আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কৌশল by জে স্কট ও’মেয়ারা

কিভাবে আপনি সেই যুদ্ধের ইতি টানবেন যেটাকে বর্ণনা করা হয় অন্তহীন হিসেবে? ঝুঁকি সর্বোচ্চ মাত্রায় কমিয়ে এনে একটা সফলতা অর্জনের সম্ভাবনা এখানে কতটুকু? আর এটা অর্জনের জন্য কি ধরনের শান্তি চুক্তির প্রয়োজন হবে?

এই মৌলিক প্রশ্নগুলো নিয়েই আফগানিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন বিশেষ দূত জালমাই খলিলজাদ আর তার দল গত আট মাস ধরে লড়াই করে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের ফাঁদে পড়ে খলিলজাদ এখন মূলত দুটো উদ্দেশ্য নিয়ে সামনে এগুচ্ছেন, যে দুটো সাধারণ দৃষ্টিতে পরস্পরবিরোধী। প্রথমত: ১৮ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে তালেবানদের সাথে একটা শান্তি চুক্তি করা, যাতে আফগানিস্তান থেকে সেনাদের সরিয়ে নেয়া যায়। দ্বিতীয়ত: আফগানিস্তানে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যাতে দেশটি আবার অতীতে ফিরে গিয়ে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হয়ে না ওঠে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য যেন কোন হুমকি হয়ে না দাঁড়ায়।

একটা বৃত্তকে কিভাবে আপনি চতুর্ভুজ করবেন? তিনটি শব্দ: বিচক্ষণতা, অধ্যবসায় এবং ধৈর্য।

রক্ত ও অর্থে মিলিয়ে উচ্চ মূল্য দিতে হয়েছে আমেরিকানদের। অনেকে আফগানিস্তানে তাদের বন্ধু ও পরিবারকে হারিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই যুদ্ধটা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আমেরিকানদের আগ্রহ কমে গেছে। এই যুদ্ধের পরিসংখ্যান মাথা নষ্ট করে দেয়ার মতো। মার্কিন করদাতাদের ৭৪৪ বিলিয়ন ডলার এখানে ব্যয় হয়েছে। ২৪৩০ মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা নিহত হয়েছে। শুধু চলতি বছরেই নিহত হয়েছে ১৩ জন। আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির নিজের হিসেবেই ২০১৪ সালের পরে হাজার হাজার আফগান সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা জীবন হারিয়েছে। পুরো সঙ্ঘাতকালীণ সময়টাতে আর্থিক অপচয়, চুরি এবং অপব্যবহারের হিসেবটা অস্বাভাবিক।

যে কোন রাষ্ট্র পরিচালনা নীতির ব্যপারে বিচক্ষণতা একটা প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তড়িঘড়ি করে যুদ্ধ শেষ করার চেষ্টাটা অন্ধভাবে যুদ্ধ শুরু করার মতোই বিপজ্জনক। সকলের যেটা বোঝা উচিত, সেটা হলো সহিংসতায় প্লাবিত একটি দেশে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসাটা একটা অসম্ভব জটিল কাজ। এ জন্য অবহিত, স্বপ্রণোদিত, ধৈর্যশীল রাষ্ট্রনায়কোচিত আচরণ থাকতেই হবে। এখানে পক্ষপাতদুষ্ট আশাবাদ বা আদর্শ সরকারী প্রক্রিয়ার কোন স্থান নেই।

আদর্শ পৃথিবীতে যে কোন লড়াইয়ের দ্রুত ইতি ঘটে। সেখানে তালেবানরা আল কায়েদার নেতৃত্বের সাথে সম্পর্কোচ্ছেদ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করে যাতে আফগান মাটি থেকে বিদেশীদের উপর হামলা না হয়। আর আমেরিকান ইউনিফর্ম পরা সাহসী নারী ও পুরুষরা ঘরে ফিরতে পারতো।

দুঃখজনক হলো, বাস্তব পৃথিবীতে এ ধরনের আদর্শিক আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন সাধারনত হয় না। এই সবের কোনটাই দ্রুত ঘটবে না। যদি সেগুলো ঘটেও, সে জন্যে আরও লড়াই দেখতে হবে ও আরও আলোচনার টেবিলের চিৎকার শুনতে হবে। আসলে, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যদি আফগান প্রতিনিধিরা আলোচনার টেবিল থেকে একাধিকবার চিৎকার চেঁচামেচি করে বেরিয়ে যায়।

সহিংসতাও জারি থাকবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, যুদ্ধে শত্রুও ভোট পেতে পারে। তালেবানরা আফগান ও জোটের সেনাদের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত রাখবে এবং একই সাথে হাজার মাইল দূরে আলোচনার কূটনৈতিক প্রক্রিয়াতেও তারা অংশ নেবে।

তবে একটা বিষয় নিশ্চিত: বর্তমান কূটনীতি যতটাই সফল মনে হোক না কেন, পত্রিকার মুক্ত কলামে ভিন্ন ভিন্ন মত সবসময় আসতেই থাকবে। রাষ্ট্রদূত খলিলজাদের প্রতি তাই বলবো: শক্তিশালী থাকুন এবং প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন। আর নেতিবাচক ব্যক্তিদের অত গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই।

>>>(মার্কিন মেরিন কর্পসের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জে স্কট ও’মেয়ারা কম্পাইন্ড জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স – অপারেশান ইনহেরেন্ট রিজর্ভের সাবেক চিফ অব স্টাফ এবং আমেরিকান কলেজ অব ন্যাশনাল সিকিউরিটি লিডার্সের ফেলো।)

No comments

Powered by Blogger.