৬০ ঘণ্টায় পূর্ব ইউরোপ দখলে নিতে পারে মস্কো

ভ্লাদিমির পুতিন
রাশিয়ার সামরিক বাহিনী তিন দিনের কম সময়ের মধ্যেই পূর্ব ইউরোপের রাজধানীগুলো দখল করে নিতে সক্ষম। কারণ, মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর ওই অঞ্চলে তাদের মিত্রদের সুরক্ষা দেওয়ার মতো বাহিনী নেই। নতুন এক গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে। খবর দ্য ইনডিপেনডেন্টের।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান র্যা ন্ড করপোরেশনের সামরিক গবেষণা শাখা এ গবেষণা চালিয়েছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউরোপের বাল্টিক রাষ্ট্র এস্তোনিয়ার রাজধানী তাল্লিন ও লাটভিয়ার রাজধানী রিগা দখল করতে রুশ বাহিনীর সময় লাগবে মাত্র ৩৬ থেকে ৬০ ঘণ্টা। এতেই প্রতীয়মান হয়, এ অঞ্চলে ন্যাটোর প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কতটা অকার্যকর।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের সম্পর্ক ক্রমেই তলানীর দিকে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রতিবেদন এল। চলতি সপ্তাহে খবর বেরোয়, ইউরোপের আরেক দেশ সুইডেন এমন একটি দ্বীপকে পুনরায় সামরিকীকরণ করেছে, যেটি স্নায়ুযুদ্ধের সময় ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্রমবর্ধমান রুশ হুমকি মোকাবিলা করতেই গোটল্যান্ড নামের ওই দ্বীপকে পুনরায় সামরিকীকরণের পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছে সুইডেন।
র্যান্ড করপোরেশনের ওই গবেষণা বলছে, রাশিয়া দ্বিমুখী আক্রমণ করতে পারে। প্রথমে তারা ভারী অস্ত্রসজ্জিত কয়েকটি ব্যাটালিয়ন পাঠিয়ে রাজধানী রিগার দিকে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করতে পারে। এই ব্যাটালিয়নগুলোই পুরো পথে লাটভিয়া ও ন্যাটোর বাহিনীগুলোর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হবে। এরপর লাটভিয়ার দখল নিতে পারলেই রাশিয়ার ২৭ ব্যাটালিয়নের অন্যগুলো এস্তোনিয়ায় প্রবেশ করবে। প্রথমে তারা দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জাতিগত রুশ-অধ্যুষিত এলাকাগুলো করায়ত্ত করবে। এরপর রুশ বাহিনী এগোবে রাজধানী তাল্লিনের দিকে।
১৬ পৃষ্ঠার ওই গবেষণা চালানো হয়েছে ২০১৪ ও ২০১৫ সালের মধ্যে। এতে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, ন্যাটো ও বাল্টিক বাহিনীর সম্মিলিত শক্তিও রাশিয়ার অগ্রসর ঠেকাতে পারবে না; এমনকি মার্কিন বিমান শক্তির সহায়তাও এ ক্ষেত্রে খুব কমই কাজে দেবে। কারণ, সক্ষমতা বিবেচনায় রাশিয়ার ব্যাটালিয়নগুলোর সঙ্গে এ অঞ্চলে মোতায়েনকৃত ন্যাটোর স্থলবাহিনীর তুলনাই করা চলে না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ব ইউরোপে মোতায়েনকৃত ন্যাটোর ১২ ব্যাটালিয়নে কোনো যুদ্ধট্যাংক নেই। এর মধ্যে কেবল একটি ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ব্যাটালিয়ন রয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়ার ২৭ ব্যাটালিয়নের সব কটিতেই ভারী যুদ্ধাস্ত্রে সজ্জিত ট্যাংক রয়েছে। সুতরাং, বাস্তব অবস্থা একেবারে পরিষ্কার। বর্তমান পরিস্থিতিতে ন্যাটো তার সবচেয়ে অরক্ষিত সদস্যদের ভূখণ্ড রক্ষা করতে সফল হবে না।
র্যা ন্ড করপোরেশনের ওই গবেষণা বলছে, এমন দৃশ্যপটে তখন ন্যাটোর সামনে মাত্র দুটি বিকল্প অবশিষ্ট থাকবে। এক. পরাজয় মেনে নিতে হবে। তার পরিণতি হবে বাল্টিক অঞ্চলের জনগণের পাশাপাশি ন্যাটো জোটের জন্য বিপর্যয়কর। দুই. পাল্টা আক্রমণ চালাতে হবে, যা হবে খুবই ব্যয়বহুল। আবার সেটা পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।
রুশ এই হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এই অঞ্চলে বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওই গবেষণা প্রতিবেদনে। গবেষণা মোতাবেক, ন্যাটোকে এ অঞ্চলে আর্টিলারি ও বিমান শক্তির সমর্থনপুষ্ট অন্তত সাতটি ব্রিগেড মোতায়েন করতে হবে। এর মধ্যে তিনটি ব্রিগেড হবে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত। রুশ হুমকি মোকাবিলার জন্য এটাই যথেষ্ট। এর এ জন্য খরচ হবে বছরে ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

No comments

Powered by Blogger.