বিদেশি ফুটবলারদের নিয়ন্ত্রণের দাবি

নকীব, জুয়েল রানা, মনি, লিটন, তাজুসহ আরও কয়েকজন ফুটবলার বাফুফে ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে। অপেক্ষা করছেন সতীর্থ আরও কয়েকজনের। কাল বিকেলে তাঁদের সেখানে দেখে মনে হলো, নিজেদের কোনো দাবি-দাওয়া নিয়ে এসেছেন হয়তো। দাবি তো অবশ্যই, তবে বরাবর যেভাবে দলবদল আর খেলার দাবিতে এসেছেন, এটা তেমন নয়। এই দাবিটা একটু ব্যতিক্রম। বাংলাদেশে এখন যেসব আফ্রিকান ফুটবলারদের খেলতে দেখা যাচ্ছে, তাদের নিয়ন্ত্রণের দাবিতে সোচ্চার হয়ে একজোট হয়েছেন এই ফুটবলাররা।
‘এভাবে হয় না। বিদেশি ফুটবলাররা যা শুরু করেছে, এদের নিয়ন্ত্রণ না করলে দেশি ফুটবলারদের সমস্যা বেড়েই চলবে। আমরা সালাউদ্দিন ভাইয়ের কাছে এসেছি এর একটা বিহিত করার জন্য’—সতীর্থদের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে নিজেদের উদ্দেশ্যটা জানিয়ে দিলেন জুয়েল রানা।
একটু পরেই জয়সহ আরও কয়েকজন ফুটবলার বাফুফে ভবনে। সবার মধ্যেই তোড়জোড় বাফুফে সভাপতির সঙ্গে কথা বলার জন্য। সাংবাদিকদের হাতে তুলে দেওয়া হলো ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত দুই পাতার একটা চিঠি, যা লেখা হয়েছে বাফুফে সভাপতির কাছে। চিঠিতে ঢাকায় খেলা আফ্রিকান ফুটবলারদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বলা হয়েছে, এদের আনাগোনা কমিয়ে দেশে ফুটবলের একটা সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
এক. ‘এই সমস্ত আফ্রিকান খেলোয়াড়েরা ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে খ্যাপ খেলে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে। এই অর্থ তারা অবৈধভাবে তাদের দেশে প্রেরণ করছে। ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশি খেলোয়াড়েরাও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি তারা জাতীয় দলের খেলোয়াড়সহ অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে মাঠে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে।’
দুই. ‘এরা অবৈধভাবে মদ, বিয়ার ও অন্যান্য মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। যা দেশের ফুটবলের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করছে।’
তিন. ‘এ ছাড়া নারীঘটিত কেলেঙ্কারির সঙ্গেও এই খেলোয়াড়েরা যুক্ত এবং খ্যাপ খেলার নামে প্রতারণার মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কোনোভাবেই এটা দেশের ফুটবলের জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে না।’
সব আফ্রিকান ফুটবলারই বাংলাদেশে এসে অপকর্মে লিপ্ত, এমনটা অবশ্য নয়। মূলত নিচুমানের কিছু খেলোয়াড় এদেশকে রুটি-রুজির স্থান বানিয়ে সারা বছরই বাংলাদেশে অবস্থান করে। ঢাকার বাইরে ৫-৭ হাজার টাকায় খ্যাপ খেলে বেড়ায়। মাসে অন্তত ৮-১০টা খ্যাপ খেললেই তাদের জন্য অনেক। এদের অনেকে ভিসার মেয়াদ পার হলেও থেকে যায় অবৈধভাবে। কীভাবে এরা বাংলাদেশে আসে, সেটা অনেকের কাছেই প্রশ্ন। ফুটবলারদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসন এদের ব্যাপারে খোঁজখবর করে ব্যবস্থা নেয়নি কখনোই। যে কারণে তাঁরা মনে করেন, আফ্রিকানদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে।
সর্বশেষ যে ঘটনার কারণে খেলোয়াড়েরা বাফুফে সভাপতির কাছে ছুটে এসেছেন তা হলো, কয়েক দিন আগে আশুগঞ্জে খ্যাপ খেলতে গিয়ে প্যাট্রিক ও আহমেদ নামের দুই আফ্রিকান খেলোয়াড়ের মারমুখী আচরণের শিকার হয়েছেন জাতীয় দলের বাইরে থাকা তরুণ স্ট্রাইকার রবিন। এর পরই খেলোয়াড়দের উপলব্ধি—আর বসে থাকা যায় না। একজন খেলোয়াড় জানালেন, ‘এরা জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের পর্যন্ত গালাগাল করে, কাউকে পাত্তাই দিতে চায় না!’
খেলোয়াড়েরা দেখা করার পর বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন তাঁদের জানিয়েছেন, এ বিষয়ে বাফুফের কিছু করণীয় নেই। প্রশাসনকেই যা করার করতে হবে। ‘সরকার এই খেলোয়াড়দের ভিসা দেয়, এরা দেশে এসে কী করে, সরকারকেই দেখতে হবে। তবে বাফুফে একেবারেই কিছু দেখবে না, এমনও নয়। আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি জানাব। আশা করি প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে’—বলেছেন সালাউদ্দিন।

No comments

Powered by Blogger.