ভারতের ভেতর ‘আজাদি’ চাই

রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তিন সপ্তাহ কারাবাসের পর বৃহস্পতিবার থেকে বীরের বেশে নিজের প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরলেন কানাইয়া কুমার। বুধবার তাকে ছয় মাসের জমিন দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের এই সভাপতি এখন ভারতের জনগণের সত্যিকারের বীর। দিল্লির তিহার জেল থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুক্তি পাওয়ার পরই প্রিয় ক্যাম্পাসে প্রত্যাবর্তন করেন কানাইয়া। এদিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জ্বালাময়ী বক্তব্য দেন কানাইয়া, বক্তৃতায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজিপি) সরকার ও বিজেপির মাতৃসংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সমালোচনা করেন। এসময় বার বার ‘আজাদি’ বা মুক্তির কথা বলেছেন কানাইয়া। এই ‘আজাদি’ স্লোগানের জন্যই তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ঠোকে ভারতের বিজেপি-আরএসএস সরকার। কানাইয়া তার প্রত্যাবর্তন ভাষণে বলেন, আমি ভারত থেকে স্বাধীনতা (আজাদি) চাইছি না, চাইছি ভারতের ভেতর (আজাদি) স্বাধীনতা। তার এ বক্তব্যের সময় সমবেত ৩ হাজার শিক্ষার্থী হাততালি ও আজাদি স্লোগানে মুখর করে তোলে পুরো জেএনইউ ক্যাম্পাস। তিনি বলেন, ‘আজাদি পেটের ক্ষুধা থেকে, আজাদি দুর্নীতি থেকে, আজাদি মনুবাদ থেকে।’ কানাইয়া তার ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে বিদ্রুপ করে বলেন, উনি সংসদে স্তালিনের কথা বলেছেন, ক্রুশ্চেভের কথা বলেছেন। সে সময় আমার মনে হয়েছিল টিভি স্ক্রিনে ঢুকে ওর স্যুট ধরে জিজ্ঞাসা করি,
একটু হিটলারের কথা বললেন না তো?’ বক্তব্যে কানাইয়া অভিযোগ করে বলেন, কালো টাকা ফেরত আনা, ‘সাবকা সাথ সাবকা বিকাশ’ (সবার সঙ্গে সবার বিকাশ) স্লোগান রক্ষা করতে পারেননি মোদি। কথা বলেন মোদির রেডিও অনুষ্ঠান ‘মান কি বাত’ (মনের কথা) এবং টুইট ‘সত্যমেভ জয়তী’ (সত্যের জয় হবে) নিয়ে। তার দীর্ঘ বক্তব্যের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি তুলে ধরেছে হিন্দুস্তান টাইমস। এর আগে, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে (জেএনইউ) কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী আফজাল গুরুর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে (৯ ফেব্রুয়ারি) ‘দ্য কাট্রি উইথদাউট ?এ পোস্টঅফিস’ শিরোনামে একটি কবিতা পাঠের আসরের আয়োজন করে কয়েকজন শিক্ষার্থী। অনুষ্ঠানে ভারতবিরোধী স্লোগান দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নেতা কানাইয়া, উমর খালেদ, অনির্বানসহ ৬ ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। গ্রেফতার হন কানাইয়া। কানাইয়া কুমারের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ভারতের গত ২৫ বছরের মধ্যে নজিরবিহীন ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানুষের মুক্তি- এসব ইস্যুতে এ আন্দোলনে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, লেখক-সংস্কৃতিকর্মীরা যুক্ত হয়েছেন। ভারতের বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ আন্দোলনের সমর্থনে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। নোয়াম চমস্কি, ওরহাম পামুকসহ বিশ্বের বেশ কয়েকজন লেখক-বুদ্ধিজীবী এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। সমর্থন জানিয়েছেন জেএনইউ-এর ছাত্রআন্দোলনকে। জেএনইউ ছাত্রনেতার বক্তব্য
১. আমরা ভারতের (ভারত রাষ্ট্রের) কাছ থেকে আজাদি (স্বাধীনতা) চাই না, ভারতে স্বাধীনতা চাই।
২. আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অনেক জায়গায় পার্থক্য আছে। তবে আমি তার টুইট সত্যমেভ জয়তীর সঙ্গে একমত। এই শব্দগুলো আমাদের সংবিধানে আছে।
৩. তারা (সরকার) কালো টাকা ফেরত আনা, কালো টাকা কমানো এবং সাব কা সাথ সাবকা বিকাশের অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তারা চায়, এসব অঙ্গীকারের কথা আমরা ভুলে যাই। আমরা জনগণকে এসব কথা ভুলতে দেব না।
৪. যত বেশি দমন করবে, তত বেশি রুখে দাঁড়াব। এটা দীর্ঘ লড়াই। মাথানত না করে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। আমরা আরএসএস ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ব। আমরা ইতিহাস গড়েছি, ইতিহাস গড়ব। আমরা লড়াই করব। আমরা জিতব।
৫. মোদিজি কেবল বলেছেন মান কি বাত (মনের কথা), কিন্তু তিনি তা শোনেন না।
৬. আপনি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে সাইবার সেল উল্টাপাল্টা ভিডিও বানিয়ে শায়েস্তা করবে আর হোস্টেলের কক্ষে কনডম গুঁজে দেবে।
৭. সীমান্তে যেসব সৈনিক মরছে, তাদের আমি স্যালুট জানাই। কিন্তু চরম দারিদ্র্যে নিপতিত হয়ে যেসব কৃষক আত্মহত্যা করছে, তাদের ব্যাপারে কী হবে? ওই কৃষকরাই বেশিরভাগ সেনার বাবা। আমার বাবা একজন কৃষক, ভাই সৈনিক।
৮. আমি যে গ্রাম থেকে এসেছি, সেখানে একটি জাদু দেখানো হয়। লোকজন জাদু দেখিয়ে আংটি বিক্রি করে। বলে, সে আংটি সব ইচ্ছা পূরণ করবে ... আমাদের দেশে এমন কিছু লোক আছে, যারা বলেন, কালো টাকা ফেরত আনা হবে, সবার বিকাশ হবে।

No comments

Powered by Blogger.