সৌদি আরবকে দোষারোপ করে শ্রীলংকার লাভ হবে না by তারিক এ আল মাঈনা

শ্রীলংকার বিভিন্ন চার্চ ও বিলাসবহুল হোটেলে যখন নয়জন শ্রীলংকান আত্মঘাতী হামলা চালায় এবং হামলায় আড়াই শতাধিক মানুষ নিহত হয়, তখন সিংহলী চরমপন্থী গ্রুপ বোদু বালা সেনার (বিবিএস) উগ্র প্রধান কাজে নেমে পড়েন এবং দ্বীপ রাষ্ট্রটির সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিতে শুরু করেন।

গত সপ্তাহে তাদের নেতা, যিনি কিছুকাল আগেও গ্রেফতার ছিলেন, তিনি ক্যান্ডি শহরে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের একটা সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন।

যদিও শ্রীলংকায় জরুরি আইন চালু রয়েছে, এর পরও এই সম্মেলনের আয়োজন করেন চরমপন্থী বৌদ্ধ ভিক্ষু (বিবিএসের জেনারেল সেক্রেটারি) গালাগোদা আত্থে নানাসারা, সম্প্রতি যাকে ক্ষমা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা।

এমন সময় এই সম্মেলনের ডাক দেয়া হলো যখন মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণার কারণে শ্রীলংকার মুসলিম সম্প্রদায় এক ধরনের একঘরে হয়ে পড়েছে।

ভিক্ষুদের উসকানিমূলক বক্তব্য সত্বেও কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ কেউ এগিয়ে এসে এই সম্মেলন স্থগিত করেনি। অথচ অসহায় সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেয়ার মতো সব ধরনের আয়োজনই সেখানে ছিল।

নানাসারা শ্রীলংকার ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার ক্ষেত্রে একজন বিপজ্জনক ব্যক্তি। যদিও সম্প্রতি কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি দাবি করেছেন যে, তিনি বদলে গেছেন, কিন্তু বাস্তবতা পুরোই ভিন্ন।

একটা জঘন্য অভিযোগ

তারা অভিযোগ করেছে যে, শ্রীলংকায় ওয়াহাবি ধাঁচের ইসলামের প্রচারের জন্য মসজিদ ও স্কুলে অর্থায়ন করেছে সৌদি সরকার। তাদের দাবি অনুযায়ী মুসলিম জণগোষ্ঠির মধ্যে এটা জঙ্গিবাদ বিস্তারে ভূমিকা রেখেছে।

তারা আরও দাবি করেছে যে, যে সব লংকান অভিবাসী কর্মী সৌদি আরব থেকে কাজ করে দেশে ফিরে গেছে, তারা জঙ্গি হয়ে গেছে এবং সৌদিতে যে চরমপন্থী ওয়াহাবি মতবাদের দীক্ষা দেয়া হয়েছে, সেগুলো দ্বারা তারা বদলে গেছে।

সৌদি অর্থায়নের মসজিদ সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে, এমন অভিযোগ ছাড়াও তারা আরও দাবি করেছে যে, সৌদি প্রভাবের কারণে শ্রীলংকান মুসলিম নারীরা শাড়ি ছেড়ে আবায়ার দিকে ঝুঁকেছে।

বিভিন্ন বিবেচনায় এটা একটা জঘন্য অভিযোগ। বিদেশী মিডিয়ার বহু মানুষের মধ্যে যে ধারণাটা জন্মেছে, বাস্তবতা তার উল্টা এবং ‘ওয়াহাবি’ ইসলাম বলে কিছু নেই।

সুন্নী ইসলামের মধ্যে চারটি মাজহাব রয়েছে: হানাফি, শাফি, মালিকি ও হাম্বলী। প্রত্যেকের নিজস্ব ধর্মীয় নির্দেশনা রয়েছে, যেটা ইসলামি বিশ্বাসের ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যেই পড়ে।

এই প্রত্যেক মাজহাবের মধ্যেই কমবেশী সহিষ্ণুতা রয়েছে। সৌদি আরবে, জনগণ তাদের ইচ্ছেমতো মাজহাবের অনুসরণ করতে পারে এবং এর উল্টা প্রমাণ করার কারো সামর্থ নেই।

জাতিগত অস্থিরতা

সাম্প্রতিক অভিযোগের ব্যাপারে দ্রুত জবাব দিয়েছে সৌদি আরব। শ্রীলংকান মিডিয়ায় প্রকাশিত এক চিঠিতে কলম্বোর সৌদি দূতাবাস বিস্তারিত একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, শ্রীলংকায় কি কি বিষয়ে সৌদি আরব আর্থিক অবদান রেখেছে।

সৌদি আরব শ্রীলংকায় যে ৪০০ মিলিয়নেরও বেশি ডলার ব্যয় করেছে, এর মধ্যে ২২০ মিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করা হয়েছে সড়ক, পানি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো নির্মানে।

১৩০ মিলিয়নের বেশি ব্যয় করা হয়েছে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে। বাকিটা অন্যান্য জনমুখী কাজে ব্যয় করা হয়েছে। কোন চরমপন্থী কর্মকান্ডের অর্থায়নের জন্য একটি ডলারও ব্যয় করেনি সৌদি আরব।

সৌদি আরব বলেছে: “প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ব্যয় করা হয়েছে, যেখানে সৌদি আরব বা মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন কৌশলগত লাভের বিষয়ই ছিল না”।

যদি কোন পশ্চিমা দেশ মাত্র অর্ধ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতো, তাহলে তারা শতভাগ বেশি ইতিবাচক প্রচারণা পেতো এবং তাদের নীতি গ্রহণের জন্য শ্রীলংকাকে উল্টোপথে যেতে হতো।

বিবিএসের অভিযোগ এবং তাদের রাজনৈতিক বক্তব্যগুলো তাদের কাঙ্ক্ষিত জাতিগত সহিংসতাকে বৈধ করার প্রচেষ্টারই একটা অংশ মাত্র।

তাই দয়া করে সৌদি আরবকে দোষারোপ করবেন না। দোষারোপ করুন আপনাদের চরমপন্থী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের!

তারিক এ আল মাঈনা সৌদি সামাজিক-রাজনৈতিক ভাষ্যকার
চরমপন্থী বৌদ্ধ ভিক্ষু বিবিএসের জেনারেল সেক্রেটারি গালাগোদা আত্থে নানাসারা (মাঝে)

No comments

Powered by Blogger.