ওয়াক্‌ফ সম্পত্তিতে অবৈধ ইটভাটা চলছেই

আইন লঙ্ঘন করে বরগুনার আমতলীতে ওয়াক্ফ এস্টেটের কৃষিজমি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে নির্মাণ করা অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন আবুল বাশার ওরফে নয়ন মৃধা। ওয়াক্‌ফ প্রশাসক ভাটাটির কার্যক্রম বন্ধ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বরগুনা জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়ার পর দেড় মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও ভাটার মালিক প্রতাপের সঙ্গে ইট পুড়িয়ে চলেছেন। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, আমতলী সদর ইউনিয়নের সেকান্দারখালী গ্রামে আমতলী-কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘেঁষে গড়ে তোলা এই ভাটায় ইট তৈরির জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে করে আনা মাটি সড়কের পাশে, ওয়াক্‌ফ এস্টেটের জমিতে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ইটভাটার জন্য আনা মাটি ফেলে ক্রমেই জমির দখল সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ভাটার চারপাশে রয়েছে অন্তত ৮০ একর ফসলি জমি ও জনবসতি। ভাটার আগুনের তাপে ওই এলাকার গাছপালা নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশ বিষিয়ে ওঠায় এলাকাটি বসবাসের ক্ষেত্রে অসহনীয় হয়ে উঠেছে। পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন প্রথম আলোকে বলেন, ভাটাটির পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। তারপরও কীভাবে এটির কার্যক্রম চলে, তা অবাক করার বিষয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আবুল বাশার মৃধা স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতার আত্মীয়। সেই প্রভাব খাটিয়ে জমি দখল ও ইটভাটা করেছেন। ভাটার কারণে এলাকার পরিবেশ হুমকির মুখে পড়লেও এলাকার লোকজন ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না। ওয়াক্‌ফ এস্টেটের জমির অংশীদার সাহিদা আক্তার অভিযোগ করেন, ২০১৬ সালে ওয়াক্ফ এস্টেটের অংশীদারের অনুমতি ছাড়াই আবুল বাশার ওই জমিতে ইটভাটার সম্প্রসারণ শুরু করেন।
তিনি (সাহিদা) ও তাঁর ভাই রূপক তালুকদার বাধা দিতে গেলে মাটি কাটার যন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে তাঁদের পিষে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আরেফিন বাদল বলেন, ওই ভাটার মালিক পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু অভিযোগ পাওয়ার পর তা অনুমোদন করা হয়নি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ১২ নভেম্বর ওয়াক্ফ প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বরগুনার জেলা প্রশাসককে ভাটাটি বন্ধ এবং মাটি খননকাজ বন্ধ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে চিঠি দেন। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বরগুনা জেলা প্রশাসকের পক্ষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের মুনশিখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার ব্যবস্থা নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অনুরোধ করে ১৫ নভেম্বর একটি চিঠি দেন। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আমতলীর ইউএনও মো. সরোয়ার হোসেন উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের কানুনগোকে নির্দেশ দেন। কানুগগো আহসান হক সরেজমিনে তদন্ত করে ২২ নভেম্বর ইউএনওর কাছে লিখিত প্রতিবেদন দেন। কানুনগো প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, হাজি আবুল কাশেম ওয়াক্‌ফ এস্টেটের মোতোয়ালি জাহিদুল ইসলাম ওরফে শাহীন তালুকদার মৌখিকভাবে ওয়াক্‌ফ এস্টেটের সম্পত্তি ব্যক্তিস্বার্থে ১৬ জন লোকের কাছে মৌখিকভাবে হস্তান্তর করেন। জাহিদুল তাঁদের অবৈধ দখল দিয়ে সম্পত্তি মন্দ ব্যবস্থাপনা, অবৈধ কার্য ও তছরূপ করেছেন, যা বাংলাদেশ ওয়াক্‌ফ অধ্যাদেশ ১৯৬২-এর ৩২ ধারা লঙ্ঘন ও ৬১ (ত) ধারার অপরাধ। এই ১৬ জন অবৈধ দখলদারের মধ্যে আবুল বাশার ওরফে নয়ন মৃধা অবৈধভাবে ওয়াক্‌ফ সম্পত্তিতে পুকুর খনন করেছেন এবং ইটভাটার মাটি রেখে জমি দখল করেছেন। কানুনগোর এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর ইউএনও অবৈধভাবে ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি দখলকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে ২২ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। কিন্তু এরপর দেড় মাসের বেশি সময় পার হলেও ইটভাটাটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে ইউএনও মো. সরোয়ার হোসেন গতকাল রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দিয়েছিলাম। পরে বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছেন জেলা প্রশাসক। এ জন্য সোমবার (আজ) দুই পক্ষকে ডাকা হয়েছে।’ জেলা প্রশাসক মো. মোকলেছুর রহমান গতকাল বিকেলে বলেন, ‘ওই ভাটাটির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনানুগ প্রক্রিয়া চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।’ এ নিয়ে ২৫ নভেম্বর প্রথম আলোর শেষের পাতায় ‘ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি দখল করে অবৈধ ইটভাটা’ শিরোনামে খবর ছাপা হয়।

No comments

Powered by Blogger.