সামরিক শক্তি বাড়াতে ‘চীনা হুমকি’র ব্যবহার বন্ধ করা উচিত ভারতের by আই জুন

ভারতের জন্মের পর থেকেই দেশটি বড় ধরনের বৈশ্বিক শক্তি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে আসছে। তাদের বিরাট ক্ষমতার স্বপ্নের মধ্যে ভারত মহাসাগরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, কিছু ভারতীয়ের, বিশেষ করে ভারতীয় সাংবাদিকদের একটা খারাপ অভ্যাস রয়েছে – সেটা হলো ভারতের সামরিক বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির জন্য তথাকথিত চীনা হুমকিকে ব্যবহার করা।
গত ১ জুলাই সোমবার ভারতীয় এক সাংবাদিকের একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ব্লুমবার্গ, যেখানে বলা হয়েছে যে ভারত সরকার “২.২ বিলিয়ন ডলারের যুদ্ধজাহাজ কেনার পরিকল্পনা করছে”। রিপোর্টার লিখেছেন যে, এটা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ২৫০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক আধুনিকায়ন পরিকল্পনার একটা অংশ, বিশেষ করে নৌ সীমায় প্রতিবেশী চীনের হুমকি মোকাবেলার জন্য যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ‘হুমকি’ বলতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, “অতীতে বেইজিং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে”। ভারতের আরও বেশ কিছু মিডিয়া ওই নিবন্ধটি আবার পুনঃপ্রকাশ করেছে।
তবে, বেইজিং শুধু ভারত মহাসাগর নয়, এডেন উপসাগর ও ক্যারিবিয়ানসহ আরও বেশ কিছু জায়গায় যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে তারা। এই নৌ রুটগুলোর আশেপাশের বহু দেশ বেইজিংয়ের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে, এদের মধ্যে ছোট দেশগুলোও রয়েছে। কিন্তু একমাত্র দেশ ভারত, যাদের শক্তিশালী জাতীয় শক্তি রয়েছে, তারা এটাকে হুমকি মনে করছে।
চীনের সাথে ইউরোপ, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের সংযোগ স্থাপনকারী বাণিজ্য রুটগুলোর মধ্যে ভারত মহাসাগর অন্যতম। চীনের আমদানিকৃত জ্বালানি ও কাঁচামালের বড় একটা অংশ ভারত মহাসাগর দিয়ে পরিবহন করা হয়। কিন্তু এই নৌ পথের নিরাপত্তা সবসময় সেভাবে বজায় থাকে না। এই অঞ্চলে চীনের নৌবাহিনীর যে সব নৌ যান রয়েছে, সেগুলো শুধু চীনা বাণিজ্য জাহাজেরই নিরাপত্তা দেয় না, বরং অন্যান্য দেশের বাণিজ্য জাহাজেরও নিরাপত্তা দেয় তারা। জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান ও বিপর্যয় মোকাবেলায় সহায়তা দেয় তারা।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মালদ্বীপের একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে আগুন লাগে। বিবিসি তাদের রিপোর্টে জানায়, “মালের প্রায় ১০০,০০০ অধিবাসী খাবার পানি থেকে সে সময় বঞ্চিত হয়”। চীন সেখানে শুধু বিশুদ্ধ পানিবাহী বিমানই পাঠায়নি, বরং চীনা পিপলস লিবারেশান আর্মি নেভির উদ্ধারকারী জাহাজ চাংশিংদাওকেও সেখানে পাঠিয়েছিল, যেটা তাদের ওয়াটার ডিস্যালিনেশান ইউনিটকে ব্যবহার করে মালের অধিবাসীদেরকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করেছিল।
চীনের জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি সম্পূর্ণ আত্মরক্ষামূলক। তারা কখনও কোন বিদেশের মাটিতে বড় আকারের সামরিক মোতায়েন করেনি, কিছু পশ্চিমা দেশ যেটা প্রায় নিয়মিত করে আসছে।
সন্দেহ নেই যে, বেইজিং ও নয়াদিল্লীর মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিবাদ রয়েছে। কিন্তু দুই পক্ষই আলোচনার মাধ্যমে সেই বিবাদ মিটিয়ে ফেলার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মাঝে মাঝেই তাদের মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে। দীর্ঘ সময় তাদের মধ্যে সীমান্তে কোন সঙ্ঘাত হয়নি।
কিন্তু কিছু ভারতীয় সাংবাদিক বাণিজ্যিক স্বার্থে তথাকথিত চীনা হুমকি তত্ত্ব নিয়ে হৈ চৈ করছে। বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে কিছু কর্মকর্তার পর্যবেক্ষণকে অতিরঞ্জিত করে এই কাজটা করা হচ্ছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত মার্চে ভারতের নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল সুনিল লাম্বাকে উদ্ধৃত করে প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া বলে, “ভারত মহাসাগরের উত্তরাংশে চীনের তৎপরতা বৃদ্ধি ভারতের জন্য একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়”।
ভারতের দিক থেকে প্রতিযোগিতাকে স্বাগত জানায় চীন। কিন্তু চীন-বিদ্বেষী জাতীয়তাবাদ উসকে দিয়ে ভারতের এই প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাওয়া উচিত নয়। ভারত তাদের সামরিক শক্তি বাড়ালে চীন তাকে স্বাগত জানাবে। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়ার এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত যে ভারতের আসল চ্যালেঞ্জগুলো হলো তাদের পশ্চাৎপদ সামরিক প্রযুক্তি, অস্ত্রের উপর অতিমাত্রায় আমদানির উপর নির্ভরতা, অসম্পূর্ণ বাণিজ্যিকীকরণ ও আধুনিকায়ন, চীন ‘হুমকি’ নয়, যেটা আসলে একটা অতিরঞ্জিত অজুহাত।

No comments

Powered by Blogger.