আলোর পথযাত্রীকে অভিবাদন -জাতিসংঘের ম্যান্ডেলা দিবস

একটি মানুষ, কিন্তু অনেক নাম তাঁর। তাঁর দেশবাসী তাঁকে ভালোবেসে ডাকে ‘মাদিবা’। বিশ্ববাসী তাঁকে চেনে ম্যান্ডেলা বলে। নেলসন ম্যান্ডেলা, দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীনতার নেতা, অহিংসার দিশারী, শান্তি ও সম্প্রীতির শিক্ষক। বিশ্বের বিভিন্ন মত ও পথের মানুষের কাছে মাদিবার জীবনের একটাই অর্থ—স্বাধীনতা ও শান্তি। নেলসন ম্যান্ডেলার সংগ্রামী জীবনের প্রতি সম্মান জানাতে তাই তাঁর জন্মদিবস ১৮ জুলাইকে ‘ম্যান্ডেলা দিবস’ ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। আগামী ১৮ জুলাই তাঁর ৯১তম জন্মদিনে পালিত হবে প্রথম ‘ম্যান্ডেলা দিবস’।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কারসহ অজস্র আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন নেলসন ম্যান্ডেলা। এর পরও রয়ে গেছেন নিরহংকারী ও শিশুর মতো সরল। ১৯৯৭ সালে স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অতিথি হিসেবে তিনি ঢাকা সফর করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক অভিযানের সময় যে কজন বিশ্বনেতা এর সমালোচনা করেছিলেন, ম্যান্ডেলা ছিলেন তাঁদের সামনের সারিতে। ফিলিস্তিনসহ পৃথিবীর সব স্বাধীনতা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন তাঁর সমর্থন পেয়েছে। মরণব্যাধি এইডসের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি ও প্রতিকারে বৃদ্ধ বয়সেও তিনি কাজ করে চলেছেন। এসব কারণেই প্রতিবছর ম্যান্ডেলার জন্মদিন ১৮ জুলাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শান্তিকামী মানুষ উত্সাহের সঙ্গে উদ্যাপন করে। এরই ধারাবাহিকতায় দিনটিকে ‘ম্যান্ডেলা দিবস’ ঘোষণার প্রস্তাব তোলেন জাতিসংঘে দক্ষিণ আফ্রিকার স্থায়ী প্রতিনিধি। নেলসন ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশনসহ অনেক দাতব্য প্রতিষ্ঠান এ জন্য প্রচারও চালায়। এরই ফল বিশ্বসভার এই সিদ্ধান্ত।
ম্যান্ডেলা তাঁর জীবদ্দশাতেই অসম্ভব সব স্বপ্নকে সম্ভব করেছিলেন। আফ্রিকার বর্ণবৈষম্যের অবসান একসময় অসম্ভব মনে হয়েছিল। অনেকেই ভেবেছিল, বহিরাগত শ্বেতাঙ্গদের কখনো প্রতিবেশী তথা সহনাগরিক হিসেবে মানবে না দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গরা। কিন্তু তিনি দুটোকেই সম্ভব করেছেন তাঁর জীবদ্দশায়। জীবনের একটা সময় সশস্ত্র আন্দোলনের নেতা হয়েও পরিণত বয়সে গ্রহণ করেছেন অহিংসার আদর্শ। জাতিসংঘ বলেছে, ম্যান্ডেলার মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের আদর্শই প্রতিফলিত হয়েছে। ম্যান্ডেলা দিবস যেন সেই আদর্শগুলো বাস্তবায়নের দিকে এক ধাপ অগ্রগতি হয়ে দেখা দিল।
মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল আফ্রিকা থেকে। সেই আফ্রিকারই এক সন্তান হয়ে উঠলেন শান্তি ও সহাবস্থানের বৈশ্বিক অনুপ্রেরণা। তাঁকে অভিবাদন।

No comments

Powered by Blogger.