জাসদের নির্দেশ ছিল সৈনিক সংস্থা সরাসরি জিয়াকে এলিফ্যান্ট রোডে নিয়ে আসবে

জাসদ সৈনিক সংস্থার মাধ্যমে উত্তেজনার বীজ ছড়িয়ে দিয়ে তাদের পরিকল্পনার প্রাথমিক ধাপ অতিক্রম করেছিল কিন্তু ঐ চাকরিরত অফিসার নেতৃত্বের ঘাটতির কারণে বাইরে রাজনৈতিক সফলতা যদি অর্জনও করত তাহলে ওই সফলতা ধরে রাখতে পারত না। সময়ে মোশতাকের অবস্থা হতো। সেনানিবাসে জিয়াভক্ত ও অন্যান্য গ্রুপগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে এবং জিয়ার পরামর্শ অনুযায়ী নিজ নিজ ইউনিট অফিসারদেরকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাতে থাকে। জিয়াকে যে গৃহবন্দি থেকে দ্বিতীয় ফিল্ড রেজিমেন্টে আনা হয়েছিল, সেখানে যদিও সৈনিক সংস্থার সদস্যদের ভূমিকা ছিল কিন্তু জিয়াভক্ত ও অন্যান্য সাধারণ সৈনিক ছিল প্রচুর। দ্বিতীয় ফিল্ড রেজিমেন্ট ছিল কর্নেল রশিদের ইউনিট। তিনি ছিলেন মোশতাকের অন্যতম সহযোগী। সেই ইউনিটে সৈনিকরা নিয়ে আসল জিয়াকে। বস্তুত তখন থেকে সৈনিক সংস্থার নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পেতে থাকে। সেই ইউনিটেই সমবেত হতে থাকলেন সকল সিনিয়র অফিসারেরা।
জাফর ইমাম বীর বিক্রম ‘দাম দিয়ে কিনেছি এই বাংলা’ শীর্ষক বইয়ে এসব কথা লিখেছেন। তিনি আরও লিখেছেন, দ্বিতীয় ফিল্ডে যখন জিয়ার সাথে জাসদ নেতৃবৃন্দ দেখা করতে গেলেন ও পরের দিন রেসকোর্স এর সমাবেশে ভাষণের প্রস্তাবসহ অনেক রাজনৈতিক প্রস্তাব দিলেন, তখন কিন্তু সৈনিক সংস্থা ও জাসদের পাল্টা কিছু করার ক্ষমতা ছিল না। জিয়া বুঝলেন সম্পূর্ণ ব্যাপারটা একটা হঠকারিতা। জিয়া তখন সাধারণ সৈনিক অফিসার নিয়ে খুব শক্তিশালী অবস্থানে ছিলেন। তাই জিয়া জাসদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
গৃহবন্দি থেকে সৈনিকেরা জিয়াকে দ্বিতীয় ফিল্ড রেজিমেন্টে নিয়ে গেল। জাসদের নির্দেশ ছিল সৈনিক সংস্থা জিয়াকে সরাসরি এলিফ্যান্ট রোডে নিয়ে আসবে। জিয়ার সাথে ৭ই নভেম্বরের আগে জাসদের কোনো রাষ্ট্রক্ষমতা দখল বা অন্য কোন আঁতাত ছিল না এবং সেই মুহূর্তে জাসদ যেহেতু রাজনৈতিকভাবে একেবারে ব্যর্থ হয়েছে জিয়া বুঝলেন তিনি কেন তাদের হাতে সব তুলে দিবেন। জাসদকে সমর্থন দিলে টিকে থাকা হবে ক্ষণস্থায়ী, এমনকি তার নিজ জীবনের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি এটাও বুঝলেন যে জাসদ সৈনিক সংস্থা আর কোন ফ্যাক্টর নয়।

No comments

Powered by Blogger.