বাণিজ্যিকভাবে তিমি শিকারের অনুমতি জাপানের

আন্তর্জাতিক তিমি শিকার কমিশন (আইডব্লিউসি) থেকে বেরিয়ে গিয়ে ফের বাণিজ্যিকভাবে তিমি শিকারের অনুমতি দিতে শুরু করেছে জাপান। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ২২৭টি তিমি শিকারের অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দেশটির মৎস্য সংস্থার বরাত দিয়ে সোমবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
কয়েক প্রজাতির তিমি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ১৯৮৬ সালে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তিমি শিকার নিষিদ্ধ করে আইডব্লিউসি। বিভিন্ন প্রজাতির তিমি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এমন সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। তবে এ সংস্থার সাবেক সদস্য জাপানের দাবি, তিমি মাছ খাওয়া দেশটির সংস্কৃতির অংশ।
নতুন সিদ্ধান্তের ফলে তিন দশকেরও বেশি সময় পর তিমি শিকারের সুযোগ পাচ্ছেন জাপানের জেলেরা। ২০১৯ সালের ১ জুলাই সোমবার সকালে শিকারের উদ্দেশে উত্তরাঞ্চলীয় কুশিরো বন্দর থেকে পাঁচটি জাহাজ ছেড়ে যায়। একই সময়ে শিমোনোসেকি এলাকা ত্যাগ করে তিনি শিকারের তিনটি নৌকা।
জাপানের স্মল টাইপ হোয়েলিং অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রধান ইয়োশিফুমি কাই। সম্প্রতি রাজনীতিক, কর্মকর্তা ও তিমি ব্যবসায়ীদের এক অনুষ্ঠানে সরকারের সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তিনি। শিকারে যাওয়ার আগে হিদেকি আবে নামের একজন জেলে বলেন, আমি কিছুটা নার্ভাস হলেও এজন্য খুশি যে আমরা তিমি শিকার শুরু করতে পারবো। তিনি বলেন, আমার মনে তরুণরা জানে কিভাবে এটি রান্না করে খেতে হয়। আমি চাই আরও বেশি সংখ্যক মানুষ এর স্বাদ নিক। সেটা অন্তত একবারের জন্য হলেও। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে জাপানি জেলেরা এখন বিলুপ্তপ্রায় মিংক প্রজাতির তিমিসহ সব ধরণের তিমি শিকারের সুযোগ পাবেন। তবে, সংরক্ষণবাদীরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, জাপানকে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে।
কী আছে জাপানের ঘোষণায়?
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জাপান সরকারের মুখপাত্র ইয়োশিহিদে সুগা জানান, তিমি শিকার জাপানের জলসীমা এবং দেশটির অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে সীমিত রাখা হবে। অ্যান্টার্কটিক জলসীমা ও দক্ষিণে এটি শিকার বন্ধ করে দেবে কর্তৃপক্ষ। সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, জাপানের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাণিজ্যিকভাবে তিমি শিকারের টেকসই একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার ব্যপারে আগ্রহী ছিল না আইডব্লিউসি।

জাপানের অভিযোগ, আইডব্লিউসি কেবল সংখ্যাগত দিক বিবেচনায় তিমি সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করতে উৎসাহী। অথচ জাপানের উপকূলীয় এলাকার বহু জনগোষ্ঠী শত শত বছর ধরে এটি শিকার করে আসছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানে তিমির চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। কারণ সে সময় দেশটির মাংসের প্রধান উৎস ছিল এটি।
বর্তমান নিষেধাজ্ঞায় কী আছে?
বিশ্বব্যাপী তিমি মাছের বিভিন্ন প্রজাতির সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে, সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালে আইডব্লিউসির সদস্য রাষ্ট্রগুলো শিকার বন্ধে একমত হয়। জাপান, নরওয়ে এবং আইসল্যান্ডের মত যেসব দেশ সে সময় তিমি শিকার করত, তারা ভেবেছিল তিমির সংখ্যা একটি কাঙ্ক্ষিত অবস্থায় পৌঁছানো পর্যন্ত ওই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত সাময়িক ছিল না। ফলে এই দেশগুলো তখন তিমি শিকার তাদের দেশীয় সংস্কৃতির অংশ বলে নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। বর্তমানে পৃথিবীতে তিমির সংখ্যা সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। বেশিরভাগ প্রজাতিই আর বিপন্ন অবস্থায় নেই।
গত ৩০ বছর ধরে জাপান বৈজ্ঞানিক গবেষণার অজুহাতে নিয়মিত তিমি শিকার করে আসছে। প্রতিবছর দেশটি গড়ে ২০০টি থেকে ১২০০টি পর্যন্ত তিমি শিকার করে। দেশটির দাবি, তারা তিমি মাছের সংখ্যা যাচাই করে কোনও প্রজাতি বিপদাপন্ন কিনা তা দেখার জন্য এমনটি করে থাকে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি।
জাপানের ঐতিহ্যবাহী খাবার সুশি তৈরিতে তিমি মাছ ব্যবহার করা হয়

No comments

Powered by Blogger.