চীন ও ভারতের টানাটানি

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শেয়ার বিক্রি নিয়ে চীন ও ভারতের টানাটানি এখনো চলছে। ডিএসইর মালিকানার অংশীদার হতে দুটি দেশের প্রতিষ্ঠানের আলাদা দুটি জোট মুখোমুখি অবস্থানে। এ অবস্থায় ডিএসইর অংশীদার কে হচ্ছে, এটিই এখন শেয়ার বাজারের অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীনের সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ মিলে একটি কনসোর্টিয়াম বা জোট গঠন করেছে। অন্যদিকে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই), যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক ও বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ মিলে গঠন করেছে অপর একটি জোট। এ দুই জোটের মধ্যে দরপ্রস্তাবে এগিয়ে রয়েছে চীনের সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ জোটটি।
ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদও এই জোটটিকে তাদের মালিকানার অংশীদার করতে চায়। আর ভারতের এনএসইর নেতৃত্বে গঠিত জোটটি দরপ্রস্তাবে পিছিয়ে থেকে এখন নানাভাবে চাপ তৈরি করে ডিএসইর অংশীদার হতে চায়। কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার বিক্রিসংক্রান্ত প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে জমা দিয়েছে ডিএসই। এ প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গতকালই জরুরি সভা করে চার নির্বাহী পরিচালকের সমন্বয়ে একটি কমিটি করেছে বিএসইসি।সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদকে প্রধান করে গঠিত এই কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চার সদস্যের কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিএসইসি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ডিএসইর পক্ষ থেকে গতকাল বিএসইসিতে যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, সেখানে দুই কনসোর্টিয়াম বা জোটের প্রস্তাবই রয়েছে। পাশাপাশি ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ চীনের জোটকে অংশীদার করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা-ও জানানো হয় বিএসইসিকে। তবে চূড়ান্তভাবে কারা ডিএসইর মালিকানার অংশীদার হবে,
আইন অনুযায়ী সেই সিদ্ধান্ত দেবে বিএসইসি।  ডিএসইর শেয়ারের মালিকানা নিয়ে চীন ও ভারতের প্রতিষ্ঠানের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে দেশের অর্থনীতিবিদ ও বাণিজ্য বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাণিজ্যের প্রশ্নে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ইস্যুতে চীন ও ভারতের মুখোমুখি অবস্থানের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশে নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে কাজ করছে ভারত ও চীন। বাংলাদেশেও দেশ দুটি বিভিন্ন খাতে সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও দেশ দুটি বাংলাদেশে নিজেদের ব্যবসায়িক অবস্থান শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছে। দেশে যেসব অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে সেখানে ভারত ও চীনের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশে বেসরকারি পর্যায়েও চীন ও ভারতের বাণিজ্যও নতুন কোনো ঘটনা নয়। অবকাঠামো, পোশাক, তথ্যপ্রযুক্তি, পরিবহন, মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে প্রায় সব খাতেই দুই দেশের ব্যবসা রয়েছে। জানতে চাইলে সানেমের (সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিভিন্ন বিষয়ে চীন-ভারতের টানাটানি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আমরা দেখতে পাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দুই দেশকে একধরনের ভারসাম্যের মধ্যে রাখতে পেরেছে। ডিএসইর মালিকানার বিষয়ে আমাদের প্রত্যাশা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বজায় রেখে নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষায় সর্বোচ্চ দরদাতাকেই বেছে নেওয়া হবে।’

No comments

Powered by Blogger.