যুক্তরাষ্ট্রের চাপ, চাবাহার বন্দরের অবনতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারত-আফগান বাণিজ্য by সুহাসিনী হায়দার

ইরানের চাবাহার বন্দরের ব্যাপারে ভারত তাদের বরাদ্দ দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তার সাম্প্রতিক বাজেট ঘোষণায় এ কথা জানিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত ভারত-আফগান বাণিজ্যের উপর একটা আঘাত হানবে। কারণ পাকিস্তান তাদের আকাশসীমায় ভারতীয় বিমান নিষিদ্ধ করার কারণে এমনিতেই আফগানিস্তানের সাথে ভারতের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দিল্লী ও কাবুলের কর্মকর্তা ও কূটনীতিকরা এ কথা জানিয়েছেন।
সরকার বিগত কয়েক বছর এই বন্দরের জন্য ১৫০ কোটি রুপি বরাদ্দ করে আসছিল। কিন্তু ২০১৯-২০ সালের বাজেটে তারা বরাদ্দের পরিমাণ রেখেছে মাত্র ৪৫ কোটি রুপি। এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রগুলো জানিয়েছে যে, “আগামী অর্থবছরে যে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে, সেগুলোর ভিত্তিতেই অগ্রাধিকারের বিষয়টি ঢেলে সাজানো হয়েছে”। এর অর্থ হলো ভারত আগে যেভাবে চাবাহার বন্দরের উন্নয়নে সক্রিয় ছিল, এখন আর তা থাকবে না।
সামান্য সহায়তা ও ছাড়
টেকনিক্যালি, যুক্তরাষ্ট্র চাবাহার বন্দর উন্নয়নের জন্য ভারতকে ছাড় দিয়েছে, যাতে তাদের ‘দক্ষিণ এশিয়া’ কৌশলের অংশ হিসেবে আফগানিস্তানের সাথে বাণিজ্য বাড়ানো যায়। বাস্তবে অবশ্য তেল আমদানির উপর ছাড় বাতিল করাসহ অন্যান্য সকল মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে সব চুক্তি থমকে গেছে। আফগান ব্যাংকগুলো পরিবহনের জন্য ক্রেডিট লাইন খুলতে ইতস্তত করছে, এবং জাহাজ ও কার্গো পরিচালনাকারীরা ইরানের বন্দর ব্যবহার এড়িয়ে চলছে।
দিল্লীতে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আলী চেগেনি বলেছেন, “বিগত মাসগুলোতে (ফেব্রুয়ারি-মে) আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় পণ্য ও ভোগ্যপণ্য পরিবহনে চাবাহার বন্দরের ব্যবহার আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছিল। কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তাদের শত্রুতামূলক নিষেধাজ্ঞার কারণে এর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবং চাবাহারসহ ইরানী বন্দরগুলোতে যে সব কোম্পানি কাজ করছে, তারা উদ্বেগের মধ্যে পড়ে গেছে”। দ্য হিন্দুকে তিনি এ সব কথা বলেন।
গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে আফগানিস্তানের নতুন মিশন প্রধান তাহির কাদেরি বলেন, তাদের আশা ছিল পাকিস্তানের আকাশীসীমা নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত শিগগিরই তুলে নেয়া হবে, যেটা ১২ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অধিকাংশ সরাসরি ফ্লাইট বাতিলের কারণে বাণিজ্য ছাড়াও আফগান রোগিদের জরুরি চিকিৎসা সেবা, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরাও বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে গেছেন।
এই আকাশসীমা নিষিদ্ধের কারণে আফগানিস্তানের যে ফল ও কৃষিপণ্যগুলো কাবুল ভারতে রফতানি করতো, সেগুলো এখন অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাজারে চলে যাচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন যে, আকাশ ও সাগরপথে বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হওয়ায়, এবং পাকিস্তান আফগান ট্রাকগুলোকে ওয়াগাহ স্থল রুট ব্যবহার করতে না দেয়ায়, এখনকার মতো বাণিজ্য প্রায় শূণ্যের কোঠায় নেমে আসতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.