অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পাল্টানোর আহ্বান ড. ইউনূসের

রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে দ্য ডেইলি
স্টারের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার আয়োজিত
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সাজিদ হোসেন
পৃথিবীর বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আমূল পাল্টে ফেলার আহ্বান জানালেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, কিছু লোকের হাতেই সব সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে যাওয়া আজকের অর্থনীতির মূল সংকট। শুক্রবার রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে দ্য ডেইলি স্টারের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস এসব কথা বলেন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বাংলাদেশ নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও জাতীয় সংগীতের পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। নানা শ্রেণি পেশার মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি মিলনমেলায় পরিণত হয়।
ড. ইউনূস বলেন, ২০১৫ সালে পৃথিবীর মোট সম্পদের ৮৫ ভাগ ছিল ৮০ জন ধনী লোকের হাতে। অক্সফামের এক পূর্বাভাসে দেখা গেছে-২০১৬ পৃথিবীর ৯৯ ভাগ সম্পদ চলে যাবে এক ভাগ লোকের কাছে। আর বাকি এক ভাগ সম্পদ থাকবে ৯৯ ভাগ লোকের জন্য। সম্পদের এই বৈষম্য এবং কিছু লোকের হাতেই সব সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে যাওয়া আজকের অর্থনীতির মূল সংকট।
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূস বলেন, সারা বিশ্বেই একই পরিস্থিতি। ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, গরিবেরা হচ্ছে আরও গরিব। কিছু দেশের মানুষের কাছে সম্পদ আছে। আবার কারও কাছে নেই। জাতিতে জাতিতে সম্পদের এই বৈষম্য বিশ্বের শান্তির জন্যও হুমকি। দেশে দেশে সম্পদের এই বৈষম্য যত বাড়বে, সংঘর্ষও তত বাড়বে। সম্পদের এই বৈষম্য থামাতেই হবে। এটা সম্ভব। মানুষই সেটা পারবে।
বক্তৃতায় ড. ইউনূস তাঁর বর্তমান সামাজিক ব্যবসার কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সামাজিক ব্যবসা সম্পদের বৈষম্য কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
ইউনূস বলেন, ‘২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু সম্মেলন দেখে আমি অনেক আশাবাদী। রাষ্ট্রগুলো এই চুক্তিতে পৌঁছাতে বাধ্য হয়েছে মানুষের চাপে। আমি মনে করি, মানুষ চাইলেই সম্পদের এই বৈষম্য থামানো সম্ভব। আমরা বাংলাদেশ থেকে সেটা শুরু করতে পারি।’
সম্পদের বৈষম্য দূর করার দুটি উপায় উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, একটি হলো-অর্থনীতি ব্যবস্থা বদলাতে হবে। আরেকটি হলো শিক্ষা ব্যবস্থা বদলাতে হবে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এমন হতে হবে যেন, সেটা গরিবের জন্য কাজ করে। দরকার হলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে ব্যাংকিং করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের পর গ্রামীণ ব্যাংক গঠনের কথা স্মরণ করে ড. ইউনূস বলেন, ওই সময় কোনো ব্যাংক গরিবদের টাকা দিতে চাচ্ছিল না। যার কাছে গেছে সেই গরিবদের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। গ্রামীণ ব্যাংক সেটা সম্ভব করেছে। তিনি বলেন, ‘বৈষম্য কমাতে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর জোর দিতে হবে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের যে শিক্ষা ব্যবস্থা হচ্ছে সেটা মানুষকে চাকরির দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু আমাদের উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ডেইলি স্টার ২৫ বছর ধরে ভীতি এবং পক্ষপাতিত্ব ছাড়া সাংবাদিকতা করে আসছে। আজকের এই ডেইলি স্টারের সাফল্যের পেছনে পরিচালনা পর্ষদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের হাতে ডেইলি স্টারের কর্মীদের পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।
বক্তব্য দিতে এসে ডেইলি স্টারের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান রোকেয়া আফজাল রহমান বলেন, ডেইলি স্টারের সাংবাদিক এবং কর্মীরা সততা ও বস্তুনিষ্ঠভাবে কাজ করে আসছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। অভিবাসী শ্রমিক, কৃষক, নারী এবং তরুণ প্রজন্ম দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ডেইলি স্টারের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল ছাড়াও রাজনীতিবিদ, বিভিন্ন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, শিল্পী, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেণিপেশার চার সহস্রাধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন। সবার অংশগ্রহণে পুরো অনুষ্ঠানটি মিলনমেলায় পরিণত হয়।

No comments

Powered by Blogger.