একেই বলে দাঁও মারা

ঠান্ডা রক্তকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আনার যন্ত্র ‘ব্লাড ওয়ারমার’-এর বাজারমূল্য সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু এই যন্ত্র চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়েছে ৯ লাখ ৩২ হাজার টাকায়! কান পরীক্ষার জন্য অটোস্কোপ যন্ত্রের দাম ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে। অথচ প্রতিটি অটোস্কোপ যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকায়। একইভাবে আরও আটটি যন্ত্র কেনা হয়েছে বাজারমূল্যের চেয়ে অত্যন্ত অস্বাভাবিক মূল্যে। দাঁও মারা বোধ হয় একেই বলে। গত সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে জালিয়াতির এই চিত্র উঠে এসেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে হাসপাতালে এসব যন্ত্র কেনা হয়। হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনাকাটার ‘ইতিহাসে’ সম্ভবত এটি একটি মাত্রাছাড়া জালিয়াতি হিসেবেই ‘জায়গা’ পাবে।
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, গত এপ্রিল মাসে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি এসব জালিয়াতির খবর সংগ্রহ করতে পারলেও কারা এত বড় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তা বের করতে পারেনি। হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাংসদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ। তিনিও এ ব্যাপারে এখনো কিছু করতে পারেননি। যেকোনো হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনার জন্য রয়েছে ক্রয় আদেশ-সংক্রান্ত কমিটি। ২০১৪-১৫ বছরে এই কমিটির দায়িত্বে ছিলেন সিভিল সার্জন সরফরাজ খান। তিনি কোনো অনিয়ম করেননি বলে দাবি করেছেন। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, এসবের পেছনে কে বা কারা রয়েছে? ক্রয় আদেশ-সংক্রান্ত কমিটি, না যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে এসব যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে তারা, নাকি দুই পক্ষ মিলেমিশেই এই জালিয়াতি ও দুর্নীতি করেছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও সাজা নিশ্চিত করতে না পারলে এ ধরনের দাঁও মারা অব্যাহত থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.