উষ্ণ সম্পর্ক গড়তে রাশিয়ায় আবে

জাপানের সঙ্গে জলসীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ­াদিমির পুতিন। তবে এ সংক্রান্ত কোনো চুক্তি সম্পন্ন হয়নি বলে জানা গেছে। শুক্রবার রাশিয়া সফরে আসেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনে অংশ নিতে এ দুই নেতা এখন অবস্থান করছেন রাশিয়ার বন্দর নগরী ভ­াদিভোস্তকে। শুক্রবার থেকে দুই দিনব্যাপী ইস্টার্ন ইকনোমিক ফোরামের (ইইএফ) দ্বিতীয় এ সম্মেলন শুরু হয়। এএফপির খবরে বলা হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত (রাশিয়া) সৈন্যদের মাধ্যমে জাপানের কুড়িল দ্বীপ দখলে নেয়ার পর থেকে টোকিও ও মস্কোর মধ্যে সম্পর্কে ফাটল ধরে। তবে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করতে সম্প্রতি অর্থনৈতিক বন্ধন দৃঢ় করার ওপর জোর দিচ্ছে জাপান। কিন্তু কয়েক দশকের আঞ্চলিক বিবাদে এটি কোনো পরিবর্তন আনবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। জাপানের সঙ্গে যুদ্ধকালীন বিভক্তি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাধার উত্তেজনায় দু’দেশের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তিতেই সমাধান মিলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইইএফ সম্মেলনের ফাঁকে এই দুই নেতা পারস্পরিক জ্বালানি, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও সমুদ্রবিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য বৈঠকে মিলিত হন। এটিই আবের দ্বিতীয় রাশিয়া সফর।
এই সম্মেলনের ধারাবাহিকতায় পুতিন আগামী ডিসেম্বরে জাপান সফরে যাবেন বলে জানিয়েছেন এক রুশ কর্মকর্তা। জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শিনজো আবের ক্ষমতা গ্রহণের পর এটি হবে পুতিনের প্রথম জাপান সফর। এর আগে ব্লমবার্গ নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, কোনো কিছু বিনিময় বা কোনো কিছু বিক্রির জন্য আমরা এ আলোচনা করছি না। বরং আমরা আমাদের জাপানি বন্ধুদের সঙ্গে জলসীমানা বিরোধ মীমাংসার পন্থা খুঁজছি। এছাড়া তেলের বৈশ্বিক সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যাপারে পুতিন আরও বলেন, তেলের উৎপাদন মজুদ রাখার প্রসঙ্গে জাপানের সঙ্গে এক সমঝোতা চুক্তিতে পৌঁছাতে চায় রাশিয়া। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারের জন্য এটা একটি সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছি আমরা। চীনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য মোকাবেলা ও রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস পেতে জাপান পুতিন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধিতে আন্তরিক হয়েছে। এ লক্ষ্যেই শিনজো আবে তার সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী হিরোশিগে সেকোকে রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতাবিষয়ক দফতরের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার জাপান সরকারের প্রধান মুখপাত্র এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে ২০১৪ সালে পুতিনের জাপান সফরের পরিকল্পনা থাকলেও রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের কারণে তা পিছিয়ে যায়। পুতিন সরকারের ওই পদক্ষেপের পর মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে সমর্থন দিয়েছিল জাপান। জাপানের সাবেক এমপি মুনিও সুজুকি বলেন, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলোর বিষয়ে আঞ্চলিক সংকট সমাধানের লক্ষ্যে রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা যুক্তিসঙ্গত হতে পারে, কারণ মস্কোর জ্বালানি সম্পদের বিপরীতে জাপানের প্রযুক্তি দক্ষতা ও বিনিয়োগ যথাযথ হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী আবেকে পরামর্শ দিয়ে সুজুকি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন জাপানের প্রযুক্তির ব্যাপারে আগ্রহী। রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলোর উন্নয়নে জাপানের প্রযুক্তিগত সহায়তা চাওয়া হলে আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত। বর্তমানে জাপান মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল ও গ্যাস আমদানি করছে, যা ১০ হাজার কিলোমিটার দূরের পথ। কিন্তু রাশিয়ার ভ­াদিভোস্তক থেকে তা আনার ব্যবস্থা করলে রক্ষা হবে জাতীয় স্বার্থ। কারণ রাশিয়ার এই অঞ্চল আমাদের পাথর ছোড়া দূরত্বে।

No comments

Powered by Blogger.