ভুল রিপোর্ট করার কারণে সাংবাদিক ব্রায়ান রস’কে সাময়িক বরখাস্ত

ভুল রিপোর্ট করার কারণে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অনুসন্ধানী সাংবাদিক ব্রায়ান রস’কে সাময়িক বরখাস্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি নিউজ। চার সপ্তাহ বিনাবেতনে বরখাস্ত থাকবেন তিনি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সম্পর্কে একটি ভুল রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলেন। মাত্র একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে তিনি মার্কিন মুলুকে তোলপাড় করা ওই রিপোর্টে বলেছিলেন, মাইকেল ফ্লিন প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তিনি সাক্ষ্য দিতে চাইছিলেন যে, রাশিয়ানদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে তাকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। এ খবরে চারদিক তোলপাড় হতে থাকে।
ঠিক তখনই ব্রায়ান রস’কে সাময়িক বরখাস্ত করে এবিসি নিউজ। সঙ্গে সঙ্গে তারা পাঠকের কাছে, জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। এক বিবৃতিতে তারা বলে যে, ততক্ষণে তারা অনলাইন ও অনএয়ারে থাকা ওই রিপোর্ট সংশোধন করেছে। উল্লেখ্য, শুক্রবার সকালে এবিসি নিউজের স্পেশাল রিপোর্টে ব্রায়ান রস মাত্র একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে ট্রাম্প সম্পর্কে ওই ‘বোমা’ ছোড়েন। কিন্তু ওইদিন রাতেই ওয়ার্ল্ড নিউজ টুনাইট অনুষ্ঠানে তিনিই তার রিপোর্টের ভুল স্বীকার করেন দর্শকদের সামনে। তিনি দর্শকদের বলেন, যে সূত্রকে উদ্ধৃত করে তিনি ওই রিপোর্ট দিয়েছিলেন তিনিই তাকে পরে বলেছেন, নির্বাচনের একজন প্রার্থী হিসেবে ট্রাম্প যখন ছিলেন তখন এমন নির্দেশনা দেন নি ফ্লিনকে। এমন নির্দেশনা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে তিনি মাইকেল ফ্লিনকে রাশিয়ানদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। ততক্ষণে এবিসি ওই রিপোর্ট টুইটে প্রকাশ করেছে এবং তা প্রায় ২৫০০০ বার রিটুইট করা হয়েছে। এরপরই এমন স্বীকারোক্তি দেন ব্রায়ান রস। ফলে টুইটার থেকে, অনলাইন থেকে ওই রিপোর্ট প্রত্যাহার করা হয। ততক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বাজারে বড় রকমের নাটকীয় প্রভাব পড়েছে। সূচক পড়ে গেছে সাড়ে তিন শ পয়েন্টের নিচে। তবে দিন শেষে তা আবার উন্নত হতে থাকে। এ বিষয়ে শুক্রবার বিকালে এবিসি নিউজের কাছে সিএনএন জানতে চায়, কেন অনলাইনে তাদের ওই রিপোর্ট নেই। এর কয়েক ঘন্টা পরে এ চ্যানেলের একজন মুখপাত্র বলেন, রিপোর্টটিতে সংশোধন চলছে। ওদিকে এবিসি নিউজ এ নিয়ে একটি বিবৃতি দেয়। তাতে বলে আমরা একটি ত্রুটিপূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশ করার জন্য গভীরভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। ওই রিপোর্টটি করেছিলেন আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি ব্রায়ান রস। তার ওই রিপোর্ট পূর্ণাঙ্গ যাচাই করা হয় নি, যেটা আমাদের সম্পাদকীয় নীতির অধীনে। আমরা যখন রিপোর্টটি ভুল বুঝতে পেরেছি তখন তা অনএয়ার ও অনলাইন থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছি। আমরা যে রিপোর্ট প্রকাশ করি তা যথাযথ হতে হয় এবং এর ওপর ভিত্তি করে আমরা জনআস্থা গড়ে তুলেছি। এটাই আমার মূল নীতি। কিন্তু ওই রিপোর্টটির ক্ষেত্রে এর অন্যথা হয়েছে। উল্লেখ্য, এবিসি নিউজের চিফ ইনভেস্টিগেটিভ করেসপন্ডেন্ট হলেন ব্রায়ান রস। তিনি এবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজ টুনাইট, নাইটলাইন, গুডমর্নিং আমেরিকা, ২০/২০, এবিসি রেডিওর জন্য রিপোর্ট করেন। তিনি এ চ্যানেলে যোগ দিয়েছেন ১৯৯৪ সালে। রিপোর্ট করেছেন সরকারি দুর্নীতি নিয়ে। তার ঝুলিতে যোগ হয়েছে কমপক্ষে ৪৩টি আন্তর্জাতিক পুরষ্কার। এর মধ্যে ১৯৭৪ সালে পেয়েছেন পিবডি এওয়ার্ড। সেই শুরু। তারপর থেকে একের পর এক পুরস্কার পেতে থাকেন তিনি। ২০০৫, ২০০৬ সালে পেয়েছেন এমি এওয়ার্ড।

No comments

Powered by Blogger.