেই পড়েছে র্যাঙ্কিংয়েও। আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে টেস্ট এবং ওয়ানডেতে ব্যাটসম্যান-বোলার-অলরাউন্ডার, প্রতিটি বিভাগেই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে ওপরে তাঁর নাম। বছরের শুরু থেকেই ওয়ানডের অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে। বোলিংয়ে এখন দুই নম্বর, ব্যাটিংয়ে আছেন ২৯ নম্বরে। এটি কালকের ওই মহাকাব্যিক ইনিংস খেলার আগের হিসাব, সেরা দশেও নিয়ে আসতে পারে এই ৬৪ বলে ১০৪। টেস্ট বোলিংয়ে ২১ ও ব্যাটিংয়ে ৪৫ নম্বরে, কিন্তু অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ে ঠিকই আছেন সেরা পাঁচে (৪ নম্বরে)। এসবের সঙ্গে দলের অন্যতম সেরা ফিল্ডারও তিনি, এ তথ্যটি যোগ করলে যা পাওয়া যায়, সেটি একজন পরিপূর্ণ অলরাউন্ডারের প্রতিচ্ছবি।
এর সঙ্গে হঠাত্ পাওয়া অধিনায়কত্বের চাপটাও বিবেচনায় নিলে সাকিবের কৃতিত্বটা আরও বাড়ে। চাপ! কিসের চাপ? ‘চাপ’ বলে কোনো শব্দই যেন নেই সাকিবের অভিধানে। এর প্রমাণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকেই দিতে শুরু করেছেন। দিচ্ছেন জিম্বাবুয়েতেও। ‘অধিনায়ক সাকিবে’র চাপে ‘অলরাউন্ডার সাকিব’-এর হারিয়ে না যাওয়াটাকেই বলতে পারেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য স্মরণকালের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। পরিসংখ্যানেও প্রমাণ—অধিনায়ক হওয়ার পর ৫টি ওয়ানডে ম্যাচের ৪ ইনিংসে ১টি সেঞ্চুরি ও ২টি হাফ সেঞ্চুরি। উইকেট নিয়েছেন ৬টি।
ব্যাটিংয়ের সময় কাল রানার চেয়েও পাননি প্রতিপক্ষ অধিনায়কের আপত্তিতে। এই ক্ষোভ থেকেই এমন ধুন্ধুমার ব্যাটিং কি না, কে জানে। তবে এটাই যদি সত্যি হয়, পুরো সিরিজে তাঁকে নিশ্চয়ই আর খেপাতে চাইবেন না প্রসপার উতসেয়া!

No comments

Powered by Blogger.